আশাবাদী না হলেও স্বস্তিতে অভিবাসীরা

মধ্যবর্তী নির্বাচনে কংগ্রেসের প্রতিনিধি পরিষদ ডেমোক্রেটিক দলের দখলে যাওয়ার পর আমেরিকার অভিবাসীরা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিবাসনবিরোধী পদক্ষেপ কিছুটা হলেও থমকে দাঁড়াবে। সমন্বিত অভিবাসন আইন চালু করার প্রস্তাব ঝুলে থাকবে বছরের পর বছর। হোয়াইট হাউসে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প, কংগ্রেসের নিন্ম কক্ষে ডেমোক্র্যাট আর সিনেটে রিপাবলিকান প্রাধান্য—এই জটের মধ্যে অভিবাসন সমস্যা নিয়ে কোন সমঝোতা হবে, এমন ভাবার কোন কারণও নেই। আমেরিকার রাজনীতিতে দাবার গুটির মতো ব্যবহার হওয়া অভিবাসীরা অবশ্য মধ্যবর্তী নির্বাচনের পর একটু হাফ ছেড়ে বেঁচেছে। সমঝোতা না হলেও আমেরিকার অভিবাসীদের হয়রানি আর হুমকি দেওয়া কিছুটা বন্ধ হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

গত ৬ নভেম্বরের আগে পরিস্থিতি ছিল একতরফা। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিবাসনবিরোধী আস্ফালন চলছিল। কখনো নির্বাহী আদেশ দিয়ে, কখনো নিছক হুমকি দিয়ে তিনি তাঁর অভিবাসনবিরোধী সমর্থকদের চাঙা রাখার প্রয়াস নিয়েছিলেন। তাঁর অভিবাসন বিরোধিতার প্রতিবাদে আন্দোলন হয়েছে। অভিবাসীদের নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন সংগঠন রাস্তায় নেমেছে। এসবে ভ্রুক্ষেপ না করে ট্রাম্প এগিয়ে যেতে চেয়েছেন। তাঁর নির্বাহী আদেশ বাধাগ্রস্ত হয়েছে আদালতে। যদিও আমেরিকার ক্ষমতার ভারসাম্যের অন্যতম স্তম্ভ সুপ্রিম কোর্টে এখন রক্ষণশীল বিচারকদের আধিপত্য। এ অবস্থায় কংগ্রেসে ডেমোক্র্যাট সংখ্যাগরিষ্ঠতা না হলে আমেরিকার অভিবাসীদের জন্য পরিস্থিতি আরও নাজুক হতে পারত।

পিউ রিসার্চ সেন্টারের দেওয়া তথ্যমতে, আমেরিকায় বিশ্বের সবচেয়ে বেশি অভিবাসীদের বসবাস। ৪ কোটি ৩০ লাখের বেশি লোক আমেরিকায় বসবাস করে, যাদের জন্ম হয়েছে আমেরিকার বাইরে। বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে এখনো অভিবাসী আসছে। আমেরিকায় অভিবাসীদের মধ্যে প্রায় এক চতুর্থাংশের বসবাসের কোনো বৈধ কাগজ পত্র নেই। আমেরিকার অভিবাসনবিরোধীরা এদের ‘অবৈধ’ অভিবাসী হিসেবে আখ্যায়িত করলেও উদারনৈতিকদের মতে এরা আনডকুমেন্টেড বা বৈধ কাগজপত্রহীন অভিবাসী।

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার আগে থেকেই তাঁর অভিবাসনবিরোধী মনোভাভ চাঙা করেছেন। ক্ষমতায় এসে মুসলিম কয়েকটি দেশ থেকে আমেরিকায় ভ্রমণের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। আমেরিকার ভেঙে পড়া অভিবাসন আইনের সংস্কার নিয়ে গত তিন দশক ধরে আন্দোলন হচ্ছে, রাজনীতি হচ্ছে—এসবের ধারে–কাছে না গিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সরাসরি অভিবাসীদের স্বার্থের ওপর খড়্গ চালাতে থাকেন। পারিবারিক অভিবাসন বন্ধ করে মেধাভিত্তিক অভিবাসন চালুর কথা বলেন, ঝুলে থাকা অভিবাসন সমস্যা যেমন ডাকা কর্মসূচিসহ অন্যান্য বিষয়ে তিনি সমাধানের কোন পথে চলেননি। পেশাজীবীদের জন্য চালু এইচওয়ান ভিসায় নানা শর্ত আরোপ করেন। মেধাবী শিক্ষার্থী যারা আমেরিকায় উচ্চশিক্ষা শেষ করেছে, তাদের আমেরিকায় থাকার পথ সংকোচন করেন। সীমান্তে দেয়াল নির্মাণ করে দক্ষিণ আমেরিকা থেকে অভিবাসী আসার পথ বন্ধ করার কথা বলছেন বারবার। ডিভি লটারি নামে চালু থাকা কর্মসূচি একবারেই বন্ধ করে দিতে চান। আমেরিকায় জন্ম নিলেই আমেরিকান হওয়া যাবে না—এমন বিধি আরোপ করতে চান ট্রাম্প।

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এসব আগ্রাসী অভিবাসনবিরোধিতা এখন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। ডেমোক্র্যাটদের নিয়ন্ত্রণে কংগ্রেস আসার পর প্রেসিডেন্টের যেকোনো উদ্যোগকে তারা নানাভাবে চ্যালেঞ্জ করতে পারবে। যদিও আমেরিকার অভিবাসন সমস্যার কোনো সমাধান হবে না—এমনটাই মনে করছে অভিবাসন নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলো। সেন্টার ফর ইমিগ্রেশন স্টাডিজের নির্বাহী পরিচালক মার্ক ক্রিকোরিয়ান বলেন, রিপাবলিকানদের নিয়ন্ত্রণে কংগ্রেস থাকার পরও কোন সমন্বিত বা সমঝোতার অভিবাসন আইন পাশ করা সম্ভব হয়নি। এবারও কংগ্রেসে অভিবাসন নিয়ে কোনো সমন্বিত আইন পাশ হবে না।

নির্বাচনে জয়ের পর কংগ্রেসে ডেমোক্র্যাট দলের নেতা ন্যান্সি পেলোসি বলেছেন, কংগ্রেসে ডেমোক্র্যাটদের বিজয় মানে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে আমেরিকার সংবিধানের ভারসাম্য ফিরিয়ে আনা। তার মানে কংগ্রেসে ডেমোক্র্যাটদের সব কমিটি এখন সক্রিয় হবে। প্রেসিডেন্টের যেকোনো উদ্যোগের তারা শুনানি গ্রহণ করবে। ডেমোক্র্যাট থেকে নির্বাচিত নিউইয়র্কের কংগ্রেসম্যান জেরি নাদলার হাইজ জুডিশিয়াল কমিটির চেয়ারম্যান। অভিবাসীবান্ধব এ আইনপ্রণেতা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ইমিগ্রেশন বিরোধী যেকোনো উদ্যোগকে এখন বাগড়া দিতে পারবেন। সিনেটে রিপাবলিকান সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম জুডিশিয়াল কমিটির চেয়ারম্যান। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিবাসন নীতির সঙ্গে তাঁর মতের মিল রয়েছে। অভিবাসন নিয়ে শিগগিরই মার্কিন কংগ্রেসে প্রতিনিধি পরিষদ আর সিনেটের দুই কমিটির লড়াই দেখার অপেক্ষায় এখন ওয়াশিংটন।

ন্যান্সি পেলোসির নেতৃত্ব কংগ্রেসে আইন প্রস্তাব গৃহীত হলেও অভিবাসন নিয়ে লড়াই হবে সিনেট জুডিশিয়াল কমিটিতে। দুই কমিটির লড়াইয়ে অভিবাসীদের পক্ষে প্রতিনিধি পরিষদ কোন আইন প্রস্তাব গ্রহণ করলেও তা সিনেটে আটকে যাবে।

ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার রাজনীতি বিজ্ঞানের অধ্যাপক ব্রাড জোন্স বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের দেয়াল নির্মাণ, জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বাতিলসহ অনেক বিষয়েই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আর আগের মতো আগ্রাসী হতে পারবেন না। আবার হোয়াইট হাউস আর রিপাবলিকান সিনেটের সঙ্গে ডেমোক্র্যাটদের সমঝোতায় কোনো অভিবাসন সংস্কার হবে—এমন আশাও নেই অভিবাসীদের।