সব দোষ উকিলের: ট্রাম্প

ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স
ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স

নিউইয়র্কের একটি ফেডারেল আদালত বুধবার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সাবেক ব্যক্তিগত আইনজীবী মাইকেল কোহেনকে তিন বছরের জন্য কারাবাসের নির্দেশ দিয়েছেন। কোহেন আদালতকে জানিয়েছিলেন, ট্রাম্পের নোংরা কাজ ঢাকতেই তাঁকে মিথ্যা বলতে হয়েছে। রায়ের খবর শোনার পর পুরো ২৪ ঘণ্টা ট্রাম্প চুপচাপ ছিলেন। একটিও টুইট করেননি। কিন্তু বৃহস্পতিবার সব বদলে গেল।

সকাল থেকেই তিনি টুইট শুরু করেন। এতেও তাঁর মন না ভরলে তিনি অতি প্রিয় টিভি চ্যানেল ফক্স নিউজে লম্বা সাক্ষাৎকার দেন।

ট্রাম্পের কথা, ‘আমার কোনো অপরাধ নেই। আমি কোহেনকে কোনো অপরাধ করতে বলিনি। সে আমার আইনজীবী। কী করতে হয় বা না-হয়, তা তাঁর জানার কথা। এ জন্যই তো তাঁকে আমি কাঁড়ি কাঁড়ি অর্থ দিয়েছি।’

একই সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প দাবি করেন, ‘যদি বেআইনি কিছু হয়েই থাকে, তো তার জন্য ফৌজদারি মামলা নয়, বড়জোর দেওয়ানি মামলা হতে পারে।’

সমস্যা হলো, কোহেন জানিয়েছেন, পর্নো তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলস বা প্লে বয় মডেল ক্যারেন ম্যাকডুগালকে মুখ বন্ধ রাখার জন্য উৎকোচের নির্দেশ ট্রাম্প নিজে দিয়েছেন। এ ব্যাপারে ট্রাম্প ও কোহেনের একটি টেলিফোন রেকর্ডিং তাঁর (কোহেন) বাড়িতে হানা দিয়ে আগেই উদ্ধার করেছিলেন তদন্তকারীরা।

বড় বিপদ হলো, ন্যাশনাল ইনকোয়্যারার নামের যে ট্যাবলয়েড পত্রিকা ক্যারেন ম্যাকডুগাল ও ট্রাম্পের প্রেমের কাহিনি প্রথম জানতে পারে, তারা সে খবর পত্রিকায় না ছেপে তাঁকে ১ লাখ ৫০ হাজার ডলার দিয়ে মুখ বন্ধ রাখার ব্যবস্থা করে।

পত্রিকাটির প্রকাশক ও ট্রাম্পের দীর্ঘদিনের বন্ধু ডেভিড পেকার তদন্ত কর্মকর্তাদের কাছে স্বীকার করেছেন, এ ব্যাপারে কোহেন ও তিনি যে কথাবার্তা বলেছেন, সেখানে ট্রাম্প নিজে উপস্থিত ছিলেন। পেকার জানিয়েছেন, ট্রাম্পের নির্বাচনে কোনো ক্ষতিকর প্রভাব এড়াতেই এই উৎকোচের ব্যবস্থা করা হয়।

সাবেক ফেডারেল অ্যাটর্নি বারবারা ম্যাককুয়েড ‘পলিটিকো’কে জানিয়েছেন, এখন পরিষ্কার যে একা কোহেন নন, ডেভিড পেকার ও তাঁর কোম্পানির লোকজনেরাও এই অর্থ চালাচালির খবর ম্যুলারকে দিচ্ছেন। ঘটনা সত্যি হলে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে নির্বাচনী আইন ভঙ্গ ও ষড়যন্ত্রের অভিযোগ উঠতে পারে।

বিপদ এখানেই শেষ নয়, পেকার রাশিয়া আঁতাত প্রশ্নে তদন্তকারী বিশেষ কৌঁসুলি রবার্ট ম্যুলারের সঙ্গে তদন্তকাজে সহযোগিতার এক চুক্তি করেছেন। চুক্তি অনুসারে তিনি যা জানেন, সব বলবেন। বিনিময়ে ম্যুলার তাঁর বিরুদ্ধে আইন ভঙ্গের কোনো অভিযোগ উত্থাপন করবেন না।

বেশির ভাগ ভাষ্যকার একমত, ট্রাম্পের ‘কুকর্মের সারথি’ হিসেবে কোহেন যা কিছু জানেন, পেকার তার চেয়ে কম কিছু জানেন না। তিনি ম্যুলারকে আরও কী কথা শোনাবেন, তা কেউ জানে না। তবে সবাই আন্দাজ করতে পারেন।

একজন ভাষ্যকার মন্তব্য করেছেন, কোহেন থেকে পেকার—তার মানে হলো ট্রাম্প কড়াই থেকে আগুনে পড়লেন।

বৃহস্পতিবার অবশ্য ট্রাম্পের জন্য আরও দুঃসংবাদ অপেক্ষা করছিল। ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল পত্রিকা জানিয়েছে, গত বছর জানুয়ারিতে তাঁর অভিষেকের জন্য ট্রাম্প ক্যাম্পেইনে ১০০ মিলিয়ন ডলারের অধিক চাঁদা সংগ্রহ করে। এই অর্থের মাত্র অর্ধেকের হিসাবে মিলেছে। বাকি অর্ধেকের কোনো খবর নেই।

নিউইয়র্কের যে ফেডারেল আদালত কোহেনকে জেলে পাঠান, তাঁরা ব্যাপারটি তলিয়ে দেখছেন। ফেডারেল তদন্তকারীদের জানার প্রধান বিষয়—যাঁরা এই চাঁদা দিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে কোনো বিদেশি রয়েছেন কি না। অথবা অর্থের বিনিময়ে ব্যবসায়িক বা রাজনৈতিক সুবিধা গ্রহণের কোনো ব্যবস্থা করা হয়েছে কি না।