যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে অনিশ্চয়তা

দুই দিন আগেও ভাবা হচ্ছিল, আর্জেন্টিনায় জি-২০ বৈঠকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং দুই দেশের ভেতর বাণিজ্যযুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার বদলে তাতে সাময়িক বিরতির যে ঘোষণা দিয়েছিলেন, তাতে বাজার ব্যবস্থায় স্বস্তি আসবে। এসেছিল। কিন্তু ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে অবস্থা বদলে গেল। গতকাল মঙ্গলবার নিউইয়র্কের শেয়ারবাজারে নাটকীয় ধসের পর সন্দেহ জেগেছে, এই চুক্তি আসলে কতটা বাস্তব, কতটা ডোনাল্ড ট্রাম্পের কল্পনা?

গতকাল শেয়ারবাজারের প্রতিটি সূচকে ২ থেকে ৩ শতাংশ পতনের পেছনে চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে অনিশ্চয়তাই প্রধান কারণ—এ কথায় সব বাজার বিশেষজ্ঞ একমত। আর্জেন্টিনায় বৈঠকের পর ট্রাম্প জানিয়েছিলেন, চীনা আমদানির ওপর যে অতিরিক্ত শুল্ক ১ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়ার কথা, আগামী ৯০ দিনের জন্য তা স্থগিত রাখা হচ্ছে। এই সময়ের মধ্যে দুই দেশ বাণিজ্য প্রশ্নে মতৈক্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করবে। ট্রাম্প আরও জানিয়েছিলেন, চীন অবিলম্বে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে অতিরিক্ত কৃষিপণ্য কিনবে এবং যুক্তরাষ্ট্রে নির্মিত গাড়ির ওপর আরোপিত শুল্ক হ্রাস করবে।

কিন্তু সত্যি সত্যি এমন কোনো চুক্তি হয়েছ কি না বা হয়ে থাকলে দুই পক্ষ কোন কোন প্রশ্নে সম্মত হয়েছে, সে ব্যাপারে প্রথম থেকেই সন্দেহের সৃষ্টি হয়। চীন সরকারিভাবে দুই নেতার মধ্যে যে চুক্তির বিবরণ প্রকাশ করে, তাতে ৯০ দিনের সময়সীমার কোনো উল্লেখ নেই। চীন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা গাড়ির ওপর শুল্ক হ্রাস করবে বা যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণে কৃষিপণ্য ক্রয় করবে, তারও কোনো উল্লেখ নেই।

গতকাল সকালে একাধিক টুইটে ট্রাম্প জানান, নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই দুই দেশ তাদের বাণিজ্য আলোচনা শেষ করবে। আর তা যদি না হয়, তাহলে তিনি চীনা আমদানির ওপর তাঁর প্রতিশ্রুত শুল্ক আরোপে দ্বিধা করবেন না। এক টুইটে তিনি নিজেকে ‘ট্যারিফ ম্যান’ হিসেবেও বর্ণনা করেন। বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, শুল্কের ব্যাপারে ট্রাম্পের এই হুমকির পর শেয়ারবাজারে অস্থিরতার শুরু, যার ফলে দিনের শেষে ডাউ ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যাভারেজের ৮০০ পয়েন্টের বেশি পতন ঘটে। এই পতনের তীব্রতা এত ব্যাপক যে কোনো কোনো মহলে অর্থনৈতিক মন্দাবস্থা ফিরে আসছে, এমন কথা বলাও শুরু হয়।

রাজস্বমন্ত্রী স্টিভ মিনুশিন ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক প্রশ্নের জবাবে স্বীকার করেন, বাজারের চলতি অস্থিরতার কারণ চীনের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তির ব্যাপারে অনিশ্চয়তা। তিনি বলেন, ৯০ দিনের মধ্যে এই চুক্তি করা সম্ভব কি না, সে কথা শুধু সময়ই বলতে পারবে। মিনুশিন দাবি করেন, উভয় পক্ষ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট মতৈক্যে পৌঁছেছে। কিন্তু সেসব ক্ষেত্র কী, তিনিও খুব স্পষ্ট করে জানাতে পারেননি। এই বাণিজ্য চুক্তি প্রশ্নে পুরো ব্যাপারটা এতটা ঘোলাটে যে ৯০ দিনের কাঁটা কবে থেকে ঘোরা শুরু হবে, সে প্রশ্নেও অনিশ্চয়তা কাটেনি। প্রথমে হোয়াইট হাউসে এই কাঁটা ১ ডিসেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে বলে জানায়। কিন্তু ট্রাম্পের উপদেষ্টা ল্যারি কাডলো তা আগামী ১ জানুয়ারি বলে জানান। পরে অবশ্য এই তারিখ ১ ডিসেম্বর বলে নিশ্চিত করা হয়।

ট্রাম্প জানিয়েছেন, বাণিজ্য প্রশ্নে রক্ষণশীল ও চীনবিরোধী হিসেবে পরিচিত রবার্ট লাইট হেইজার চীনের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনায় নেতৃত্ব প্রদান করবেন। বাণিজ্যমন্ত্রী উলবার রস বা রাজস্বমন্ত্রী মিনুশিনের সঙ্গে চীনের বাণিজ্য প্রশ্নে লাইট হেইজার মতভেদ রয়েছে। এই নিয়োগ থেকে স্পষ্ট আসন্ন আলাপ-আলোচনায় ট্রাম্প অনমনীয় অবস্থান গ্রহণ করতে যাচ্ছেন।

আর্জেন্টিনায় চীনা নেতার সঙ্গে বৈঠকের পর ট্রাম্প ঘোষণা করেছিলেন দুই পক্ষের মধ্যে ‘অসাধারণ’ এক চুক্তি অর্জিত হয়েছে। অথচ বাস্তবে যে তেমন কিছুই ঘটেনি, সে ছবিটা পরিষ্কার হতেই শেয়ারবাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। ট্রাম্পের নিকট পরামর্শদাতা হিসেবে পরিচিত রবার্ট পিলসবারি ওয়েবসাইট এক্সিওসকে জানিয়েছেন, তিনি এই ভেবে উদ্বিগ্ন যে ৯০ দিনের যে সময়সীমা ট্রাম্প বেঁধে দিয়েছেন, তার ভেতর হয়তো কোনো চুক্তি অর্জন সম্ভব হবে না। সবকিছুই হয়তো ভেঙে পড়তে পারে বলে পিলসবারি সাবধান করে দিয়েছেন।