আগ্রাসী আগুনে পুড়ছে বাড়ি, পুড়ছে মানুষ

ক্যালিফোর্নিয়ায় দাবানলে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২৯–এ দাঁড়িয়েছে। ছবি: এএফপি
ক্যালিফোর্নিয়ায় দাবানলে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২৯–এ দাঁড়িয়েছে। ছবি: এএফপি

যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের দাবানল ধেয়ে চলেছে সবকিছু পুড়ে খাক করে। আগ্রাসী আগুনে পুড়ছে বাড়ি, পুড়ছে মানুষ। ভস্মের স্তূপ থেকে গতকাল রোববার উদ্ধারকারী দল আরও ছয়টি মরদেহ উদ্ধার করেছে। এ নিয়ে মৃত মানুষের সংখ্যা ২৯–এ পৌঁছাল। ক্যালিফোর্নিয়ার উত্তরাঞ্চলে সিয়েরা নেভাদা পাহাড়ের পাদদেশে এই ভয়াবহ দাবানলে আড়াই লাখ বাসিন্দা বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়েছে। অনেকে নিখোঁজ থাকায় ধারণা করা হচ্ছে, মৃত মানুষের সংখ্যা আরও বাড়বে।

দাবানলের চতুর্থ দিন গতকাল বাট কাউন্টি শেরিফ কোরি হোনিয়া এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, ওই দিন আরও ছয়জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এ নিয়ে দাবানলে দগ্ধ ২৯ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এসব লাশ প্যারাডাইজ শহর থেকে উদ্ধার হয়।

দাবানলে মাইলের পর মাইলজুড়ে আকাশ কালো ধোঁয়ায় ছেয়ে গেছে, সূর্যের দেখাই পাওয়া যায় না। নিচে গাড়িগুলোয় আগুন লেগে এমন অবস্থা হয়েছে যে ধাতব কাঠামো শুধু পড়ে রয়েছে। আগুনে বিদ্যুৎ লাইন ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

১৯৩৩ সালে লস অ্যাঞ্জেলেসে গ্রিফিত পার্ক দাবানলের ভয়াবহতার কাছাকাছি চলে যাচ্ছে এবারের ঘটনা। ক্যালিফোর্নিয়া বন ও অগ্নি সুরক্ষা বিভাগের (ক্যাল ফায়ার) তথ্য অনুসারে ওটাই এখন পর্যন্ত ক্যালিফোর্নিয়ার সবচেয়ে ভয়াবহ দাবানলের ঘটনা।

দাবানল নিয়ন্ত্রণে চার হাজারেরও বেশি দমকলকর্মী কাজ করছেন। ছবি: এএফপি
দাবানল নিয়ন্ত্রণে চার হাজারেরও বেশি দমকলকর্মী কাজ করছেন। ছবি: এএফপি

ক্যালিফোর্নিয়ার দক্ষিণাঞ্চলের শেষ প্রান্তে মালিবুর সুরক্ষিত অভিজাত উপকূলীয় এলাকায় বড় বিলাসবহুল বাড়ি এবং ভ্রাম্যমাণ ঘরবাড়ি দাবানলের ঝুঁকিতে রয়েছে। সেখানে একটি গাড়িতে দুজনের মৃতদেহ পাওয়া গেছে।

লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টির দমকল বাহিনীর প্রধান ডারিল ওসবি তাঁর কর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সাংবাদিকদের বলেছেন, লাখো মানুষের জীবন বাঁচাতে এবং বাড়িঘর রক্ষা করতে দমকল বাহিনীর কর্মীরা যা করা দরকার সব করছেন।

ক্যাল ফায়ার জানিয়েছে, বাতাসে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে আগুন। ১ লাখ ১১ হাজার একর এলাকা বা অঙ্গরাজ্যের ২৫ শতাংশ এলাকায় দাবানল ছড়িয়েছে। দমকল বাহিনীর চার হাজারেরও বেশি কর্মী আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছেন। দাবানলে আহত হয়েছেন তিনজন কর্মী। আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনতে তিন সপ্তাহ লাগতে পারে বলে মনে করছেন তাঁরা।

অঙ্গরাজ্যজুড়ে আড়াই লাখ লোককে বাড়িঘর থেকে পালিয়ে থাকার অগ্নিসতর্কতা জারি করা হয়েছে। পুলিশের মতে, কোনো কোনো কৃষক তাঁদের গবাদিপশুগুলোর অবস্থা দেখার জন্য ফিরে এসেছেন।

দাবানলে ভস্ম হয়ে যাওয়া গাড়ি। ছবি: এএফপি
দাবানলে ভস্ম হয়ে যাওয়া গাড়ি। ছবি: এএফপি

ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর জেরি ব্রাউন গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, আগামী ১০, ১৫, ২০ বছর পর্যন্ত এমন অবস্থা অব্যাহত থাকতে পারে। তিনি বলেন, দুর্ভাগ্যজনক যে দাবানলের জন্য এই অঞ্চলের শুষ্কতা, উষ্ণতা, খরার মতো বিষয়গুলোর কথা বলা হচ্ছে এবং এই সমস্যাগুলো আরও প্রকট হচ্ছে।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধ সমাপ্তির শতবর্ষ স্মরণে প্রায় ছয় হাজার মাইল দূরে ফ্রান্স সফরে থাকা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দাবানল নিয়ে এক টুইটের ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে। তিনি অর্থ সহায়তা বন্ধের হুমকি দিয়ে টুইটারে বলেছেন, ‘ক্যালিফোর্নিয়ায় বন ব্যবস্থাপনায় দুর্বলতা ছাড়া এমন ভয়াবহ দাবানল হওয়ার কোনো কারণ নেই।’

এর বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে ক্যালিফোর্নিয়ার পেশাদার দমকলকর্মীদের প্রধান ব্রায়ান রাইস টুইটারে বলেছেন, যথাযথভাবে না জেনে অসময়ে এই মন্তব্যে ভুক্তভোগীদের খাটো করা হয়েছে। তিনি আরও বলেছেন, প্রেসিডেন্ট অভিযোগ করেছেন, বন পুলিশদের মধ্যে অব্যবস্থাপনা রয়েছে, যা ‘মারাত্মক ভুল’।