আকায়েদ দোষী সাব্যস্ত

এক বড় অদ্ভুত সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে সমগ্র মানবজাতি। কে, কোথায়, কেন, কোন কাজ করছে, বলতে পারে না। সমাজ, গোষ্ঠী অর্থাৎ সমষ্টির ওপর নিপীড়নের ক্ষোভ শেষ মুহূর্তে ব্যক্তির ওপর কী প্রভাব ফেলে, বলা কঠিন। ওই ব্যক্তি তাঁর ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ কীভাবে করবেন, তা আগাম অনুমান করা কঠিন। এমনকি ব্যক্তি মানুষের ক্ষোভও অনেক সময় ভয়াবহ হয়ে দাঁড়ায়। ব্যক্তি তখন সমষ্টির ওপর প্রতিশোধ নিয়ে আলোচনায় আসতে চায়। সাম্প্রতিক সময়ে আমেরিকায় এর উদাহরণ ভূরি ভূরি। এ কারণের সঙ্গে যোগ হয়েছে অস্ত্রের সহজ প্রাপ্যতা। এ যেন সোনায় সোহাগা। ফলে অনেক পরিবারের কান্নার কারণ হয়েছে এই ব্যক্তির ক্ষোভ। স্কুল ও ধর্মীয় উপাসনালয় থেকে গভীর রাতের পানশালা—কোনো জায়গা বাদ পড়েনি।

নিউইয়র্কপ্রবাসী বাংলাদেশি আকায়েদ উল্লার কথাই ধরা যাক। ২০১৭ সালের ১১ ডিসেম্বরের সকালে ব্যস্ত সময়ে আকায়েদ ম্যানহাটানের পোর্ট অথরিটি বাস টার্মিনালের প্রবেশপথে নিজের শরীরে বাঁধা পাইপ বোমার বিস্ফোরণ ঘটান। বোমাটি ঠিকমতো বিস্ফোরিত হয়নি। আকায়েদ প্রাণে বেঁচে গেলেও গুরুতর আহত হন। বিস্ফোরণে আহত হন তিন পুলিশ সদস্য। তাঁর প্রাথমিক বিচারপর্ব শেষ। বিচারপর্বের শেষে এসে আদালতে তিনি বললেন, ‘আমি ডোনাল্ড ট্রাম্পের ওপর ক্ষুব্ধ ছিলাম। তিনি মধ্যপ্রাচ্যে বোমা ফেলবেন বলেছিলেন। আমি আইএসআইএসের হয়ে হামলা করিনি। সরকারপক্ষ আমাকে যে দলটির সঙ্গে ফেলতে চেষ্টা করেছে, আমি তাদের সমর্থন করি না।’ অর্থাৎ মধ্যপ্রাচ্যে বোমা হামলার কারণে তাঁর ব্যক্তিমানস ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছিল। আর তিনি ক্ষোভ মেটানোর জন্য বেছে নিলেন ম্যানহাটানের পোর্ট অথোরিটির বাস টার্মিনালকে। নিউইয়র্কের লাখ লাখ মানুষ প্রতিদিন এই টার্মিনাল ব্যবহার করে। ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা বাড়িয়ে তিনি সবার দৃষ্টি কাড়তে চেয়েছিলেন।

এখানে ব্যক্তির পাশাপাশি কমিউনিটির ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, নিউইয়র্কের প্রবাসী বাঙালিরা সর্বক্ষেত্রে প্রশংসিত। এই প্রশংসা তাঁদের দীর্ঘ পরিশ্রমের মাধ্যমে অর্জন করতে হয়েছে। কিন্তু এক আকায়েদের ঘটনা সাধারণ নিউইয়র্কবাসীর সামনে প্রবাসী বাংলাদেশিদের সন্দেহের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছিল। সেই সন্দেহ দূর করতে তাঁদের সময় লেগেছে। তবে এর মাধ্যমে আবারও প্রমাণিত হয়েছে, দীর্ঘদিনের অর্জন কীভাবে এক লহমায় ধ্বংস হয়ে যায়। তাই আকায়েদের মতো আর কোনো প্রবাসী বাংলাদেশি যাতে এ ধরনের কোনো ঘটনা না ঘটাতে পারেন, সে জন্য পরিবার, বৃহত্তর আত্মীয়পরিজন পরিবৃত পরিবার, সর্বোপরি কমিউনিটিকে সচেতন হতে হবে। একজনের ভুল ভাবনার কুফল সমগ্র কমিউনিটিকে যাতে আর ভোগ করতে না হয়, সে জন্য সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। নিউইয়র্কের প্রবীণ সাংবাদিক মাহবুবুর রহমানের কথায় বলতে হয়, আকায়েদদের কাণ্ডজ্ঞানহীন কাজ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও অভিবাসনবিরোধীদের হাতে অপবাদের অস্ত্র তুলে দেবে। তাই এ ধরনের অপকর্ম ঠেকাতে প্রবাসী কমিউনিটি নেতাদের করণীয় ভাবতে হবে।