বাংলাদেশি নাজমার খুনির সর্বোচ্চ শাস্তি

নিউইয়র্কে বাংলাদেশি নাজমা খানমের ঘাতকের ২৫ বছর থেকে যাবজ্জীবনের কারাদণ্ড হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে খুনি ইয়োনাথান গালভেজ মারিন (২৫) প্যারোলেও মুক্তি পাবে না ।
১১ ডিসেম্বর কুইন্সের আদালতে বিচারক মাইকেল বি আলোয়েস নাজমা বেগম হত্যাকাণ্ডের মামলার রায় ঘোষণার পর স্বজনরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। ঘাতকের সর্বোচ্চ শাস্তি হওয়ায় পরিবারের পক্ষ থেকে সন্তুষ্টি জানিয়ে বলা হয়েছে, স্বজন হারানোর বেদনা আমরা বয়ে বেড়াব-তবে বিচার হয়েছে। ঘাতক তাঁর অপরাধের সমুচিত শাস্তি পেয়েছে। 

২০১৬ সালের ৩১ আগস্ট স্থানীয় সময় রাত সোয়া ৯টায় নিউইয়র্ক সিটির কুইন্সে জ্যামাইকা হিলস এলাকায় এ হত্যাকাণ্ড ঘটে। নিজ বাসার দুই ব্লকের মধ্যে ১৬০-১২ নরমাল রোডে নাজমা খানমকে হত্যা করা হয়। কর্মস্থল থেকে বাসায় ফেরার সময় নাজমা আক্রান্ত হন। ১০০ গজ পেছনেই হাঁটছিলেন তাঁর স্বামী। ‘আমাকে মেরে ফেলল, বাঁচাও বাঁচাও’ নাজমা খানমের এমন আর্তচিৎকারে স্বামী দৌড়ে কাছে আসার আগেই দুর্বৃত্ত পালিয়ে যায়। তাঁর স্বামী ভেবেছিলেন, তার স্ত্রী হয়তো ছিনতাইকারীর কবলে পড়েছে। কিন্তু কাছে এসে দেখতে পান, বুক থেকে রক্ত গড়াচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে ফোন করেন পুলিশকে। দ্রুত অ্যাম্বুলেন্সসহ পুলিশ এসে নাজমাকে কাছের জ্যামাইকা হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়ার পর চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। তাঁর বুকে ছুরিকাঘাত করা হয় বলে চিকিৎসকেরা উল্লেখ করেন। নিউইয়র্ক মুসলিম পুলিশ অফিসার অ্যাসোসিয়েশনের মোহাম্মদ হুমায়ুন কবিরের খালা নাজমা খানমের ঘাতকের সন্ধানে পুলিশ দ্রুত মাঠে নামে। ঘটনার তিন দিন পর জ্যামাইকা এলাকা থেকেই ঘাতক গালভেজ মারিনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়।
তিন সন্তানের জননী নাজমা খানমের (৬০) বাড়ি শরীয়তপুর সদর উপজেলার আটিপাড়া গ্রামে। তিনি স্বামী শামছুল আলম ও এক সন্তান নিয়ে নিউইয়র্কে থাকতেন। ২০০৯ সালে ডিভি লটারিতে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার আগে তিনি শরীয়তপুর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। আর তাঁর স্বামী মোহাম্মদ শামসুল আলম খান ছিলেন শরীয়তপুর সরকারি কলেজের রসায়ন বিভাগের শিক্ষক।
নাজমা বেগমের হত্যাকাণ্ডের পর কমিউনিটিতে ভয়ভীতি এবং ক্ষোভ বিরাজ করছিল। প্রবাসীরা এ হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে সভা সমাবেশ করেছেন। নিহত নাজমা বেগমের স্বজন ও কমিউনিটির লোকজন ১১ ডিসেম্বর সকাল থেকে এ নারকীয় হত্যা মামলার রায় দেখার অপেক্ষায় ছিলেন।
বিচারর ঘাতকের দণ্ড ঘোষণার পর পরিবারের পক্ষ থেকে এনওয়াইপিডি কর্মকর্তা হুয়ায়ুন কবির সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে নিহত নাজমা খানমের আত্মার মাগফেরাতের জন্য সবার দোয়া কামনা করেছেন।
মামলার রায় ঘোষণার পর কুইন্সের ডিসট্রিক্ট অ্যাটর্নি রিচার্ড ব্রাউন বলেছেন, নিজের বাড়ির কাছে নাজমা বেগম নিহত হয়েছেন এক কাপুরুষ অপরাধীর হাতে। এখন এ অপরাধীর বাকিটা জীবন কারাগারে থাকতে হবে; যাতে সমাজের অন্য মানুষেরা নিরাপদে থাকে। এক সপ্তাহের জুরি ট্রায়ালের পর ঘোষিত রায়ের পর রিচার্ড ব্রাউন বলেন, ঘাতক ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে ছুরি দিয়ে হামলা চালায় পথচারী নাজমা খানমকে। ঘাতক ইয়োনাথান গালভেজ মারিনের বিরুদ্ধে সেকেন্ড ডিগ্রি মার্ডার, ছিনতাই ও অপরাধমূলক অস্ত্র বহনের অভিযোগ আনা হয়েছিল। প্রতিটি অপরাধের জন্য তার সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়া হয়েছে।
অ্যাসিস্ট্যান্ট সিনিয়র ডিসট্রিক্ট অ্যাটর্নি রিচেল ই বুচটার মামলাটির প্রসিকিউশন করেছেন। এর তত্ত্বাবধানে ছিলেন অপরাধ বিভাগের ডেপুটি এক্সিকিউটিভ অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিসট্রিক্ট অ্যাটর্নি ব্র্যাড এ লেভেন্থল এবং ড্যানিয়েল সানডার্স। মামলাটি কুইন্স সুপ্রিম কোর্টের বিচারক মাইকেল বি আলোয়েসের আদালতে পরিচালিত হয়।