সড়ক দুর্ঘটনা না হত্যাকাণ্ড?

ফজলুর রহমান
ফজলুর রহমান

বিচার কি হবে? স্বজনেরা কি দেখবেন ঘাতকের চেহারা? তারা কি জানতে পারবে কেন তিনটি পরিবারকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে? স্বজনেরা মনে করেন, পরিকল্পিতভাবে ঠান্ডা মাথায় গত ৮ আগস্ট সিলেটের হেতিমগঞ্জের সাবেক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ফজলুর রহমানকে হত্যা করা হয়েছে। দৃশ্যত দুর্ঘটনা হলেও মাতাল ট্রাক চালক সিএনজি অটোরিকশাটি পাঁচ শত গজ দূরে টেনে নিয়ে গেছে মৃত্যু নিশ্চিত করতে। পাশের লোকজন ভয়াবহ এ চিত্র দেখে অবরোধ সৃষ্টি করে ট্রাক থামাতে বাধ্য করে। কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। ঘটনাস্থলেই নিহত হন অটোরিকশা চালক সুরুজ ও তাঁর ভাই মরতুজ। পেছনের সিটে বসা গোলাপগঞ্জ সদরের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ফজলুলর রহমান হন গুরুতর আহত । দু’দিন হাসপাতালে থাকার পর তিনিও মারা যান।
ফজলুর রহমান জীবনকে, সমাজকে ভালোবেসেছিলেন। রাজপথ-জনপদ ছিল এ মানুষটির ঠিকানা। সেই রাজপথেই ট্রাকচাপা পড়ে প্রাণ হারাতে হয় তাঁকে। ঘটনাস্থলে মারা যান কর্মজীবী সুরুজ ও তাঁর ভাই মরতুজ। তাঁদের অবুঝ বাচ্চাদের কান্নাকাটিতে আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। উপস্থিত জনতা কান্নায় ভেঙে পড়েন। ক্ষুব্ধ জনতার মিছিল থেকে বেপরোয়া ট্রাকের চালককে পাকড়াও করা হয়। এ পর্যায়ে পুলিশের হস্তক্ষেপ ঘটে। চালককে পুলিশ তাদের হেফাজতে নিয়ে যায়। তিনটি অপমৃত্যুর ঘটনায় সামান্যতম টনক নড়েনি তাদের। মামলা দায়ের করে পুলিশ তার দায়িত্ব পালন করেছে মাত্র।
আলোচনা ডালপালা ছড়ায়। নানাভাবে ঘটনার ব্যাখ্যা আসতে থাকে হতবিহ্বল পরিবারের কাছে। গোলাপগঞ্জ পৌরসভার নির্বাচনে সাবেক চেয়ারম্যান ফজলুর রহমানও তাঁর প্রার্থিতা ঘোষণা করেছিলেন। এলাকায় জনসভা শুরু করেন। সমাজের দুঃখী মানুষের পাশে দাঁড়াতেন তিনি। অন্যায়ের সঙ্গে আপসহীন ছিলেন। জীবনে অনেক মিথ্যা মামলা মোকাবিলা করেছেন, জয়ী হয়েছেন। এলাকার দর্পণ হিসেবে, অভিভাবক হিসেবে বিবেচিত ছিলেন। চোর-ডাকাত, সন্ত্রাসীরা তাঁকে ভয় করত, সমীহ করত। অনেক অন্যায়কারী ছিল ক্ষুব্ধ। গত কয়েক বছর অনাকাঙ্ক্ষিত সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করেছেন। সেগুলো থেকে রেহাই পেলেও, এবার পরিকল্পিতভাবে তাঁকে হত্যা করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ট্রাক চালককে দিয়ে কতিপয় সন্ত্রাসীই তাঁকে হত্যা করেছে—এমন সন্দেহ এখন প্রবল হয়ে উঠেছে।