ধামাচাপা দিচ্ছি না: ট্রাম্প

জামাল খাসোগির হত্যা ধামাচাপা দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র—এমন দাবি অস্বীকার করেছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স
জামাল খাসোগির হত্যা ধামাচাপা দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র—এমন দাবি অস্বীকার করেছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স

সৌদি সাংবাদিক জামাল খাসোগির হত্যা ধামাচাপা দিতে সৌদি আরবকে সাহায্য করছে যুক্তরাষ্ট্র—এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেছেন, খাসোগির ভাগ্যে কী ঘটেছে, দ্রুত সেই রহস্য উন্মোচিত হোক—এমনটাই চান তিনি।

তুরস্কের সরকার-সমর্থিত দৈনিক ‘ইয়েনি সাফাকে’ গতকাল বুধবার প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়, হত্যার আগে ভয়াবহ নির্যাতন করা হয়েছিল খাসোগিকে। জিজ্ঞাসাবাদের সময় তাঁর আঙুল কেটে ফেলা হয়। ‘ওয়াশিংটন পোস্ট’-এর খবরে বলা হয়েছে, খাসোগিকে কেটে টুকরো টুকরো করা হয়। এসব সংবাদের পরিপ্রেক্ষিতে এই ঘটনার রহস্য উন্মোচনে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠলে এমন মন্তব্য করেন ট্রাম্প।

হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকেরা ট্রাম্পের কাছে জানতে চান, এই ঘটনা ধামাচাপা দিতে সৌদি আরবকে যুক্তরাষ্ট্র সাহায্য করছে—এই অভিযোগ সত্যি কি না? জবাবে ট্রাম্প বলেন, ‘কোনোভাবেই না। কী ঘটছে, তা আমিও জানতে চাই। আমি কোনো ধামাচাপা দিচ্ছি না।’

ট্রাম্প বলেন, ‘সৌদি ও তুর্কি নেতাদের সঙ্গে মার্কিন কূটনীতিকদের বৈঠক চলছে। ওই বৈঠকের পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও “পূর্ণ প্রতিবেদন” আমাকে দেবেন। ফলে প্রকৃতপক্ষে কী ঘটেছিল তা মূল্যায়ন করা যাবে। এই সপ্তাহের শেষে আমরা এ বিষয়ে সম্ভবত জেনে যাব।’

২ অক্টোবর তুরস্কের ইস্তাম্বুলে বিয়ের কাগজপত্র নিতে সৌদি কনস্যুলেটে যাওয়ার পর থেকে নিখোঁজ হন ৫৯ বছর বয়সী খাসোগি। তিনি সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের বিভিন্ন নীতির সমালোচক ছিলেন। গ্রেপ্তার হওয়ার ভয়ে গত বছর থেকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে স্বেচ্ছানির্বাসনে ছিলেন। এরপরই ‘ওয়াশিংটন পোস্ট’-এ প্রতি মাসে কলাম লিখতেন। কলামে তিনি সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান সম্পর্কে নানা সমালোচনামূলক লেখা লিখেছেন। নিজের কলামেই তিনি লেখেন, সালমান বাদশাহ হলে খাসোগি ভিন্নমত পোষণের কারণে গ্রেপ্তার হওয়ার আতঙ্কে রয়েছেন।

২ অক্টোবর তুরস্কের ইস্তাম্বুলে বিয়ের কাগজপত্র নিতে গিয়ে সৌদি কনস্যুলেটে যাওয়ার পর থেকে নিখোঁজ ৫৯ বছর বয়সী খাসোগি। ছবি: রয়টার্স
২ অক্টোবর তুরস্কের ইস্তাম্বুলে বিয়ের কাগজপত্র নিতে গিয়ে সৌদি কনস্যুলেটে যাওয়ার পর থেকে নিখোঁজ ৫৯ বছর বয়সী খাসোগি। ছবি: রয়টার্স

নিখোঁজ হওয়ার পর খাসোগির পরিবার ও বন্ধুবান্ধব এবং তুরস্ক কর্তৃপক্ষের দাবি, তিনি কনস্যুলেট থেকে আর বের হননি। তবে সৌদির কর্মকর্তারা খাসোগির নিখোঁজ ও তাঁর হত্যার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। গতকাল তুরস্কের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়, সৌদির সাংবাদিক জামাল খাসোগিকে কনস্যুলেট ভবনের ভেতরে টুকরো করে সাত মিনিটেই হত্যা করা হয়েছিল। হত্যার আগে নির্যাতনও করা হয়েছে।

খাসোগির ঘটনা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও তাঁর প্রশাসনের জন্য অত্যন্ত বিব্রতকর অবস্থার জন্ম দিয়েছে। সৌদি রাজতন্ত্র, বিশেষ করে এর রাজপুত্র প্রিন্স সালমানের সঙ্গে ট্রাম্প ও তাঁর প্রশাসনের রয়েছে গভীর সম্পর্ক। গত সপ্তাহেই ট্রাম্প এক বক্তব্যে বলেন, মার্কিন সমর্থন ছাড়া সৌদি দুই সপ্তাহও টিকে থাকতে পারবে না। গত বুধবার ফক্স বিজনেসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, সন্ত্রাস মোকাবিলায় সৌদি আরবকে ভরসা করে যুক্তরাষ্ট্র। তা সত্ত্বেও ট্রাম্প নিজে এখন পর্যন্ত খাসোগির সন্ধান দিতে সৌদি বাদশাহর ওপর কোনো প্রত্যক্ষ চাপ প্রয়োগে সম্মত হননি; বরং তিনি বলেছেন, হত্যাকারীরা ‘দুর্বৃত্ত’ হতে পারে।