মামা-ভাগনের প্রথম প্রেম

আত্মীয়তার সম্পর্কে তারা দুজন মামা ভাগনে। ফাহিমের মায়ের চাচাতো ভাই রাকিব। সেই সূত্রে রাকিব ফাহিমের মামা। ফাহিম রাকিবের ভাগনে। হলে কী হয়, সমবয়সী দুজনের মধ্যে ছোটবেলা থেকেই খুব ভাব। হরিহর আত্মা বন্ধু! বাসা এক মহল্লায় হওয়ায় দেখা-সাক্ষাৎ, মেলা-মেশার খুব সুবিধে। দুবেলা দুজনের দেখা হওয়া চাই। একের বাড়িতে অন্যজনের অবারিত দ্বার। আসা-যাওয়া প্রতিদিনই হচ্ছে, তারপরেও বাইরে খেলার মাঠে, মহল্লার পাঠাগারে, কলেজে ওঠার পর থেকে সঙ্গদোষে ধূম্র নেওয়া-ছাড়ার বদভ্যাস রপ্ত করায় টং দোকানের বেঞ্চে, কিংবা মোড়ের অধর কাকুর চায়ের দোকানে (কাকু না থাকলে) আড্ডা, দেখা হওয়া চাই।
শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা। দুই পরিবারের অভিভাবকগণও খুশি।
ফাহিমের খালার ননদের বিয়ে। আত্মীয়তা ছাড়াও পরিবারটির সঙ্গে ফাহিমদের এবং রাকিবদের দুই পরিবারেরই বেশ সখ্য। যাওয়া-আসা, মেলা-মেশা সব সময়ই আছে। আলাপ আলোচনা করে ঠিক করা হয়, যেহেতু দুই মামা-ভাগনে ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষা শেষ করে বসে আছে, হাতে কোনো কাজ নেই, তাই ওরা দুজন দুদিন আগেই বিয়ে বাড়িতে যাবে ওদের সহযোগিতা করার জন্য। আর অন্য সবাই বিয়ের দিন ভোরের ট্রেনে রওনা হবে। দুই বন্ধুর উৎসাহ তুঙ্গে। এই প্রথম তারা দুজন একসঙ্গে দল বা অভিভাবকহীন হয়ে ট্রেনে ভ্রমণ করবে। তাও চাটগাঁ থেকে মীরেশ্বরাই। খুব উত্তেজিত দুজনেই। কোন কোন শার্ট নেবে, কয়টা প্যান্ট নেবে, কার্তিকের শেষ ভাগ, সকাল সন্ধ্যায় ঠান্ডা বাতাস ছাড়ে, শীত শীত লাগে, তাই ট্রাভেল ব্যাগে ব্লেজার ভরবে কিনা? জল্পনা-কল্পনা ভাবনার শেষ নেই। এসবের অতিরিক্ত আরেকটি কাজ করছে তারা। খুব গোপনে। কাউকে কিছু না জানিয়ে। সবচেয়ে সতর্ক তারা পরস্পরের ব্যাপারে, একজনের মনোভাব কিছুতেই অন্যজন যেন টের না পায়! বিষয়টার গোপনীয়তা রক্ষা করা অবশ্য কর্তব্য। ফাঁস হলে লজ্জার অবধি থাকবে না এবং মিশনটিও ভেস্তে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। এমনকি তাদের সেখানে যাওয়াটাও বন্ধ হয়ে যেতে পাবে।
রাকিব ফাহিমদের বাসায় এসেছিল। সঙ্গে তার মা বাবাও এসেছিল। বাড়ি থেকে বেরোনোর আগে দুজনের মা-বাবাই নানা পরামর্শ দেন দুজনকে। দুজনের বাবা ছেলেদের সঙ্গে স্টেশন পর্যন্ত সঙ্গে যান। আবারও আরেক পশলা উপদেশ বর্ষণ, যদিও তারা খুব বিরক্ত হয়। মনে মনে ভাবে তারা যে যথেষ্ট বড় হয়েছে বাবা মা এটাই শুধু কেন বুঝতে চান না?
ট্রেন ছুটে চলেছে। তারাও অস্থির চঞ্চল ছুটছে। কত ঝক্কি করে কয়েক দিন আগে থেকে টিকিট কেটে রেখেছিল, যাতে করে জানালার পাশে মুখোমুখি বসতে পায়। কিন্তু এখন আর সে আসন দুটির কোনো গুরুত্ব তাদের কাছে নেই। দুজনের ছোট দুটি কাঁধে ঝোলানো ব্যাগ। সেটা কাঁধে বহন করেই তারা ছুটে বেড়াচ্ছে সারা ট্রেনময়। জ্বলন্ত সিগারেট ঠোঁটে ধরে স্টাইল করে ধোঁয়া ছাড়ার পুরুষ হয়ে ওঠার প্রয়োজনে আধা ঘণ্টা, এক ঘণ্টা পর পর বুফে কামরায় বসা, চা-কফির অর্ডার দেওয়া, জানালা গলিয়ে দৃষ্টি মেলে ধরে ছুটন্ত দৃশ্য সৌন্দর্য দেখতে দেখতে দুপুরে গন্তব্যে পৌঁছে যাওয়া।
এ পর্যন্ত ঠিক ছিল। আত্মীয় বাড়িতে পৌঁছেও খুব ভালো লেগেছিল। একেতো বিয়ে বাড়ির আনন্দ-উচ্ছ্বাস ভরা উত্তেজনাময় পরিবেশ! তদুপরি বাসার সবাই ওদেরকে খুব উষ্ণতার সঙ্গে রিসিভ করল, যা দুজনেরই খুব ভালো লাগল। গোল বাঁধল যখন রাকিব ও ফাহিম স্ব স্ব ব্যাগ থেকে একে একে সঙ্গে আনা ব্যবহার্য সামগ্রীগুলো বের করতে শুরু করল। দুজনেই আবিষ্কার করল একজন আরেকজনকে টেক্কা দিতে কৌশল করে অপরজনকে লুকিয়ে কিছু বিশেষ জিনিস নিয়ে এসেছে। যেমন রাকিব সান গ্লাস কিনেছে যা ফাহিমকে গোপন করেছে। আবার ফাহিমও নতুন স্নিকার কিনেছে, নতুন শার্ট প্যান্ট করিয়েছে। রাকিব গলায় সোনার চেন ঝুলিয়েছে। ফাহিম আড়চোখে পরখ করে চেনটা নতুন নয়। সে জানতে চায়,
“মামু, সোনার চেন কিনলে কবে? কই, আমাকে তো জানাওনি?” রাকিব থতমত খেয়ে যায়। পরক্ষণেই নিজেকে সামলে নিয়ে পাল্টা আক্রমণের ভঙ্গিতে বলে, “তুমিও তো নতুন স্নিকার কিনেছ, নাইকি, তা ছাড়া নতুন শার্ট প্যান্ট বানিয়েছ, আমাকে বলেছিলে?” দুজনের এই আলগা চটক প্রদর্শন ইচ্ছার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য যে এক, সেটা দুজনের কাছেই প্রকাশ হয়ে পড়েছে। সেটাই এখন দুজনের মেজাজ উত্তপ্ত হয়ে ওঠার কারণ। মেয়েটির নাম লিলি। ফাহিমের খালার জা’র চাচাতো বোন। মামা-ভাগনে দুজনেরই দূর সম্পর্কের আত্মীয়। ফাহিমের খালা-খালুর ছেলে মেয়ে না থাকায় লিলি এ বাড়ি থেকেই পড়াশোনা করে। এবার এসএসসি দেবে। মামা-ভাগনে দুজনেই এ বিষয় পূর্বে সচেতন ছিল বলেই গোপন প্রস্তুতি ছিল লিলির মনোযোগ আকর্ষণের। তারই মহড়া নতুন জামা-প্যান্ট-স্নিকার । তারই সচেতন প্রকাশ নতুন সানগ্লাস।
বিষয়টি পরস্পরের জানা হয়ে গেলে শুরু হয় ঈর্ষার খেলা। খেলাটি চরম রূপ নেয় টেবিলে খাবারের তদারকি করতে গিয়ে ফাহিম আর লিলির চার চোখ দুই চোখে রূপ নেয়। খাবার জোর করে পাতে তুলে দেয়। ফাহিম হাত দিয়ে আটকাতে গেলে লিলির হাতের সঙ্গে অকারণ ধাক্কা খায়। রাকিবের চোখ সবই দেখে। ফাহিম রোমাঞ্চিত। তার চোখ খুশিতে চকচক করে। রাকিব ঈর্ষান্বিত। তার চোখে ক্রোধের আগুন। মুশকিল হলো এই অভিব্যক্তির প্রকাশগুলোও গোপন রাখতে হচ্ছে চেষ্টা করে। বিয়ে বাড়ি। নানা কাজ কাম। সবাই ব্যস্ত। কেউ কেউ ব্যস্ত থাকার চেষ্টায় ব্যস্ত।
তবুও ফাঁকে ফাঁকে বাড়ি ভরা মানুষকে জাদুকরী মন্ত্রে হাওয়ায় মিলিয়ে দিয়ে শুধু দুজন মানুষ বড় নিরিবিলি একাকী দুজন চোখের চাহনিতে। মোহমুগ্ধতায়। তারা দুজন, একজন সদ্য কৈশোর উত্তীর্ণ, অপরজন নবীন যুবা। লিলি ও ফাহিম। দুজনের নিরিবিলি একাকিত্বকে বিরক্তিমাখা মুখে ও রক্তচক্ষু অনুসরণে বিঘ্ন ঘটাতে চায় একজন। সে রাকিব। তারও চোখ যে জোড় বাঁধতে চায় একই রূপসী তন্বীর চোখে! সেও যে তার প্রণয়প্রার্থী। তাদের বয়স এখন একটা ঘুড়ি-লাটাই, কি লাটিম বা মার্বেল নিয়ে বিনে লড়াইয়ে ছেড়ে দেব না সূচ্যগ্র মেদিনী’র পক্ষে নয়। এখন বয়স বিশেষ একজনের চকিত চাহনির অপেক্ষার।
ঘন ঘন দেখা করা, দেখেও আকাঙ্ক্ষা না মেটার এবং তাকে পাওয়ার জন্য প্রয়োজনে ভাইকেও সরিয়ে দেওয়ার ফ্যান্টাসির মধ্যে থাকা। সে ক্ষেত্রে মায়ের চাচাতো ভাই কি বন্ধুকে অস্বীকার করা কোনো ব্যাপারই নয়!
ঈর্ষা জায়গা করে নিয়েছে দুজনের মাঝে। এই ভয়ংকর ঈর্ষার নাম লিলি। দুই বন্ধু মামা-ভাগনে গত চল্লিশ ঘণ্টা ছাব্বিশ মিনিট পরস্পরের সঙ্গে কথা বলা বন্ধ রেখেছে। বিয়ের অনুষ্ঠান শেষ। কনে শ্বশুরবাড়ি চলে গেছে। রাকিব ও ফাহিমের বাবা-মা-ছোট বোন এসেছে। আজ দুপুরের ট্রেনে তারা চট্টগ্রাম ফিরে যাবে। দুই পরিবারই খেয়াল করেছে, দুই বন্ধুর মধ্যে কথা বার্তা হচ্ছে না। দুজন মুখোমুখি হয়ে গেলে কেমন যেন তড়িৎ সরে যাওয়ার প্রবণতা দেখতে পায়। জিজ্ঞেস করলে কেউ কিছু বলেনি। পরিবার দুটি একটু উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে। সকালের নাশতা খাওয়া হয়ে গেলে রাকিব উসখুস করে। একটা সিগারেট ধরানোর জন্য প্রাণ আনচান করে। গত দুদিন একটা সিগারেটও খেতে পারেনি। এবার সে একটা ঝুঁকি নিয়েই ফেলে। বাড়ির বাহির হয়ে সোজা বাস স্ট্যান্ডের মোড়ে গিয়ে চা শেষ করে সিগারেট ধরাতে যাবে, দেখে ফাহিম সামনে দাঁড়িয়ে।
কিছু যেন বলতে চায়! রাকিব তাকে বসতে বলে। ফাহিম বসে। মুখোমুখি দুজন। কিছু সময় নীরব বয়ে যায়। রাকিবই আবার মুখ খোলে, “কি ভাগনে কিছু বলবে মনে হচ্ছে, বলে ফেলো, মনের ভেতরে জমে থাকা জট খুলতে একটু সময় লাগে।’’ ফাহিম আমতা-আমতা করে বলে, “মামা, আমি লিলির প্রেমে পড়েছি। লিলিরও এতে সায় আছে। শুধু তুমি একটু হেল্প কর।” রাকিব একটু সময় বড় বড় চোখ করে ফাহিমের দিকে তাকিয়ে থাকে। তপ্ত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে, তা আমি কী করতে পারি? তুমি তো বলছ লিলিও তোমাকে ভালোবাসে। তাহলে আর সমস্যা কী?” ফাহিম দম নিয়ে আস্তে বলে, “সমস্যা আছে মামা। সমস্যা তুমি। তুমি তোমার আচরণ দিয়ে বেশ বুঝিয়ে দিয়েছ যে তোমারও মন ওদিকে। তুমি লিলিতে আকৃষ্ট। কিন্তু একজনকে তো আমাদের দুজনেরই ভালোবাসা উচিত নয়।
মামা তোমাকে ওর চিন্তা মাথা থেকে সরাতে হবে। আত্মীয়ের মধ্যে ব্যাপার, এসব নিয়ে একটা কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে। আমরা খুব ছোট হয়ে যাব। আমাদের মা-বাবারা লজ্জায় পড়বেন।” ফাহিমের একটানা এই বক্তৃতা শোনার ধৈর্য রাকিবের ছিল না। কথাগুলো তার ক্ষতে নুনের ছিটা ছড়িয়ে যন্ত্রণা বাড়িয়ে তুলেছিল। কিন্তু চেঁচামেচি না করে, ভেঙে পড়া মানুষের কণ্ঠ অনুনয়ের স্বর ঝরাল, “দেখ ফাহিম, লিলিকে আমার অনেক ভালো লেগেছে। আমি ওকে ভালোবেসে ফেলেছি। তুমি বললেই তো আর আমি মন ফেরাতে পারি না। তা ছাড়া তোমার চেহারা সুন্দর। নায়কদের মতো। অনেক মেয়েই তোমার প্রেমে পড়বে। তুমি লিলিকে ভুলে যাও।” ফাহিম গলছে না দেখে সে তার শেষ এবং ক্রূর অস্ত্রে ঘায়েলের চেষ্টা করে। সে বলে ওঠে, “ফাহিম, ধর্মীয়ভাবে এবং সামাজিক আত্মীয়তার জেরে তোমার আর লিলির মধ্যে এ রকম সম্পর্ক হতে পারে না। আমার পারে। তোমাদের এ সম্পর্ক কেউ মেনে নেবে না। আমার ক্ষেত্রে এ বাঁধা নেই। সুতরাং তোমার সরে যাওয়া উচিত।”
কোনো সমঝোতা মীমাংসায় পৌঁছে না তারা। দুজন দুদিকের পথ দিয়ে লিলিদের বাড়ি ফিরে আসে। যার যার ব্যাগ গুছিয়ে নেয়। মা-বাবাদের সঙ্গে চট্টগ্রামের ট্রেনে ফিরে আসে নিজ নিজ বাড়ি। সারা পথ দুজনের একটিও শব্দ বিনিময় হয়নি। দু পক্ষেই মা-বাবা চিন্তিত হয়ে পড়েছেন। মুশকিল হলো, দুজনের কেউই এ বিষয়ে একেবারে মুখে তালা। বাবা-মায়েরা ধরে নিলেন বিয়ে বাড়িতে আসার পর দুই বন্ধুর মধ্যে কোনো বিষয়ে কূট তর্ক, কি ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। সাময়িক বিষয়। পরে রাগ কমলে ঠিক হয়ে যাবে। ঠিক হয়নি। সময়ের প্রলেপ ক্ষত সারাতে পারেনি। বরং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দূরত্ব আরও বেড়েছে দুজনের। শুধু একটি বিষয়ে দুজনে এক জায়গায় ঠায় দাঁড়িয়ে আছে, লিলির প্রতি অনুরাগ। এ বিষয়ে দুজন দুজনের গতিবিধির খবর রাখছে। রাকিব যে মীরেশ্বরাই গিয়ে লিলির সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে ফিরে এসেছে, সে খবর ফাহিমের জানা। রাকিবের ধরাশায়ী হওয়ার সংবাদ ফাহিমকে বিকৃত আনন্দ দেয়। আবার ফাহিমের মীরেশ্বরাই সরকারি মহাবিদ্যালয়ে গিয়ে লিলির সঙ্গে দেখা করার সংবাদও রাকিবের কান পর্যন্ত ঠিকই পৌঁছে যায়। যদিও ফাহিম দুই মিনিট সময় পেয়েছিল মাত্র, তাও কলেজ গেটের সামনে দাঁড়িয়ে। তাতেই রাকিবের অন্তর পোড়ায়। ভেতরটা জ্বলে যায়। তার সে জ্বলুনিতে সে নিজেই দগ্ধ হয়, তার আঁচ ফাহিমের গায়ে একটুও লাগেনি।
গড়াতে গড়াতে সময় অনেক দূর এগিয়ে গেছে। বিয়েবাড়ি থেকে আসার এক বছর হয়ে গেছে। ইতিমধ্যে এইচএসসির রেজাল্ট বেরিয়েছে। ফাহিম চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে, আর রাকিব কুমিল্লা পলিটেকনিকে ভর্তি হয়েছে, সেও প্রায় ছয় মাস। এই এক বছর তাদের পরস্পরের মধ্যে দেখা সাক্ষাৎ হয়নি। কথা বা ফোনালাপই নয়। সামার ভ্যাকেশনে দুই মামা-ভাগনে বাড়ি এসেছে। ফাহিম পারতপক্ষে বাড়িতেই থাকে। একদিন হঠাৎ ফোন কল পেল রাকিবের কাছ থেকে। ফাহিম অবাক হলো, তবে কল রিসিভ করল। রাকিব বলল, “মামা, তুমি কি আজ বিকেলে আমাদের স্কুলের খেলার মাঠে আসতে পারবে? তোমার একটা জিনিস আছে আমার কাছে। তোমাকে দিতাম সেটা।” ফাহিম জিজ্ঞেস করল, “ক’টায় আসব?” “ঠিক সাড়ে পাঁচটায়”, সময় জানিয়ে দেয় রাকিব। বিকেল সাঁডে পাঁচটায় স্কুল মাঠে গিয়ে দেখে রাকিব তার আগেই পৌঁছে গেছে। মুখোমুখি হতেই কোনো কথা না বলে রাকিব তার ডান হাতে ধরা খামটা ফাহিমের দিকে বাড়িয়ে ধরে। মুখে বলে, “এর মধ্যে একটা কার্ড ছিল, সেটা আমার, আমি রেখে দিয়েছি। চিঠিটি তোমার”। ফাহিম খামটা হাতে নেওয়া মাত্র রাকিব অ্যাবাউট টার্ন করে চলে যেতে উদ্যত হতেই ফাহিম তাকে পিছু ডাকে। বলে, “মামা, দাঁড়াও। তোমারও একটা জিনিস আমার কাছে আছে, আমিও সেটা তোমাকে দিয়ে দিতে চাই”। রাকিব ঘুরে দাঁডাতেই ফাহিম হাতে ধরা খামটি বাড়িয়ে ধরে। রাকিব খামটা নিতে যেতেই ফাহিম রাকিবকে অনুসরণ করে বলে, “মামা, এই খামের মধ্যে লিলির বিয়ের নিমন্ত্রণপত্র ছিল। এক ক্যাপ্টেন পাত্রের সঙ্গে লিলির বিয়ের নিমন্ত্রণপত্র, আমি ওটা রেখে দিয়েছি। ওটা আমার ছিল। এর মধ্যে যে চিঠিটি আছে, সেটি তোমার।” খামটা দিয়ে সে ঘুরে দাঁড়িয়ে চলতে শুরু করে।