অভিবাসন-বিষয়ক কিছু হালনাগাদ তথ্য

কঠোর অভিবাসন নীতির ধারাবাহিকতাতেই বিভিন্ন নিয়ম হালনাগাদ করা হয়েছে
কঠোর অভিবাসন নীতির ধারাবাহিকতাতেই বিভিন্ন নিয়ম হালনাগাদ করা হয়েছে

আমেরিকার অভিবাসন নীতিতে কিছু পরিবর্তন হয়েছে। এটা পুরোনো কথা। এই নীতির পথ ধরেই কিছু বিষয়ে পরিবর্তন আনা হয়েছে। সম্প্রতি আনা কিছু প্রক্রিয়াগত পরিবর্তন নিয়ে আজকের আলোচনা—
১. মেডিকেল রেকর্ড সংক্রান্ত পলিসি ম্যানুয়াল:
রিপোর্ট ফর মেডিকেল এক্সামিনেশন অ্যান্ড ভ্যাক্সিনেশন রেকর্ড (ফর্ম আই-৬৯৩)-সংক্রান্ত কিছু পরিবর্তন হয়েছে। ১৬ অক্টোবর ফর্ম আই-৬৯৩-এর মেয়াদ বিষয়ে একটি নীতিগত দিকনির্দেশনা হালনাগাদ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে কাস্টমস ও অভিবাসন সেবা সংস্থা (ইউএসসিআইএস)। নিজেদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এ-সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তিতে ইউএসসিআইএস জানিয়েছে আই আপডেটেড পলিসি আগামী ১ নভেম্বর থেকে কার্যকর হওয়ার কথা জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, এই ফর্মে চিকিৎসকের সইয়ের তারিখ জমা দেওয়ার তারিখের ৬০ দিনের বেশি হতে পারবে না। জমা দেওয়ার দুই বছর পর এই ফর্ম মেয়াদোত্তীর্ণ হবে। ফর্মটি সাধারণত যেকোনো অ্যাডজাস্টমেন্ট অব স্ট্যাটাসের আবেদনের সঙ্গে ব্যবহার করা হয়। এর মাধ্যমেই নির্ধারিত হয় আবেদনকারী স্বাস্থ্যগত কোনো কারণে ইনঅ্যাাডমিসিবল হয়ে পড়েন কিনা। এ বিষয়ে পুরো হালনাগাদ তথ্য পাওয়া যাবে <https://www.uscis.gov/policymanual/Updates/20181016-I-693Validity.pdf> লিংক থেকে।
২. এফ-১ থেকে এইচ-১বি-এর আবেদনকারীরা সাবধান:
যেসব শিক্ষার্থী এফ-১ স্ট্যাটাস বদল করে অনঅভিবাসী এমপ্লয়মেন্ট ভিসা বা এইচ-১বি-এর জন্য আবেদন করেছেন, কিন্তু ১ অক্টোবরের পরও সেই আবেদন অপেক্ষাধীন রয়েছে, তবে তাঁরা ১ অক্টোবরের পরও কাজ করলে তাঁদের উপস্থিতিকে বেআইনি বলে ধরে নেওয়া হবে। সে ক্ষেত্রে তাঁরা এইচ-১বি-এর জন্য অযোগ্য হয়ে পড়বেন। যেহেতু অপেক্ষাধীন এইচ-১বি-এর আবেদনের ক্ষেত্রে ওয়ার্ক পারমিট ভ্যালিড থাকার কথা ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এবং যেহেতু এই তারিখের আগে ইউএসসিআইএস সব অপেক্ষাধীন এইচ-১বি আবেদনের নিষ্পত্তি করতে পারবে না তাই, এই তারিখের পরে কাজ করলে সেটাকে বেআইনি হিসেবে গণ্য করা হবে।
৩. ফি ওয়েভারের নতুন নিয়ম:
ইউএসসিআইএসের আবেদনের সঙ্গে নির্ধারিত ফি মওকুফের সুযোগ রয়েছে। রিকোয়েস্ট ফর ফ্রি ওয়েভার, ফর্ম আই-৯১২-এর মাধ্যমে এই ফি মওকুফের আবেদন করতে হয়। ফি মওকুফের যোগ্যতা নির্ধারণের জন্য এত দিন এই ফর্মে তিনটি অপশন দেওয়া হতো। এখন এই যোগ্যতা নির্ধারণে দুটি অপশনের কথা বলা হচ্ছে। যারা বিভিন্ন রকম সরকারি সুবিধা (পাবলিক বেনিফিট) পেতেন, তাঁদের সেই সুবিধার তথ্য দিয়ে এই ফর্মের মাধ্যমে ফি মওকুফের আবেদন করা যেত। অন্য দুটি অপশন ছিল (১) দারিদ্র্যসীমার ১৫০ শতাংশের নিচে আয় এবং (২) আর্থিক অসচ্ছলতা। এখন এই দুটি অপশন রেখে সরকারি সুবিধা প্রাপ্তির অপশনটিকে তুলে দেওয়া হচ্ছে। এতে করে কেউ যদি আয়কর রিটার্ন ফাইল না করেন, তাহলে তাঁর আয় দারিদ্র্যসীমার নিচে কিনা, তা প্রমাণ করতে পারবেন না। আর সেটা প্রমাণ করতে না পারলে সরকারি সুবিধার অপশন না থাকায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ফি মওকুফের যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন না।
নতুন এই নিয়মের কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, ইউএসসিআইএস তার বাজেটের ৯৫ শতাংশ আয় করে বিভিন্ন আবেদন বাবদ জমা হওয়া ফি থেকে। গত আট বছরে মওকুফকৃত ফির পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। ফলে ইউএসসিআইএসের আয় ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে। এ কারণে বিভিন্ন সময়ে ইউএসসিআইএসকে ফি বাড়াতে হয়েছে। এক হিসাবে দেখানো হয়েছে, ২০১৬ সালে মওকুফকৃত ফির পরিমাণ ছিল ৩৬ কোটি ৭৯ লাখ ডলার।
৪. হাজিরা-সংক্রান্ত নতুন নিয়ম:
গত ২৮ জুন ইউএসসিআইএস এ-সংক্রান্ত যে নীতি হালনাগাদ করে এবার সেটিই ১ অক্টোবর থেকে কার্যকর করার ঘোষণা দিয়েছে। নতুন এই নীতিতে বলা হয়েছে, এখন থেকে যেকোনো অ্যাডজাস্টমেন্ট অব স্ট্যাটাস অথবা ভিজিট ভিসার মেয়াদ বৃদ্ধির আবেদন বাতিল হলে আদালতে হাজির হওয়ার নোটিশ (নোটিশ টু অ্যাপিয়ার) ইস্যু করা হবে, যা হবে ‘রিমুভাল প্রোসিডিং’-এর প্রথম ধাপ।
৫. গ্রিনকার্ডের কন্ডিশন রিমুভালের আবেদন যাবে নতুন ঠিকানায়:
গত ১০ সেপ্টেম্বর থেকে পিটিশন টু রিমুভ কন্ডিশনস অন্য রেসিড্যান্স, ফর্ম আই-৭৫১ নতুন ঠিকানায় পাঠাতে বলা হয়েছে। আগে এই ফর্ম পাঠাতে হতো ক্যালিফোর্নিয়া ও ভারমন্ট সার্ভিস সেন্টারে। এখন থেকে আবেদনকারীদের এই আবেদন পাঠাতে হবে ইউএসসিআইএসের লকবক্স ফ্যাসিলিটিতে। যদিও সংশ্লিষ্ট অফিস থাকবে ক্যালিফোর্নিয়া, নেব্রাস্কা, ভারমন্ট ও টেক্সাসে।
৬. বর্ধিত প্রিমিয়াম প্রসেসিং ফি:
পিটিশন ফর এ ননইমিগ্র্যান্ট ওয়ার্কার, ফর্ম আই-১২৯ ও ইমিগ্র্যান্ট পিটিশন ফর অ্যালিয়েন ওয়ার্কার, ফর্ম আই-১৪০-এর জন্য প্রিমিয়াম প্রসেসিং ফি বাড়ানো হয়েছে। আগে এই ফি ছিল ১ হাজার ২২৫ ডলার। এটি এখন বাড়িয়ে ১ হাজার ৪১০ ডলার করা হয়েছে। ১ অক্টোবর ২০১৮ থেকে এই বর্ধিত ফি কার্যকর করা হয়েছে। ইউএসসিআইএস এর প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা জোসেফ মুর বলেন, ২০১০ সাল থেকে এই ফি বাড়ানো হয়নি। কাজেই এখন সময় এসেছে এটাকে ঢেলে সাজানোর। দিনে দিনে এই আবেদনের পরিমাণও বাড়ছে। আমরা এই বাড়তি ফির অর্থ দিয়ে এ-সংক্রান্ত প্রযুক্তি ও জনবল বাড়াতে পারব। প্রিমিয়াম প্রসেসিং ফি দিয়ে ফর্ম আই-১২৯ ও ফর্ম আই-১৪০-এর আবেদনের মাত্র ১৫ দিনের মধ্যে ইউএসসিআইএসের সিদ্ধান্ত জানা যায়।

বিশেষ দ্রষ্টব্য: এই নিবন্ধ কোনো রকম আইনি পরামর্শ নয়। এটি শুধু ইউএসসিআইএস ও ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটির ওয়েবসাইটে প্রদর্শিত এ-সংক্রান্ত তথ্যের সন্নিবেশ।
লেখক: ব্যারিস্টার-অ্যাট-ল, নিউইয়র্কপ্রবাসী
সেল: (৯২৯) ৩৯১-৬০৪৭; ই-মেইল: বীঢ়ধ.বীঢ়ব¦মসধরষ.পড়স