ইউক্রেনের ঘটনায় পুতিনের ওপর খাপ্পা ট্রাম্প

ইউক্রেনের আটক করা নাগরিকদের ক্রিমিয়ার আদালতে নেওয়া হয়। ছবি: এএফপি
ইউক্রেনের আটক করা নাগরিকদের ক্রিমিয়ার আদালতে নেওয়া হয়। ছবি: এএফপি

রাশিয়া-অধিকৃত ক্রিমিয়ার কেরচ প্রণালিতে ইউক্রেনের তিনটি জাহাজ ও ২৩ জন নাবিক আটকের জেরে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠক বাতিল করতে পারেন ট্রাম্প। আজ বুধবার বিবিসি অনলাইনের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

ওয়াশিংটন পোস্টকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, রাশিয়ার সেনাবাহিনী গুলি ছুড়ে ইউক্রেনের জাহাজগুলো আটক করার ঘটনার পুরো প্রতিবেদনের জন্য তিনি অপেক্ষা করছেন। তিনি আরও বলেন, জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থা যে প্রতিবেদন দেবে, তা ‘খুবই বর্ণনামূলক’ হবে। আগামী সপ্তাহে জি-২০ সম্মেলনের ফাঁকে ট্রাম্প ও পুতিনের ওই বৈঠক হওয়ার কথা ছিল।

ট্রাম্প বলেন, ‘হয়তো আমার সঙ্গে বৈঠক হবে না (পুতিনের সঙ্গে)। হয়তো আমিও বৈঠক করব না। আমি এই আগ্রাসন পছন্দ করি না। আমি এই ধরনের আগ্রাসন কখনো চাই না।’

গত রোববার ক্রিমিয়া উপকূলে ইউক্রেন নৌবাহিনীর তিনটি জাহাজ আটক করেছে রাশিয়া। এর আগে জাহাজগুলোকে লক্ষ্য করে গুলিও ছোড়ে রাশিয়ার নৌবাহিনী। এতে ইউক্রেনের বেশ কয়েকজন নাবিক আহত হন। ইউক্রেনের জাহাজ আটকাতে ক্রিমিয়ার কাছের কেরচ প্রণালির সেতুর নিচে ট্যাংকার ফেলে রেখেছিল রাশিয়া। ফলে কৃষ্ণ সাগর থেকে আজভ সাগরে জাহাজ চলাচলের পথ বন্ধ হয়ে যায়। জাহাজ আটকের পর গত সোমবার সকালে সেতুর নিচ থেকে ট্যাংকার সরিয়ে নেয় দেশটি।

ইউক্রেন এই ঘটনাকে আগ্রাসী আচরণ বলে মন্তব্য করলেও রাশিয়া দাবি, জাহাজগুলো অবৈধভাবে রাশিয়ার সীমানায় প্রবেশ করেছিল। ক্রিমিয়ার আদালত আদেশ দিয়েছেন, ইউক্রেনের যে ১২ জন নাগরিককে আটক করা হয়েছে, তাঁদের ৬০ দিনের জন্য আটক রাখা হবে।

ইউক্রেনকে আরও বেশি সমর্থন দেওয়ার জন্য ইউরোপীয় দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হিদার নোরেট বলেন, ওয়াশিংটন রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার কঠোর প্রয়োগ দেখতে চায়।

এ ঘটনার জেরে সোমবার ইউক্রেনে সামরিক আইন জারি করেছেন প্রেসিডেন্ট পেত্রো পোরোশেঙ্কো। ২৮ নভেম্বর থেকে এই সামরিক আইন কার্যকর হবে। সেই থেকে আগামী ৩০ দিন তা বহাল থাকবে। এর ফলে ২০১৪ সালে রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতের পর আবার সামরিক আইন জারির ঘটনা ঘটল। এই আইন জারির ফলে যেকোনো ধরনের সমাবেশ ও গণমাধ্যমের ওপর নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে কর্তৃপক্ষ।

কয়েক মাস ধরে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ছিল। চলতি বছরের প্রথম দিকে ক্রিমিয়ার কাছ থেকে ইউক্রেন রাশিয়ার দুটি জাহাজ আটক করলে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা মারাত্মক আকার ধারণ করে। মস্কো এ ঘটনাকে ‘সমুদ্র-সন্ত্রাস’ বলে আখ্যায়িত করে এবং আজভ সাগরে রুশ সেনা টহল বাড়িয়ে দেওয়া হয়। রাশিয়ার এ পদক্ষেপকে অবৈধ বলে মন্তব্য করে ইউক্রেন। কিন্তু রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সাফাই গেয়ে বলেছেন, ‘আমরা আগে শুরু করিনি।’

১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর ইউক্রেন স্বাধীনতা লাভ করে। পশ্চিমা সমর্থনপুষ্ট ইউক্রেনকে বরাবরই হুমকি বলে মনে করে রাশিয়া। ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেন হামলা চালিয়ে ক্রিমিয়া উপদ্বীপ অধিগ্রহণ করে রাশিয়া। এর জেরে রুশপন্থী বিদ্রোহীদের সঙ্গে ইউক্রেন সেনাবাহিনীর লড়াই শুরু হয়। ওই যুদ্ধে ১০ হাজারেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারায়।