মানিব্যাগ ফিরে এল, তবে...

পার্সেলের সঙ্গে দেওয়া টড ব্রাউনের চিরকুট। ছবিটি ফেসবুক থেকে নেওয়া
পার্সেলের সঙ্গে দেওয়া টড ব্রাউনের চিরকুট। ছবিটি ফেসবুক থেকে নেওয়া

হান্টার শ্যামেটের মানিব্যাগে ছিল নগদ ৬০ ডলার, ৪০০ ডলারের ব্যাংক চেক, ব্যাংক কার্ড ও তাঁর পরিচয়পত্র। যাচ্ছিলেন বোনের বিয়েতে। কিন্তু দুর্ভাগ্য, তিনি মানিব্যাগটি হারিয়ে ফেলেন। ওয়াশিংটন পোস্টের বরাত দিয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি বলছে, মানিব্যাগ হারানোর সামান্য এই বিষয় অসামান্য গল্পের অবতারণা করেছে। এতে বিষয়টি গণমাধ্যমের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেদনে রূপ নিয়েছে।

প্রতিবেদনে জানানো হয়, ঘটনাটি ঘটেছে চলতি মাসের একেবারে প্রথম দিকে যুক্তরাষ্ট্রের ওমাহায়। পেশায় কাঠমিস্ত্রি হান্টার শ্যামেট তাঁর বোনের বিয়েতে যোগ দেওয়ার জন্য ওমাহা থেকে লাস ভেগাসে গিয়েছিলেন। এই বিমানযাত্রাতেই ঘটে তাঁর মানিব্যাগ হারানোর ঘটনা।

হান্টারের ভাষায়, তিনি মানিব্যাগ হারিয়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েন। বুঝতে পারছিলেন না কী করবেন। কারণ, তাঁর পরিচয়পত্রই তো গেল!

ওয়াশিংটন পোস্টকে হান্টার বলেন, তিনি মা-বাবার কাছ থেকে অর্থ ধার নিয়ে বোনের বিয়েতে অংশ নেন। বিয়ে উপলক্ষে তিনি এক সপ্তাহ কাটান লাস ভেগাসে। এরপর তাঁর গ্রামের বাড়িতে ফেরার পালা। তত দিনে তিনি হারিয়ে যাওয়া মানিব্যাগ ফিরে পাওয়ার আসা একদম ছেড়ে দিয়েছেন। ১১ নভেম্বর তিনি তাঁর বাবা-মায়ের সঙ্গে লাস ভেগাস থেকে তাঁদের গ্রামের বাড়ি সাউথ ডাকোটার ব্রানডোনে চলে যান।

হান্টার শামেটের মা জেনি হান্টার বলেন, ১১ নভেম্বর তাঁরা যখন বাড়ি ফেরার জন্য বিমানবন্দরে পৌঁছান, তখন তাঁদের বেশ ঝামেলা পোহাতে হচ্ছিল। পরিচয়পত্র না থাকায় শামেটকে বিমানবন্দরে ঘণ্টাখানেক জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হতে হয়। শেষ মুহূর্তে এসে শামেট বিমানের ওঠার অনুমতি পান।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়, তিন ঘণ্টার যাত্রা শেষে শামেট তাঁর মা-বাবার সঙ্গে বাড়ি পৌঁছান। এরপরই উদয় হয় হারিয়ে যাওয়া মানিব্যাগ! শ্যামেটের মা জেনি হান্টার বলেন, ‘আমরা যেদিন বাড়ি ফিরি, ওই দিনই আমাদের বাড়িতে একটি পার্সেল আসে, যার ভেতর ছিল শ্যামেটের হারিয়ে যাওয়া মানিব্যাগ।’

শ্যামেট কি শুধু মানিব্যাগই ফেরত পেলেন? না, তিনি এর সঙ্গে বাড়তি ৪০ ডলারও পেয়েছেন। মানিব্যাগটি যিনি পেয়েছিলেন, তিনি শামেটকে বাড়তি ৪০ ডলার উপহার হিসেবে দেন। আর একটি চিরকুটে ওই ব্যক্তি লেখেন, ‘শামেট, এটি আপনার জন্য উপহার। আপনি যে ফ্লাইটে ভেগাস গিয়েছিলেন, ওই ফ্লাইটের ১২ নম্বর সারিতে দেয়াল ঘেঁষে এই ওয়ালেট পড়ে ছিল। উপহারের অর্থ দিয়ে আপনি মজা করুন। আপনার জন্য শুভকামনা।’

শ্যামেটের মা জেনি বলেন, পার্সেল খোলার পর তাঁর ছেলে কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। জানা গেছে, টড ব্রাউন নামের এক ব্যক্তি শ্যামেটের মানিব্যাগটি কুড়িয়ে পেয়েছিলেন। তাঁর বাড়ি ওহামাতে। তবে তিনি গণমাধ্যমে এ নিয়ে কোনো সাক্ষাৎকার দিতে রাজি হননি। টড ব্রাউনকে ধন্যবাদ জানিয়ে ফিরতি চিঠি লিখেছেন শ্যামেট।

শ্যামেট তাঁর চিঠিতে টডের উদ্দেশে লেখেন, ‘স্যার, ধন্যবাদ দিয়ে আপনাকে খাটো করব না। আপনাকে কৃতজ্ঞতা জানানোর ভাষা আমার জানা নেই। আপনি যে উদারতা দেখালেন, তা আমি বা আমার পরিবার কখনো দেখিনি। জীবনে শিক্ষাবৃত্তিসহ অনেক প্রণোদনা পেয়েছি। কিন্তু আপনার এই উদারতা সম্পূর্ণ আলাদা। আমি কখনো ভাবিনি মানিব্যাগ ফিরে পাব—তাও আবার উপহারসহ।’