মধ্যবর্তী নির্বাচনে দুই দলের ব্যবধান কমে আসছে

ডোনাল্ড ট্রাম্প
ডোনাল্ড ট্রাম্প

যুক্তরাষ্ট্রে মধ্যবর্তী নির্বাচনের দুই দিন আগের সর্বশেষ জনমত জরিপে রিপাবলিকান ও ডেমোক্রেটিক পার্টির মধ্যে জনসমর্থনের ব্যবধান বেশ কমে এসেছে। যে ‘নীল ঢেউয়ের’ কথা বলা হচ্ছিল, অভিবাসন প্রশ্নে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ক্রমাগত ক্রুদ্ধ প্রচারণা ও ইতিবাচক অর্থনীতি সে ঢেউ ঠেকাতে পারবে বলে ভাবা হচ্ছে। তবে নির্বাচনের মোটের ওপর ফল খুব পরিবর্তন হবে না।
এবিসি ও ওয়াশিংটন পোস্টের এই সর্বশেষ জরিপ অনুসারে ৫০-৪৩ পয়েন্ট ব্যবধানে ডেমোক্র্যাটদের কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ বা প্রতিনিধি পরিষদের নিয়ন্ত্রণ পাওয়ার কথা। এক মাস আগেও এই ব্যবধানের পরিমাণ ছিল ১১ পয়েন্ট। একই জরিপ অনুসারে, সব সম্ভাব্য ভোটারের মধ্যে ৫১ শতাংশ ডেমোক্র্যাট ও ৪৪ শতাংশ রিপাবলিকানদের পক্ষে ভোট দেবে বলে মনে করা হচ্ছে।
বেশির ভাগ বিশ্লেষক মনে করেন, ৭ পয়েন্টের এই ব্যবধান ধরে রাখতে পারলে মঙ্গলবারের নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টি প্রতিনিধি পরিষদের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পাবে। এ জন্য তাদের প্রয়োজন অতিরিক্ত ২৩টি আসন। সিবিএস নিউজের নির্বাচনী মানচিত্র অনুসারে ডেমোক্রেটিক পার্টি ২২৫ ও রিপাবলিকান পার্টি ২১০টি আসনে এগিয়ে আছে। তবে এর মধ্যে ১৩টি আসন দুই দলের যে কেউ দখল করতে পারে।
অন্যদিকে সিনেটে রিপাবলিকান নিয়ন্ত্রণের কোনো পরিবর্তন না হওয়ার সম্ভাবনা অধিক। সর্বশেষ নির্বাচনী ফলাফল মডেল অনুসারে রিপাবলিকান পার্টি ৫০ ও ডেমোক্রেটিক পার্টি ৪৪টি আসন দখলে রাখবে। অবশিষ্ট ৬টি আসনের ফলাফল এখনো অনিশ্চিত, তবে একটি বা দুটি আসন ডেমোক্র্যাটরা হারাবে, এ ব্যাপারে অধিকাংশ বিশেষজ্ঞ একমত।
সিনেট যে তাদের নিয়ন্ত্রণে আসবে না, এ কথা এখন ডেমোক্র্যাটরা নিজেরাও বলা শুরু করেছে। এই দলের সিনেট নির্বাচনী কমিটির প্রধান সিনেটর ক্রিস ভ্যান হলেন ফক্স নিউজকে জানিয়েছেন, সিনেট যে একদম হাতের নাগালের বাইরে, তা নয়। তবে যে পথে অগ্রসর হলে বিজয় সম্ভব, সে পথটি অতি সরু। এ জন্য তাঁদের নিজেদের সব কটি আসন ধরে রাখার পর আরও ২টি আসন দখল করতে হবে। সেটি খুব সহজ নয়।
দুই মাস আগেও অধিকাংশ পর্যবেক্ষক বলছিলেন, এ বছরের মধ্যবর্তী নির্বাচনে রিপাবলিকান পার্টিকে এক ‘নীল সুনামি’র সম্মুখীন হতে হবে। তেমন জলোচ্ছ্বাস যদি না জাগে, তাহলে তার প্রধান কৃতিত্ব প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ও যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির চমৎকার অবস্থা। ট্রাম্প অবশ্য অর্থনীতির বিষয়টি কার্যত এড়িয়ে অভিবাসনের প্রশ্নের ওপর সব মনোযোগ দিয়েছেন। নিজের অনুগত সমর্থকদের উদ্দীপ্ত করতে তিনি ২০১৬ সালের মতো এবারেও প্রবল বর্ণবিদ্বেষী রণকৌশল গ্রহণ করেছেন। ট্রাম্প তাঁর সমর্থকদের এই বলে হুঁশিয়ার করে দিচ্ছেন, এই নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটদের বিজয় হলে মহাবিপর্যয় ঘটবে। তারা সীমান্ত প্রহরা খুলে দেবে ও হাজার হাজার অবৈধ অভিবাসী, যাদের অনেকে মাদক পাচারকারী ও খুনি, এসে দেশটি দখল করে নেবে। ফলে আমেরিকার অর্থনীতি বিপন্ন হবে এবং এই দেশের মানুষের পরিচিত জীবনযাত্রা পাল্টে যাবে। যুক্তরাষ্ট্র পরিণত হবে আরেক ভেনেজুয়েলায়। ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ায় এক জনসভায় ট্রাম্প এমন কথাও বলেন, এই অভিবাসীরা পৃথিবীর সবচেয়ে ‘জঘন্য’ মানুষ, তা জেনেও ডেমোক্র্যাটরা তাদের দুই হাত তুলে স্বাগত জানাচ্ছে।
জনমত জরিপ অনুসারে, রিপাবলিকান সমর্থকদের মধ্যে এই রণকৌশল কাজে দিয়েছে। রিপাবলিকান-নিয়ন্ত্রিত রাজ্যগুলোতে ট্রাম্প সমর্থকদের মধ্যে প্রবল উত্সাহের সঞ্চার হয়েছে। এবারের নির্বাচনে সিনেটের অধিকাংশ আসন ‘লাল রাজ্য’ সমূহে, ফলে ট্রাম্পের অভিবাসনবিরোধী প্রচারণায় সিনেটে রিপাবলিকানদের ক্ষমতা বাড়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। কিন্তু প্রতিনিধি পরিষদের নির্বাচন হচ্ছে দেশজুড়ে, সেখানে অবস্থা সম্পূর্ণ ভিন্ন। শহর ও শহরতলির মানুষ, বিশেষত নারী ভোটাররা ট্রাম্পের এই বিভেদাত্মক রাজনীতিতে বিরক্ত।

পর্যবেক্ষকেরা বলছেন, ট্রাম্প এই রণকৌশল অবলম্বন করছেন ২০২০ সালে নিজের পুনর্নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে, কিন্তু দলের জন্য দীর্ঘমেয়াদি হিসেবে তা ক্ষতিকর। ‘পলিটিকো’ জানিয়েছে, কংগ্রেসের রিপাবলিকান স্পিকার পল রায়ান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে টেলিফোন করে অনুরোধ করেছেন, তিনি যেন শুধু অভিবাসনের কথা না বলে অর্থনীতির কথাটাও তাঁর নির্বাচনী ভাষণে জানান। উত্তরে ট্রাম্প জানান, অভিবাসনের প্রশ্ন তাঁর সমর্থকদের মধ্যে প্রবল প্রণোদনার সঞ্চার করেছে। তাই তিনি এ নিয়ে কথা বলা বন্ধ করবেন না।
জনমত জরিপ থেকে ট্রাম্পের বক্তব্যের সমর্থন মেলে। এমনিতে মধ্যবর্তী নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের সমর্থকেরা সব সময়ই ভোটের ব্যাপারে কম আগ্রহী। সে কারণে গত তিন দশকের প্রায় প্রতিটি মধ্যবর্তী নির্বাচনে ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্টের দল নির্বাচনে বড় রকমের ধাক্কা খেয়েছে। কিন্তু ট্রাম্প অভিবাসনের প্রশ্নটি আবার আলোচনায় এনে যেভাবে ভীতির জন্ম দিয়েছেন, তাতে তাঁর সমর্থকেরা তাঁদের অনাগ্রহ ঝেড়ে ফেলে ভোটে উৎসাহী হয়েছেন।