মৃত নারীর জরায়ুতে প্রথম শিশু

একজন মৃত নারীর জরায়ু অন্য নারীর দেহে প্রতিস্থাপন করার মাধ্যমে এই প্রথম কোনো শিশু জন্ম নিয়েছে। এর আগে জীবিত নারীর দান করা জরায়ু অন্য নারীর দেহে প্রতিস্থাপনে সন্তান জন্ম নিলেও মৃত নারীর জরায়ু থেকে শিশু জন্ম নেওয়ার ঘটনা এটাই প্রথম। এর আগে মৃত নারীর দান করা জরায়ুতে সন্তান জন্ম দেওয়ার চেষ্টা করা হলেও সফলতা পাওয়া যায়নি।

এভাবে প্রতিস্থাপিত জরায়ুতে প্রথমবারের মতো শিশু জন্ম নেওয়ার ঘটনা ঘটেছে ব্রাজিলের সাও পাওলোতে। তবে তাৎক্ষণিকভাবে নয়, প্রায় এক বছর পর সেই শিশুর জন্মের তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।

আজ বুধবার বিবিসি অনলাইনের খবরে বলা হয়, ৩২ বছর বয়সী এক মায়ের জরায়ু প্রতিস্থাপনের পর সুস্থ এক কন্যাসন্তানের জন্ম হয়েছে। ওই মা জরায়ু ছাড়াই জন্ম নিয়েছিলেন। ২০১৬ সালে ব্রাজিলের সাও পাওলোতে ১০ ঘণ্টা অস্ত্রোপচারের পর এক মৃত নারীর জরায়ু ওই মায়ের দেহে প্রতিস্থাপন করা হয়। এরপর দীর্ঘদিন ধরে তাঁর সন্তান গ্রহণের চিকিৎসা চলে।

এর আগে ৩৯টি জরায়ু প্রতিস্থাপনের ঘটনা ঘটেছে। সেগুলো নেওয়া হয়েছিল জীবিত দাতাদের কাছ থেকে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে মা তাঁর মেয়েকে জরায়ু দান করেছিলেন। এভাবে ১১টি শিশু জন্ম নিয়েছে। কিন্তু মৃত নারীর জরায়ু প্রতিস্থাপনের ১০টি ঘটনা ঘটলেও তাতে সফলতা আসেনি। গর্ভে সন্তান এলেও গর্ভপাত ঘটে গেছে। এই প্রথম এই ক্ষেত্রে সফলতা এসেছে।

যে নারীর জরায়ু নেওয়া হয়েছে, তাঁর বয়স ছিল ৪০ বছর। তিন সন্তানের মা ছিলেন তিনি। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণে হঠাৎ তাঁর মৃত্যু হয়।

যে মাকে মৃত নারীর জরায়ু দেওয়া হয়েছে, তাঁর ‘মায়ের-রোকিতানস্কি-কাস্তার-হাউজের সিনড্রোম’ ছিল। প্রতি সাড়ে চার হাজার নারীতে একজন এই সিনড্রোমে আক্রান্ত হন। এর ফলে যৌনাঙ্গ ও জরায়ু পরিপূর্ণভাবে গঠন হয় না।

তবে তাঁর ডিম্বাশয় সুস্থ ছিল। চিকিৎসকেরা তাঁর ডিম্বগুলো সরিয়ে ফেলেন এবং গর্ভধারণে সক্ষম করে একজন পুরুষের শুক্রাণু প্রবেশ করান।

জরায়ু প্রতিস্থাপনের ছয় মাস পর ওই নারীর ঋতুস্রাব হওয়া শুরু হয়। সাত মাস পর তাঁর সেই ডিম্বগুলো স্থাপন করা হয়। এরপর স্বাভাবিক গর্ভধারণের পর সিজারিয়ান সেকশনের মাধ্যমে গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর ওই নারী আড়াই কেজি ওজনের সুস্থ মেয়েশিশু জন্ম দেন।

সাও পাওলোর ডাস ক্লিনিকাস হাসপাতালের চিকিৎসক ডানি ইজেনবার্গ উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বলেন, জীবিত দাতার কাছ থেকে নেওয়া জরায়ু প্রথমবার প্রতিস্থাপনের ঘটনা ছিল মাইলফলক। উপযোগী দাতা পেলে যথাযথ চিকিৎসাসেবার মাধ্যমে সন্তান জন্মদানে অক্ষম অনেক নারীর সন্তান ধারণের সুযোগ সৃষ্টি হবে। তবে প্রয়োজন অনুসারে জীবিত দাতা পাওয়া একটি বড় চ্যালেঞ্জ এ ক্ষেত্রে। সাধারণত, পরিবারের সদস্য বা ঘনিষ্ঠ বন্ধুরা ছাড়া দাতা পাওয়া যায় না।

লন্ডনের ইমপিরিয়াল কলেজের ডা. স্রোডিয়ান সাসোর মতে, মৃত দাতার কাছ থেকে জরায়ু পাওয়া গেলে তুলনামূলকভাবে দাতা বেশি পাওয়ার ক্ষেত্র তৈরি হয়। এতে খরচ কম হবে এবং জীবিত দাতাদের অস্ত্রোপচারজনিত ঝুঁকি কম হবে।