বিরোধ নয় সুস্থ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করুন

জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই মানুষকে কারও না কারও সঙ্গে কোনো না কোনো সময় প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামতে হয়। এই প্রতিদ্বন্দ্বিতা স্বাস্থ্যকরও বটে। প্রতিদ্বন্দ্বিতা না থাকলে মানুষের সভ্যতা আজকের পর্যায়ে আসতে পারত না। এই প্রতিদ্বন্দ্বিতা অধিকাংশ ক্ষেত্রে অঘোষিত থাকে। তবে রাজনীতি আর খেলার মাঠের বিষয় স্বতন্ত্র। রাজনীতির মাঠে ঘোষণা দিয়েই সবাই প্রতিদ্বন্দ্বী হয়; অবস্থান নেয় দুই প্রতিদ্বন্দ্বী শিবিরে।
রাজনীতির মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বিতার মূল রূপটি প্রকাশ পায় নির্বাচনকালে। এই রূপটি সামাজিক সংগঠনের ক্ষেত্রেও খাটে। বড় সংগঠনগুলোর নেতৃত্ব নির্বাচনের মধ্য দিয়েই স্থির হয়। এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দল না থাকলেও নির্বাচনী আমেজে কোনো ঘাটতি পড়ে না। বাংলাদেশ সোসাইটির আসন্ন নির্বাচন সেই আমেজই দিচ্ছে। নিউইয়র্কপ্রবাসী বাংলাদেশিদের সংগঠন বাংলাদেশ সোসাইটির নির্বাচনের আর মাত্র কয়েক দিন বাকি। নিউইয়র্কের বাংলাদেশি কমিউনিটিতে বেশ একটা উত্তেজনা বিরাজ করছে। সংগঠনের নির্বাচন, তার প্রচার কার্যক্রম ও একে ঘিরে উৎসবের আমেজ অবশ্যই প্রশংসনীয়। কিন্তু এই সব ইতিবাচকতার মধ্যে একটি নেতির সুর শোনা যায়, যখন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা তাদের প্রচার কার্যক্রমে নিজেদের কর্মসূচির বদলে প্রতিদ্বন্দ্বীর ত্রুটিকেই বেশি গুরুত্ব দেন।
বাংলাদেশ সোসাইটির নির্বাচনে দুটি প্যানেল এবং সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে দুজন স্বতন্ত্র প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন এবার। এর মধ্যে এক প্যানেল থেকে খোদ নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে। আরেক পক্ষ বিপরীত প্যানেলকে ‘মামলাবাজ’ বলে অভিহিত করেছে। এই অভিযোগ পাল্টা অভিযোগই এখন প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচারে গুরুত্ব পাচ্ছে বেশি। অথচ প্রতিদ্বন্দ্বিতার অর্থ এমন হওয়ার নয়। এই প্রবণতা বিরোধের বার্তা বহন করে।
বাংলাদেশ সোসাইটি বাংলাদেশি কমিউনিটির স্বার্থসংশ্লিষ্ট একটি বড় সংগঠন। অধিকার আদায়সহ সামাজিক-সাংস্কৃতিক নানাভাবে মূলধারা সঙ্গে বাংলাদেশিদের যুক্ত করাই এর মূল লক্ষ্য। এবারের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রার্থীদের সবাই এ লক্ষ্যের কথাই বলছেন, যা অর্জনে ঐক্য ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। সোসাইটির নেতৃত্ব নির্ধারণী নির্বাচনে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা হওয়াটা সোসাইটির জন্যই মঙ্গল। কিন্তু তা বিরোধে রূপ নিলে তা সোসাইটি বা বাংলাদেশি কমিউনিটি, কারও জন্যই ইতিবাচক হবে না। অতীত অভিজ্ঞতা বলে, প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে বিরোধে রূপ দেওয়ার কারণে অনেক সাবেক নেতাই এখন সোসাইটি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। দূরত্ব তৈরি হয়েছে নতুন প্রজন্মের সঙ্গেও। এই বিরোধ ও বিচ্ছিন্নতা দিয়ে আর যা-ই হোক আমেরিকান সমাজ ও রাজনীতিতে বাংলাদেশিরা এগিয়ে যেতে পারবে না। তাই সোসাইটি ও প্রবাসী বাংলাদেশিদের এগিয়ে যাওয়ার স্বার্থে বিরোধ নয় সুস্থ প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে গুরুত্ব দেওয়াটাই সবার জন্য মঙ্গলজনক।