তিন বছরে বিদ্বেষপ্রসুত অপরাধ বেড়েছে

আমেরিকায় ২০১৮ সালে বিদ্বেষপ্রসুত অপরাধ প্রায় ১৭ শতাংশ বেড়েছে, যা পর পর তিন বছর সংঘটিত অন্যসব অপরাধের চেয়ে বেশি। ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন—এফবিআইয়ের ১৩ নভেম্বর প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এমন তথ্যই উঠে এসেছে।
২০১৭ সালে বিদ্বেষপ্রসুত অপরাধের মোট সংখ্যা ছিল ৭ হাজার ১০০টি, যা যথাযথ কর্তৃপক্ষের নজরে আনা হয়েছিল। বার্ষিক প্রতিবদেনে দেওয়া তথ্য অনুসারে, এসব ঘটনার পাঁচটির মধ্যে তিনটির উৎস হলো বর্ণবৈষম্য এবং সম্প্রদায়গত বিভক্তি। বাকি দুটির প্রাথমিক কারণ হলো ধর্মীয় বাড়াবাড়ি ও যৌন নিগ্রহের ঝোঁক।

কখনো আবার রাজনৈতিক উত্তেজনা এসব অপরাধকে উসকে দেয়। তবে বর্তমানে বিভিন্ন আইনরক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে এই সমস্যা চিহ্নিত করে দ্রুত প্রতিকারের বিষয়টি বলা হচ্ছে। এফবিআইয়ের মতে, বিদ্বেষপ্রসুত অপরাধের একটি বড় অংশ অজানা থেকে যায়। শুধু ১২ দশমিক ৫০ শতাংশ ঘটনা সঠিক আইন প্রয়োগকারী সংস্থার নজরে আসে, যা ২০১৭ সালে বিভিন্ন স্থানে ঘটা ঘটনার তথ্য–উপাত্ত সংগ্রহ করে জানা যায়। যথাযথ কর্তৃপক্ষের নজরে না আসার পরিসংখ্যানে মায়ামি ও লাসভেগাস নগর পুলিশ বিভাগের নাম সবার ওপরে।

উল্লিখিত দুই শহরের পুলিশ কর্মকর্তারা বিদ্বেষপ্রসুত অপরাধের সংখ্যা শূন্য দেখিয়েছেন, যা কোনোভাবে সন্তোষজনক নয় বলে জানান সিম জে সিং। সিম শিখ কোয়ালিশন এবং মানব অধিকার কমিটির একজন প্রবীণ সংগঠক। আন্তর্জাতিক পুলিশ প্রধান অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও আরলিংটনের পুলিশ প্রধান উইলি জনসনের মতে, কোনো কোনো বিভাগে কর্মরত পুলিশের অনেকেরই এমন অপরাধের ঘটনা তদন্তের জন্য পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের অভাব আছে। এ সমস্যার সুরাহা করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও মনোযোগী করতে অ্যাসোসিয়েশন একটি প্রস্তাব গ্রহণ করেছে।

সাম্প্রতিক কয়েকটি ঘটনায় কারও কারও ভূমিকা বেশ উদ্বেগজনক। যার একটি হচ্ছে, একজন হাইস্কুলগামী ছাত্রের নাৎসি আদলে স্যালুট প্রদান। এমনকি মিসিসিপি অঙ্গরাজ্যের সিনেটর পদপ্রার্থী শ্বেতাঙ্গ সিডনির কথা বেশ বড় ধরনের উত্তেজনার জন্ম দেয়। কারণ তাঁর প্রতিপক্ষ ছিলেন কালো বর্ণের মাইক এসপি। এ ছাড়া অরিগন অঙ্গরাজ্যের পোর্টল্যান্ডে একজন হিজাবধারী মুসলিম নারীর ওপর আক্রমণকারীকে প্রতিহত করতে গিয়ে একজন শ্বেতাঙ্গ আমেরিকান ছুরিকাহত হন।

এসব ঘটনার সঙ্গে ভার্জিনিয়ার চার্লটনসভিলে শ্বেতাঙ্গ চরমপন্থীদের হাতে বর্ণবাদবিরোধী একজন শ্বেতাঙ্গ আন্দোলনকারীর মৃত্যু বলে দেয়, বিদ্বেষপ্রসুত অপরাধ ক্রমেই বাড়ছে।
গত মাসে ক্যানটাকিতে ঘটে যায় আরও একটি দুঃখজনক ঘটনা। সেখানে একটি সুপার মার্কেটে একজন শ্বেতাঙ্গ আমেরিকান দুজন কৃষ্ণাঙ্গকে গুলি করে হত্যা করে, যা আমেরিকাজুড়ে বর্ণবৈষম্য আরও গভীর হওয়ার পরিচায়ক বলে বিশেষজ্ঞরা বলছেন।

এ ধরনে সব ঘটনাকে ছাড়িয়ে যায় পিটসবার্গে ইহুদি উপাসনালয়ে হামলা করে ১১ জনকে হত্যা। দুটি চরমপন্থী ধর্মীয় সংগঠন এ হত্যার দায়ভার নেয় বলে কোনো কোনো সূত্রে জানা যায়, যা সব শান্তিপ্রিয় আমেরিকানদের শঙ্কিত করে তুলে।

ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব অ্যাডভান্সমেন্ট কালার্ড পিপল নামের সংস্থার সভাপতি ডেরেক জনসন বলেন, গত প্রেসিডেন্ট নির্বাচন থেকে বর্ণবাদী ও বিদ্বেষপ্রসুত অপরাধ বেড়েছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পসহ আরও কয়েকজন প্রার্থীকে এ জন্য দায়ী করা হয়। তবে সংশ্লিষ্ট সবার আশা এসব ক্ষতিকর ভাবনা সমাজে আর ফিরে আসবে না। বরং সব সম্প্রদায়ভিত্তিক সমঝোতা ও সহমর্মিতা ফিরে আসবে দেশজুড়ে।