কর্মকর্তাদের ব্যবহারের ৬০ উড়োজাহাজ বিক্রি করছেন মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট

মেক্সিকোর প্রেসিডেন্টের জন্য কেনা এই ড্রিমলাইনারটি বিক্রি করে দেওয়া হবে। ২০১২ সালে কেনা উড়োজাহাজটির দাম ২১ কোটি ৮০ লাখ মার্কিন ডলার। ছবি: রয়টার্স
মেক্সিকোর প্রেসিডেন্টের জন্য কেনা এই ড্রিমলাইনারটি বিক্রি করে দেওয়া হবে। ২০১২ সালে কেনা উড়োজাহাজটির দাম ২১ কোটি ৮০ লাখ মার্কিন ডলার। ছবি: রয়টার্স

কোনো সরকারি কর্মকর্তার চলাচলের জন্য উড়োজাহাজ রাখছেন না মেক্সিকোর নবনির্বাচিত বামপন্থী প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেস ম্যানুয়েল লোপেজ ওব্রাদর। তিনি জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় সরকারের অধীন থাকা সব উড়োজাহাজ ও হেলিকপ্টার নিলামে তোলা হবে। এর মধ্যে প্রেসিডেন্টের জন্য বরাদ্দ বিলাসবহুল বোয়িং ৭৮৭-৮ উড়োজাহাজও রয়েছে। ব্যয় কমানোর নীতি অনুসরণ করতে গিয়েই এসব সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন তিনি।

লোপেজ ওব্রাদরের নির্বাচনী ওয়াদায় ছিল, ব্যয় কমানো, দুর্নীতির অবসান, সহিংসতা হ্রাস এবং দারিদ্র্য দূরীকরণ। ক্ষমতায় বসে সে পথে হাঁটার ইঙ্গিত দেওয়া শুরু করলেন উড়োজাহাজ বিক্রির ঘোষণা দিয়ে।

আজ সোমবার প্রেসিডেন্টের জন্য ব্যবহৃত উড়োজাহাজটি ক্যালিফোর্নিয়ার ভিক্টরভিল বিমানবন্দরের উদ্দেশে উড্ডয়ন করার কথা। সেখানে কিছু মেরামত শেষে এটিকে নিলামে তোলা হবে। ২০১২ সালে কেনা উড়োজাহাজটির দাম ২১ কোটি ৮০ লাখ মার্কিন ডলার।

মেক্সিকোর প্রেসিডেন্টের ব্যবহারের জন্য কেনা উড়োজাহাজে এমন আধুনিক শৌচাগার আছে। ছবি: রয়টার্স
মেক্সিকোর প্রেসিডেন্টের ব্যবহারের জন্য কেনা উড়োজাহাজে এমন আধুনিক শৌচাগার আছে। ছবি: রয়টার্স

রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, ওব্রাদর গত শনিবার তাঁর প্রথম কর্মদিবস শেষে গত শনিবার জালাপা শহরে এক র‍্যালি শেষে বলেন, ‘জনগণের অর্থে এত দিন দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদেরা যেসব উড়োজাহাজ ও হেলিকপ্টার ব্যবহার করেছেন, সেগুলো সব বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’ তাঁর এ কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে র‍্যালিতে উপস্থিত লোকজন খুশিতে জোরে চিৎকার দিয়ে হাততালি দেন।

লোপেজ ওব্রাদর সরকারি অর্থ ব্যয়ে বিলাসিতার বিপক্ষে। তিনি বলেন, নিজের চলাচলের জন্য বিলাসবহুল উড়োজাহাজের দরকার নেই। বিদেশে যাওয়ার প্রয়োজন হলে তিনি টিকিট কেটেই যেতে পারেন।

মেক্সিকোর অর্থমন্ত্রী কার্লোস উর্জুয়া গতকাল রোববার দেশটির রাজধানী মেক্সিকো সিটিতে বলেন, কেন্দ্রীয় সরকারের অধীন থাকা প্রেসিডেনশিয়াল উড়োজাহাজ ছাড়াও আরও ৬০টি উড়োজাহাজ ও ৭০টি হেলিকপ্টার নিলামে তোলা হবে।

মেক্সিকোর প্রেসিডেন্টের ব্যবহারের জন্য কেনা উড়োজাহাজে আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধাই আছে। ছবি: রয়টার্স
মেক্সিকোর প্রেসিডেন্টের ব্যবহারের জন্য কেনা উড়োজাহাজে আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধাই আছে। ছবি: রয়টার্স

২০১২ সালে প্রেসিডেনশিয়াল উড়োজাহাজটি কেনা হয়। ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজটি ছিল বিলাসবহুল। এর শৌচাগার, বসার ও শোয়ার জন্য বিলাসবহুল কক্ষ রয়েছে। আর এগুলো করতে গিয়ে অর্থের শ্রাদ্ধ করা হয়েছে।

এর আগে নিজের বেতনভাতা ৬০ শতাংশ কমানোর কথা জানিয়েছিলেন বামপন্থী প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেস ম্যানুয়েল লোপেজ ওব্রাদর। ক্ষমতা গ্রহণের পর বেতনভাতা বাবদ ৪০ শতাংশ পরিমাণ অর্থ নেবেন বলে জানান তিনি।

এ বছরের জুলাইয়ে নির্বাচনে বড় ধরনের জয় পায় ওব্রাদরের জোট। ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী হোসে অ্যান্তিনিও মেয়াদিকে হারিয়েছেন ওব্রাদর। গত শতকের বেশির ভাগ সময় রাজনীতিতে কর্তৃত্ব করেছে মেয়াদির দল কনস্টিটিউশনাল রেভল্যুশনারি পার্টি (পিআরআই)। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশটিতে রাজনৈতিক সহিংসতায় ১৩০ জন নিহত হন। তাঁদের মধ্যে অনেক প্রার্থী ও দলের কর্মী ছিলেন। লোপেজ ওব্রাদর তিনবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লড়েছেন। অবশেষে তিনি সোনার হরিণের দেখা পান।

মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেস ম্যানুয়েল লোপেজ ওব্রাদর। ছবি: রয়টার্স
মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেস ম্যানুয়েল লোপেজ ওব্রাদর। ছবি: রয়টার্স

নির্বাচনের পাঁচ মাস পর শনিবার সকালে ৬৫তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে ছয় বছরের জন্য লাতিন আমেরিকার দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ মেক্সিকোর পরিচালনার দায়িত্ব নেন তিনি। নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিতে ওব্রাদর বলেছিলেন, নির্বাচিত হলে মেক্সিকোতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনবেন। দেশে অভিজাততন্ত্রের অবসান ঘটাবেন। গরিবকে চ্যাম্পিয়ন বানাবেন। মেক্সিকোর গত ৯০ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম দ্বিদলীয় বৃত্ত ভেঙে ক্ষমতায় আসে নতুন এক রাজনৈতিক জোট। ঘুরেফিরে যে দুটি দলই ক্ষমতায় থাকছিল, তাঁর ব্যত্যয় ঘটাতে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন ওব্রাদর। গত ৩০ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম কংগ্রেসের দুই কক্ষেই সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে বিজয়ী হয়েছে তাঁর জোট।