স্কুল বাসে গালি দেওয়ায়...

স্কুল বাসে গালি দেওয়ায় বাবার দেওয়া শাস্তি মাথা পেতে নিয়ে ঠান্ডার মধ্যে আট কিলোমিটার হেঁটে স্কুলে যাচ্ছে ক্রিসটেন। ছবি: ফেসবুক
স্কুল বাসে গালি দেওয়ায় বাবার দেওয়া শাস্তি মাথা পেতে নিয়ে ঠান্ডার মধ্যে আট কিলোমিটার হেঁটে স্কুলে যাচ্ছে ক্রিসটেন। ছবি: ফেসবুক

স্কুল বাসে গালাগাল করায় এক ছাত্রীকে তিন দিনের জন্য ওই বাসে যাতায়াত নিষিদ্ধ করা হয়। এতে খেপে গেলেন ওই ছাত্রীর বাবাও। ১০ বছরের মেয়েটিকে তিনি প্রচণ্ড ঠান্ডার মধ্যে ৮ কিলোমিটার পথ হাঁটিয়ে স্কুলে যেতে বাধ্য করেন। ঠান্ডায় মেয়ের দীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়ার দৃশ্য ভিডিও করে তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করলে তা ভাইরাল হয়ে যায়। শুরু হয় মিশ্র প্রতিক্রিয়া। যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইও অঙ্গরাজ্যের সোয়ানটন শহরে এ ঘটনা ঘটে।

আজ শুক্রবার বিবিসি অনলাইনের খবরে জানানো হয়, ১০ বছরের ক্রিসটেন গালি দেওয়ার কারণে দ্বিতীয়বারের মতো স্কুল ভ্যানে যাতায়াত বন্ধ করা হয়। এ কারণে ক্ষুব্ধ বাবা ম্যাট কক্স মেয়েকে গালি দেওয়া থেকে বিরত রাখতে অভিনব শাস্তি দেওয়ার এই সিদ্ধান্ত নেন। ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস ঠান্ডায় পিঠে স্কুল ব্যাগ নিয়ে ক্রিসটেন হেঁটে যাওয়ার সময় বাবা গাড়ি নিয়ে তাকে অনুসরণ করেন এবং দৃশ্যটি ভিডিও করেন। গত বুধবার ভিডিওটি তিনি ফেসবুকে প্রচার করলে তা দেড় কোটি বার দেখা হয়। হাজার হাজার মন্তব্য আসে। মা–বাবার সন্তান লালনপালনের প্রক্রিয়া নিয়ে শুরু হয় বিতর্ক।

ম্যাট কক্স বলেন, ‘গালি দেওয়া কোনো অবস্থায়ই মেনে নেওয়া যায় না। এটা ছিল তাকে গালি থেকে বিরত রাখার আমার ছোট্ট প্রয়াস।’ তিনি বলেন, ‘আমি জানি, অনেক অভিভাবক আমার এই কাজের সঙ্গে একমত হবেন না। মেয়েকে গালি দেওয়া থেকে বিরত রাখতে, তাকে শেখাতে আমি যা ভালো মনে করেছি তা–ই করেছি।’

ম্যাট কক্স বলেন, মেয়ে তাঁর শিক্ষাকে হৃদয় থেকে নিয়েছে।
ম্যাক অন্য একটি সাক্ষাৎকারে জানান, তিনি ক্রিসটেনসহ আরও দুই সন্তানকে ভিডিওটি এবং লোকজনের মন্তব্য দেখিয়েছেন।

স্থানীয় ডব্লিউটিভিজি নিউজ খবরটি প্রথম প্রচার করে। ক্রিসটেন ওই ডব্লিউটিভিজি নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলে, সে নিজেও গালির শিকার হয়েছে। এখন সে বুঝতে পেরেছে, মানুষের সঙ্গে ভদ্র আচরণ করতে হয়।

ফেসবুকে ৬৩ হাজার মন্তব্যের মধ্যে অনেকেই ম্যাট কক্সের এই শাস্তির প্রশংসা করেন। একজন লিখেছেন, একজন অটিস্টিক ছেলের দাদা হিসেবে তিনি জানেন, তাঁর নাতিকে প্রতিবেশীরা কত বিদ্রূপ করে। অনেক বাবা-মা এসব থামাতে সন্তানদের ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থাই নেন না।
আরেকজন লিখেছেন, এ ধরনের অগ্রহণযোগ্য আচরণের জন্য ছেলেমেয়েদের জবাবদিহি করতে অন্যান্য অভিভাবকেরা এমন উদ্যোগ নেবেন বলে তিনি প্রত্যাশা করেন।

তবে বাবার এমন শাস্তির বিরোধিতা করেও অনেকে মন্তব্য লিখেছেন।
একজন লিখেছেন, শাস্তি পেতে দেখার দৃশ্য ফেসবুকে প্রচার করে শিশুটিকে তিনি অপদস্থ করেছেন।
আরেকজন লিখেছেন, ‘প্রকাশ্যে লজ্জা দেওয়াই যদি আপনার শাস্তি দেওয়ার উপায় হয়ে থাকে, তবে অবাক হব না যদি আপনার সন্তান বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখায়।’

ইউনিভার্সিটি অব ফ্লোরিডার অধ্যাপক, মনোবিজ্ঞানবিষয়ক গবেষক ও তরুণদের গালিগালাজ–বিষয়ক বিশেষজ্ঞ ডরোথি এসপিলেজ বিবিসিকে বলেছেন, গালিগালাজের ব্যাপারে বেশির ভাগ মা–বাবার প্রবণতা হচ্ছে, তাঁরা সন্তানের ভুল স্বীকার করেন না। এদিক দিয়ে বলা যায়, মেয়েটির বাবা তাঁর সন্তানের ভুল স্বীকার করে ঠিক কাজ করেছেন। তবে ঠান্ডার মধ্যে মেয়েকে হাঁটিয়ে না নিয়ে অন্য কিছু করা যেত বলে মনে করেন তিনি।