মার কাছে না-বলা কথাগুলো

গাছে উঠতে চাইলে পড়ে যাওয়ার ভয়ে তুমি গাছে উঠতে দাও না। কিন্তু যদি গাছে উঠতে না শিখি তাহলে হিমালয় জয় করব কীভাবে? আমার স্বপ্ন শুধু হিমালয় জয় নয়, হিমালয়ের চূড়ায় উঠে লাফ দিয়ে আকাশের চাঁদটা হাতে আনার। হাতে এনে জিজ্ঞাসা করতে চাই উনি মামা হয়েও কেন এত দিন থেকে আমার কপালে টিপ দিতে আসছে না।
পুকুরে গোসল করতে চাইলে ডুবে যাওয়ার ভয়ে তুমি আমাকে পুকুরে গোসল করতে দাও না। বাথরুমে গোসল করিয়ে দাও। যদি একবারও পুকুরে না ডুবি আর পানি না খাই, তবে সাঁতার শিখব কীভাবে? আমার ইচ্ছা পদ্মা নদী সাঁতরে পাড়ি দেওয়ার। আর সেটা যদি না পারি সমুদ্র জয় করব কীভাবে?
আমি যখন ভরা দুপুরে তীব্র রোদে কর্দমাক্ত মাঠে বন্ধুদের সঙ্গে জাম্বুরার বল দিয়ে খেলি, তখনই সবচেয়ে বেশি মজা পাই। অথচ আমার অসুখ হবে ভেবে তুমি খেলার মাঠ থেকে আমাকে বাড়ি নিয়ে আসো। কিনে দাও সত্যি খেলার বল। কিন্তু এই বল দিয়ে শুকনো জায়গায় বিকেলে খেলতে আমার ভালো লাগে না।
তুমি ভূতের গল্প শুনিয়ে ভয় দেখিয়ে ঘুম পাড়ানোর চেষ্টা করতে। আর আমি স্বপ্নে দেখতাম কীভাবে সাহস সঞ্চয় করে ভূতটাকে ঘায়েল করা যায়। যেন আমাকে আর ঘুমাতে না হয়; দৌড় দিতে পারি ভরা দুপুরে কোনো পুকুর-ডোবার কিনার ধরে। ঘুম থেকে উঠলেই খেলতে নিয়ে যাবে বলে কেন আমাকে ঘুম পাড়াও না?
একটু বড় হয়ে যখন আমি পুকুরে বড়শি দিয়ে মাছ ধরতে যাই, তখন তুমি আমাকে জোর করে পড়ার টেবিলে বসাও। তুমি কি দেখ না, আমি মাছকে টোপ দিই মাছের প্রিয় খাবারে, আমার প্রিয় চকলেটে নয়? তাই আমাকে পড়াতে নিয়ে বসতে যদি জোর না করে চকলেট দেবে বলতে বা পড়ার পর খেলতে নিয়ে যাবে বলতে, আমার আসতে মোটেও কষ্ট লাগত না।
কিছুদিন আগে আমার সহপাঠীরা যখন রাস্তায় নেমে দেশবাসীকে দেখিয়ে দিল কীভাবে নিয়ম-মেনে গাড়ি চালাতে হয়, তখন তুমি ভয় পেয়ে আমাকে রাস্তায় নামতে দিলে না। আমি রাস্তায় গেলে নিয়ম-শৃঙ্খলার ওই দৃশ্যটা হয় চিরস্থায়ী হতো না হয় আমি শহীদ হতাম। যদি আমাদের স্কুল থেকে নিরাপদ বাড়ি ফেরা নিশ্চিত না হয়, আমার বেঁচে থেকেই বা কী লাভ? নিশ্চয়ই তুমি ভুলো নাই যে আমাদের বাবাও সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন।
তুমি হয়তো লক্ষ্য করেছ, আমি সব সময়ই কোনো অজ্ঞাত কারণে ঝুঁকিপূর্ণ জিনিস ও খেলা পছন্দ করি। কারণ আমি আত্মনির্ভরশীল হতে চাই, জীবনযুদ্ধে জয়ী হওয়া শিখতে চাই। দয়া করে আমাকে তা থেকে বঞ্চিত করো না।
দেখো না, দেশজুড়ে মহা সমারোহে চলছে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় পূজা, দুর্গা পূজা? আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘ধর্ম যার যার, উৎসব সবার’। সেই দেবী দুর্গা একটা অসুরকে হত্যা করেছেন দশ হাত দিয়ে। তুমি কী মনে করো, আমাদের টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত আর কোনো অসুর নাই? আমি তোমার উৎসাহে শক্তি সঞ্চয় করে জীবনযুদ্ধে জয়ী হওয়া না শিখলে আমার এই দুটা হাতে এতগুলো অসুরদের বধ করব কীভাবে?
মনে রেখো, আমি জিতলে, তুমিও জয়ী হবে। বিজয়ী হবে আমাদের দেশ, প্রাণের প্রিয় বাংলাদেশ।