প্রেসিডেন্ট বনাম পর্নো তারকা

স্টর্মি ড্যানিয়েলস  ও  ডোনাল্ড ট্রাম্প । ছবিটি বিবিসির সৌজন্যে
স্টর্মি ড্যানিয়েলস ও ডোনাল্ড ট্রাম্প । ছবিটি বিবিসির সৌজন্যে

যুক্তরাষ্ট্রের একটি ফেডারেল আদালত সোমবার পর্নো তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলসের বিরুদ্ধে রায় দিয়েছেন। এতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই পর্নো তারকাকে এক মুষ্টাঘাতে কুপোকাত করেছেন—এ কথা ভেবে দারুণ পুলকিত বোধ করেছেন। মঙ্গলবার সকালে চটজলদি খান দু-এক টুইটও ঝেড়ে বসেছেন।

কিন্তু চোখের পলক পড়তে না পড়তেই পাল্টা মুষ্টাঘাত এল স্টর্মি ও তাঁর আইনজীবী মাইকেল আভেনাতির কাছ থেকে। এখন দেখার বিষয় শেষ হাসিটি কে হাসেন—আমেরিকার ক্ষমতাধর প্রেসিডেন্ট, না এই পর্নো তারকা স্টর্মি?

প্রায় এক যুগ আগে ট্রাম্প ও স্টর্মি, যার আসল নাম স্টেফানি ক্লিফোর্ড গোপন প্রণয় সম্পর্কে জড়িত ছিলেন। পরে সে বিষয়ে মুখ না খুলতে ট্রাম্প স্টর্মিকে ১ লাখ ৩০ হাজার ডলার ধরিয়ে দিয়েছিলেন। এমনকি একজন গুন্ডা প্রকৃতির লোককে পাঠিয়ে ট্রাম্প নাকি এ বিষয়ে কথা না বলতে স্টর্মিকে হুমকিও দিয়েছিলেন।

স্টর্মির দাবি, গুন্ডাটি হুমকি দিয়েছিল—মুখ খুললে শুধু তিনি নন, তাঁর শিশুকন্যাটিরও বিপদ হতে পারে। নিজের অভিযোগের গুরুত্ব বোঝাতে স্টর্মি একজন ফরেনসিক বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিয়ে একটি স্কেচও তথ্য মাধ্যমের কাছে পৌঁছে দেন। সে ছবি দেখে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এক টুইটে ঠাট্টা করে বলেছিলেন, এটা একদম ডাহা মিথ্যা কথা। এই স্কেচের মতো কোনো মানুষ নেই যে স্টর্মিকে হুমকি দিয়েছিল। কয়েক মাস আগে ট্রাম্পের সেই টুইট উল্লেখ করে স্টর্মি আদালতে তাঁর বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করেন।

সোমবার ফেডারেল আদালতের বিচারক জেমস অটেরো স্টর্মির আনা সেই মামলা খারিজ করে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ট্রাম্পের টুইটটি ছিল রেটরিক্যাল বা বাগাড়ম্বরপূর্ণ। এমন কথা বলার অধিকার মার্কিন শাসনতন্ত্রে স্বীকৃত আছে।

বিচারকের রায় ট্রাম্পকে স্বাভাবিকভাবেই উল্লসিত করেছে। মঙ্গলবার সকালে তিনি এক টুইটে স্টর্মিকে ‘ঘোড়ামুখো’ নামে অভিহিত করে বললেন, ‘বেশ হয়েছে, এখন আমি তাঁর ও তাঁর তৃতীয় শ্রেণির আইনজীবীর বিরুদ্ধে টেক্সাসের আদালতের শরণাপন্ন হতে পারি, যাতে আমার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই, এ কথা সে স্বীকার করে নেয়।’

২০১৬ সালের নির্বাচনের আগে নিজের আইনজীবী মাইকেল কোহেনের মাধ্যমে স্টর্মিকে মোটা অঙ্কের অর্থ ধরিয়ে দেওয়ার সময় এই মর্মে এক স্বীকারোক্তি আদায় করিয়ে নিয়েছিলেন যে ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর কোনো অবৈধ সম্পর্ক নেই।

ট্রাম্পের সে টুইট মাটিতে পড়ার আগেই ফিরতি টুইট এল স্টর্মির কাছ থেকে। ‘ঘোড়ামুখো’র নামের জবাবে তিনি ট্রাম্পকে ‘টাইনি’, অর্থাৎ অতি ক্ষুদ্র-নামে সম্বোধন করে বললেন, ভদ্রমহিলা ও ভদ্রমহোদয়গণ, এই হচ্ছে আপনাদের প্রেসিডেন্ট। (শারীরিক) অভাব ছাড়াও তাঁর কথা থেকে আবারও প্রমাণ হলো তিনি কতটা অপদার্থ, নারীদের প্রতি ঘৃণা এবং টুইটারে নিজেকে সামলে রাখার অক্ষমতা তাঁর কী বিপুল। ট্রাম্পের সঙ্গে মল্লযুদ্ধের পরবর্তী অধ্যায়ের আহ্বান জানিয়ে স্টর্মি লিখলেন, ‘টাইনি, তাহলে চলুক লড়াই!’

২০১৬ সালের নির্বাচনী প্রচারণার সময় রিপাবলিকান সিনেটর মার্কো রুবিও ট্রাম্পের হাতকে ‘অতি ক্ষুদ্র’ বলে পরিহাস করেছিলেন। স্টর্মি একই কথা ব্যবহার করেছেন, তবে তিনি হাত নয়, ট্রাম্পের অন্য কোনো অঙ্গের প্রতি ইঙ্গিত করেছেন, এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা একমত। গত মাসে প্রকাশিত ‘ফুল ডিসক্লোজার’ গ্রন্থে স্টর্মি ২০০৬ সালে ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর শারীরিক সম্পর্কের বিস্তারিত ও সরস বর্ণনা দিয়ে লিখেছিলেন, ‘ওহ, এমন বাজে অভিজ্ঞতা আমার আগে হয়নি।’

স্টর্মির টুইটের পরপর তাঁর আইনজীবী মাইকেল আভেনাতির পাঠালেন আরেক টুইট। তাতে স্পষ্ট হলো একজন পর্নো তারকার সঙ্গে এই ধরনের বাচিক মল্লযুদ্ধে জড়িয়ে পড়া কতটা ঝুঁকিপূর্ণ। আভেনাতি লিখলেন, তাঁর টুইট থেকে স্পষ্ট ট্রাম্প শুধু নারীবিদ্বেষীই নন, তিনি আমেরিকার জন্য রীতিমতো বিব্রতকর। ‘আপনার কাছে যা আছে, সব নিয়ে আসুন। আমরা পৃথিবীর কাছে এ কথা প্রমাণ করে দেব আপনি কত বড় মতলববাজ ও মিথ্যুক। এবার বলুন তো, (স্টর্মি ছাড়া) নিজের পুত্রসন্তানের জন্মের সময় আপনি আরও কত নারীর সঙ্গে ফষ্টিনষ্টি করেছেন?’

উল্লেখযোগ্য, স্টর্মির অভিযোগ অনুযায়ী, ২০০৬ সালে যখন ট্রাম্পের তৃতীয় স্ত্রী মেলানিয়া সদ্য পুত্রসন্তানের জন্ম দিয়েছেন, সে সময় তাঁদের দুজনের শারীরিক সম্পর্ক ঘটে।

স্টর্মির সঙ্গে আইনি লড়াইয়ে ট্রাম্প আপাতত জিতলেও এটিই শেষ লড়াই নয়। গত নির্বাচনের আগে মুখ না খোলার শর্তে স্টর্মি যে অপ্রকাশ চুক্তি স্বাক্ষর করেন, তা অবৈধ ঘোষণার দাবি জানিয়ে তিনি ক্যালিফোর্নিয়ার একটি আদালতে আরেক মামলা ঠুকেছেন। সে মামলা এখনো আদালতের বিবেচনাধীন।