ডোনাল্ড ট্রাম্প বাঁচিবে কেমনে?

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স

রাশিয়া সঙ্গে আঁতাত নিয়ে তদন্তরত বিশেষ কৌঁসুলি রবার্ট ম্যুলার আদালতের কাছে প্রদত্ত তাঁর সর্বশেষ নথিতে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নির্বাচনী আইন ভঙ্গের অভিযোগে অভিযুক্ত করেছেন। এতে ট্রাম্পের পরিচয় ‘ইনডিভিজুয়্যাল ওয়ান’, সহজ কথায়, প্রথম আসামি। এতে সুনির্দিষ্টভাবে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের ব্যক্তিগত আইনজীবী মাইকেল কোহেন তাঁর নির্দেশে নির্বাচনী আইন ভঙ্গ করে পর্নো তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলস ও প্লেবয় মডেল ল্যারেন ম্যাকডুগালকে অর্থ ধরিয়ে দিয়েছিলেন। উদ্দেশ্য ছিল নির্বাচনের আগে তাঁদের মুখ বন্ধ রাখা।


এত দিন শুধু মুখে মুখে বলা হচ্ছিল ট্রাম্প আইন ভঙ্গ করেছেন। এবার ট্রাম্পের নিজের বিচার বিভাগ তাদের নথিতে ট্রাম্পকে কার্যত একজন ‘অপরাধী’ হিসেবে চিহ্নিত করল। যদি ম্যুলারের চূড়ান্ত প্রতিবেদনে এই একই অভিযোগ উল্লেখিত হয় অথবা ম্যুলার এই অভিযোগ আদালতে উত্থাপন করেন, তাহলে আগামী কংগ্রেসে অভিশংসনের বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়া ডেমোক্র্যাটদের পক্ষে অসম্ভব হবে।

ট্রাম্প নিজেকে সব দোষের ঊর্ধ্বে বলে নিজেই রায় দিয়েছেন, তবে অধিকাংশ আইনজীবীরা বলছেন ভিন্ন কথা। ডেমোক্রেটিক কংগ্রেস সদস্যরা, যাঁরা আগামী মাস থেকে প্রতিনিধি পরিষদের নিয়ন্ত্রণভার গ্রহণ করবেন, তাঁদের অভিমতও ভিন্ন। জ্যারেড নেডলার, যিনি আগামী কংগ্রেসে বিচার বিভাগীয় কমিটির নেতৃত্ব দেবেন, তিনি জানিয়ে দিয়েছেন, বিষয়টি তদন্তের বিবেচনা তাঁর রয়েছে। তাঁর কথায়, এত দিন ম্যুলার তদন্তের লক্ষ্যবস্তু ছিল রাশিয়ার সঙ্গে আঁতাত ও বিচারপ্রক্রিয়ায় বাধা। কিন্তু এখন ম্যুলারের উত্থাপিত সর্বশেষ নথি থেকে স্পষ্ট এই তদন্তের আসল লক্ষ্য কীভাবে ট্রাম্প ও তাঁর সহযোগীরা ২০১৬ সালের নির্বাচনকে অর্থের বিনিময়ের কেনার চেষ্টা করেন। ন্যাডলারের কথায়, ‘এই প্রেসিডেন্ট আমেরিকার জনগণের বিরুদ্ধে এক বিশাল জালিয়াতি চক্রান্তের একদম কেন্দ্রে ছিলেন।’

ট্রাম্প যে নির্বাচনী আইন ভঙ্গ করেছেন, ট্রাম্পের আইনজীবীরা সে কথা মানতে রাজি নন। রুডি জুলিয়ানি বলেছেন, ট্রাম্প যে অর্থ দুই নারীকে দিয়েছেন, তা কোনোভাবেই নির্বাচনী উদ্দেশে করা হয়নি। কোনো দায়িত্বসম্পন্ন সরকারি কৌঁসুলি এমন অভিযোগ তুলতে রাজি হবেন না। জুলিয়ানির তুলনায় কম অনুগত রিপাবলিকানদের কিছুটা ভিন্নমত রয়েছে। সিনেটর র‍্যান্ড পল বলেছেন, এটা এমন বড় কোনো আইনভঙ্গ নয়। একে যদি নির্বাচনী আইন ভঙ্গ বলা হয়, তাহলে এমন অভিযোগ আরও অনেকের বিরুদ্ধে উঠতে পারে। দেখা যাবে, ঠগ বাছতে গাঁ উজাড় হওয়ার জোগাড়। প্রায় একই কথা বলেছেন সিনেটর মার্কো রুবিও।

শুধু নির্বাচনী আইন ভঙ্গ নয়, ট্রাম্পের জন্য অন্য বিপদও অপেক্ষা করছে। নতুন যে নথি ম্যুলার আদালতে উপস্থিত করেছেন, তাতে রাশিয়ার সঙ্গে তাঁর ব্যবসায়িক সম্পর্কের ব্যাপারটিও উঠে এসেছে। মস্কোতে তিনি রুশ অর্থানুকূল্যে একটি হোটেল বানানোর তালে ছিলেন। নির্বাচনী প্রচারণার সময় তিনি সে কথা চেপে যান। কারণ, তাঁর বিশ্বাস ছিল, তিনি জিতবেন না, কিন্তু প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিসেবে রুশেদের কাছে তাঁর গুরুত্ব বাড়বে। কোহেন জানিয়েছেন, রুশ প্রেসিডেন্টের আনুকূল্য লাভের চেষ্টায় তাঁকে ৫০ মিলিয়ন ডলারের একটি ফ্ল্যাট দেওয়ার কথাও বিবেচনায় এসেছিল। কোহেন এ কথাও বলেছেন, ট্রাম্পকে রাজনৈতিক ও আর্থিকভাবে সুবিধে পাইয়ে দিয়ে সাহায্য করবে, এমন প্রতিশ্রুতি তিনি মস্কোর কাছ থেকে পেয়েছিলেন।

একটা কথা পরিষ্কার। একাধিক অপরাধে অপরাধী হলেও প্রেসিডেন্ট থাকাকালে ট্রাম্পকে অভিযুক্ত করা যাবে না, ম্যুলারের সে ক্ষমতা নেই। তদন্ত শেষে তিনি একটি প্রতিবেদন প্রস্তুত করবেন, যা বিচার বিভাগের কাছে পাঠানো হবে। সে প্রতিবেদনের ভিত্তিতে আগামী কংগ্রেস ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিশংসনের ব্যবস্থা করতে পারে। অভিশংসনের প্রস্তাব প্রতিনিধি পরিষদে গৃহীত হলেও কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ বা সিনেটে তা গৃহীত হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। সেখানে রিপাবলিকানদের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ।

তাহলে অপরাধ করেও কি আইনের ফাঁস এড়িয়ে যাবেন ট্রাম্প? এই প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন ডেমোক্রেটিক কংগ্রেসম্যান অ্যাডাম শিফ। আগামী কংগ্রেসে গোয়েন্দা কমিটির নেতৃত্ব দেবেন তিনি। গতকাল রোববার এক টিভি অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, ঠিক আছে, ক্ষমতা থাকাকালে ট্রাম্পকে হয়তো আটকানো যাবে না। কিন্তু যেদিন তিনি ক্ষমতা হারাবেন, ঠিক তার পরের দিনই বিচার বিভাগ তাঁকে আইনভঙ্গের অভিযোগে অভিযুক্ত করবে।

পরে এক টুইটে অ্যাডাম শিফ লেখেন, ‘আমি বলছি, ট্রাম্প জেলে যাবেন, তার স্পষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। দীর্ঘ সময়ের মধ্যে ট্রাম্পই সম্ভবত হবেন প্রথম প্রেসিডেন্ট, যাঁকে জেলের ঘানি টানতে হবে।’