প্রেসিডেন্টের শিষ্টাচার

অনেক আমেরিকান হয়তো জানেন না, প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ তাঁর পদ থেকে বিদায় নেওয়ার পর নিয়মিত ফোন করতেন তাঁর পূর্বসূরি বিল ক্লিনটনকে। অথচ দায়িত্ব পালনকালে এই বুশ সাহেব কীভাবেই না সমালোচনার তিরে বিদ্ধ করেছেন পূর্বসূরিকে। ক্লিনটন কীভাবে ওভাল অফিসকে নষ্ট করেছেন এ নিয়ে তাঁর অভিযোগের অন্ত ছিল না। অর্থাৎ মার্কিন প্রেসিডেন্টরা সাবেক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে তাঁদের রাজনৈতিক বিদ্বেষ হোয়াইট হাউসের ডাস্টবিনে ফেলে দিয়ে আসেন। এটাই শিষ্টাচার, এটাই ভদ্রতা, সৌজন্যতা, যা দীর্ঘদিন ধরে আমেরিকার সর্বোচ্চ রাজনৈতিক জগতে অনুসৃত হয়ে আসছে।
নভেম্বরের নির্বাচনে আমেরিকানরা যখন কাউকে তাঁদের নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে বেছে নেন, তিনি সঙ্গে সঙ্গে সে দেশের প্রেসিডেন্ট ক্লাবের সদস্য হয়ে যান। এই ক্লাব শুধু দেশের নয়, বিশ্বের মধ্যে অন্যতম এলিট ক্লাব। এই ক্লাবের সদস্যরা নিয়মিত দেখা-সাক্ষাৎ করেন না, কিন্তু কথাবার্তা, ভাবের আদানপ্রদান চলতে থাকে। কোনো উপলক্ষ পেলে বর্তমান ও সাবেক প্রেসিডেন্টদের দেখা হয়, সেখানে তাঁদের আলাপে রাজনৈতিক পরিচয়ের কালো ছায়া কখনো পড়ে না। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ছাড়া এই ক্লাবের অন্য চার সদস্য হলেন বারাক ওবামা, জর্জ ডব্লিউ বুশ, বিল ক্লিনটন ও জিমি কার্টার।
এত কথা বলার হয়তো প্রয়োজন পড়ত না যদি না আমেরিকার জনগণ ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো একজনকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করতেন, যিনি নিয়ম মানার চেয়ে ভাঙতে বেশি পছন্দ করেন। যিনি সৌজন্যতা, ভদ্রতাকে তোয়াক্কা করেন না। না হলে প্রয়াত মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ এইচ ডব্লিউ বুশের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠানে কেন তিনি তাঁর পূর্বসূরিদের অবজ্ঞা করবেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অনুষ্ঠানে ঢুকে শুধু বারাক ওবামার সঙ্গে হাত মেলান, কিন্তু তাঁর পাশে বসা মিশেল ওবামা বা একটু অদূরে বসে থাকা বিল ক্লিনটন-হিলারি ক্লিনটন ও জিমি কার্টারের দিকে ভ্রুক্ষেপ পর্যন্ত করলেন না। কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্টের কাছে এই আচরণ অকল্পনীয়।
ওভাল অফিসে বসে বিভক্তির রাজনীতির পথপ্রদর্শক হিসেবে ট্রাম্প তাঁর পূর্বসূরিদের তীব্র সমালোচনার মুখোমুখি হয়েছিলেন। এই সমালোচনা তিনি ভুলতে পারেননি। অর্থাৎ সমালোচনাকে মেনে নেওয়ার গণতান্ত্রিক সহশীলতা থেকে অনেক দূরে তিনি। আর এখান থেকে নিজেকে শোধরানো বোধহয় তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়। যদিও প্রয়াত বুশের স্ত্রী বারবারা বুশ নিজের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছিলেন। নারীদের সম্পর্কে, সামরিক বাহিনী ট্রাম্পের হীন মন্তব্যের কারণে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন বারবারা। ট্রাম্প আসতেও পারেননি বুশ পরিবারের সেই অনুষ্ঠানে। কিন্তু প্রেসিডেন্ট বুশ সিদ্ধান্ত পাল্টে ওভাল অফিসের হর্তাকর্তাকে আমন্ত্রণ জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তাই ট্রাম্প সপরিবারে সাবেক প্রেসিডেন্টের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পেরেছেন। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আচরণে মনে করার যথেষ্ট কারণ আছে যে বারবারা ঠিকই ছিলেন।