মার্কিন সিনেটে ট্রাম্পের সৌদি নীতির সমালোচনা

ডোনাল্ড ট্রাম্প
ডোনাল্ড ট্রাম্প

মার্কিন সিনেট গতকাল বুধবার এক পদ্ধতিগত ভোটে ইয়েমেনে সৌদি আরবের নেতৃত্বে পরিচালিত যুদ্ধে সব রকম মার্কিন সাহায্য বন্ধের দাবি করেছে। ৬৩-৩৭ ভোটে গৃহীত এই প্রস্তাবের পক্ষে মোট ১৪ জন রিপাবলিকান সিনেটর হোয়াইট হাউসের সাবধানী বাণী উপেক্ষা করে ভোট দেন। আগামী সপ্তাহে একই প্রস্তাবের ওপর সিনেটে আনুষ্ঠানিক ভোট গ্রহণের কথা।

এটি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও তাঁর প্রশাসনের জন্য একটি বড় ধরনের ধাক্কা। প্রস্তাবটি ইয়েমেন যুদ্ধ প্রসঙ্গে হলেও সিনেটররা মূলত সৌদি সাংবাদিক জামাল খাসোগি হত্যায় সৌদি ক্রাউন প্রিন্স সালমানের সম্ভাব্য ভূমিকার প্রতি তাঁদের বিরাগ প্রকাশে ব্যবহার করেন। জামাল খাসোগির হত্যায় যুবরাজ সালমান জড়িত, সিআইএ এমন সিদ্ধান্ত জানানোর পরেও ট্রাম্প সালমান অথবা সৌদি আরবের বিরুদ্ধে কোনো রকম শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণে অস্বীকার করেছেন। হোয়াইট হাউস থেকে বারবার বলা হয়েছে, সৌদি আরবের সঙ্গে অব্যাহত সহযোগিতা মার্কিন স্বার্থের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ট্রাম্প স্পষ্টভাবে বলেছেন, ‘আমি সৌদি আরবের পাশে রয়েছি।’

গতকালের সিনেট ভোটের মাধ্যমে অন্ততপক্ষে ১৪ জন রিপাবলিকান সিনেটর ট্রাম্পকে সরাসরি জানিয়ে দিলেন, সৌদি আরবের ব্যাপারে অনুসৃত নীতি তাঁরা সমর্থন করেন না। এই প্রস্তাবের ওপর ভোট গ্রহণের আগে রুদ্ধদ্বার এক ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেনারেল ম্যাটিস সিনেটরদের খাসোগি হত্যা বিষয়ে অবহিত করেন। তাঁরা দুজনেই জানান, যুবরাজ সালমান এই হত্যার নির্দেশ দিয়েছেন, এমন কোনো সুনির্দিষ্ট প্রমাণ মেলেনি। তাঁরা দুজনেই ইয়েমেন প্রশ্নে সৌদি আরবের প্রতি মার্কিন সমর্থন প্রত্যাহারের বিরুদ্ধে যুক্তি দেখান এবং এমন কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ থেকে বিরত থাকতে সিনেটরদের প্রতি অনুরোধ জানান।

ভোটের হিসাব থেকে স্পষ্ট, তাঁদের এই অনুরোধ খুব একটা কাজে লাগেনি। ভোট গ্রহণের পর ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে পরিচিত সিনেটর লিন্ডসি গ্রাহাম সাংবাদিকদের জানান, সৌদি প্রশ্নে প্রশাসনের অনুসৃত নীতি তিনি কোনোভাবেই সমর্থন করতে পারছেন না। খাসোগি প্রশ্নে সিআইএর প্রধান জিনা হসপেল এই ব্রিফিংয়ে না আসায় তিনি অত্যন্ত বিরক্ত বলে জানান। ‘সিআইএর কাছ থেকে পুরো বিবরণ না শোনা পর্যন্ত আমি এই শহরের বাইরে যাচ্ছি না,’ তিনি বলেন।

ব্রিফিংয়ে সিআইএর প্রধান কেন আসেননি, এমন এক প্রশ্নের জবাবে পম্পেও জানান, এ ব্যাপারে সব সিদ্ধান্ত হোয়াইট হাউসের। তাঁর উত্তরে অসন্তোষ প্রকাশ করে আরেক রিপাবলিকান সিনেটর কোরি গার্ডেনার বলেন, কাজটি সঠিক হয়নি। খাসোগি প্রশ্নে অনেক প্রশ্নের উত্তর সিআইএর প্রধানের কাছ থেকে পাওয়া যাবে। গার্ডেনার স্বীকার করেন, যুক্তরাষ্ট্রের জন্য সৌদির সঙ্গে নিকট সম্পর্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু সে সম্পর্ক অক্ষুণ্ন রাখতে হলে রিয়াদকে এখনো অনেক প্রশ্নের জবাব দিতে হবে।

বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, গতকালের সিনেট ভোট ট্রাম্প প্রশাসনের জন্য ধাক্কা হলেও তা সামলে ওঠা অসম্ভব হবে না। এই মুহূর্তে সিনেটে রিপাবলিকান সদস্যরা বিভক্ত হলেও প্রতিনিধি পরিষদে ট্রাম্পের পক্ষে সমর্থন অনেক বেশি জোরালো। সেখানে হয়তো এই প্রস্তাব আদৌ আলোচনা ও ভোটের জন্য উত্থাপন করা হবে না। এ পরিস্থিতিতে আগামী সপ্তাহে সিনেটে পুনরায় একই প্রস্তাব আনুষ্ঠানিকভাবে গৃহীত হলেও এর কোনো আইনগত মূল্য থাকবে না।