সব্যসাচী কানাডীয় লেখক জর্জ বাওয়ারিং

জর্জ বাওয়ারিং
জর্জ বাওয়ারিং

একই সঙ্গে কবিতা ও কথাসাহিত্যের জন্য গভর্নর জেনারেল পুরস্কার পেয়েছেন এমন সাহিত্যিক কানাডায় হাতে গোনা মাত্র তিনজন। মাইকেল ওনডাডজি ও মার্গারেট অ্যাটউড ছাড়া তৃতীয়জন হলেন জর্জ বাওয়ারিং (জন্ম ১৯৩৫)। শতাধিক গ্রন্থের লেখক জর্জ হলেন নতুন শতাব্দীর শুরুতে কানাডায় পার্লামেন্টারি পোয়েট লরিয়েট পদে অভিষিক্ত প্রথম কবি।
ভ্যাঙ্কুভারের কবি জর্জ প্রথমবার গভর্নর জেনারেল সাহিত্য পুরস্কার পান ১৯৬৯ সালে। যে দুটি কাব্যগ্রন্থের জন্য সেবার তিনি পুরস্কারটি পান সেগুলো হলো ‘রকি মাউন্টেইন ফুট’ এবং ‘দ্য গ্যাংস অব কসমস’। দুটি বইয়েরই প্রকাশকাল ১৯৬৯। যদিও তার আগেই প্রকাশিত হয়েছিল তাঁর আরও চারটি কাব্যগ্রন্থ। কাব্যযাত্রা শুরু হয়েছিল ১৯৬৩ সালে ‘স্টিকস অ্যান্ড স্টোনস’ দিয়ে। যদিও কবিতাগুলোর সবই রচিত হয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালে। শুরুর বছরগুলোতে কবিতা নিয়ে থাকলেও জর্জের কলমে কথাসাহিত্য আসতে বিশেষ দেরি হয়নি। ১৯৬৭ সালেই প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম উপন্যাস ‘মিরর অন দ্য ফ্লোর’। এই উপন্যাস প্রকাশ হয় লেখকের ৩২ বছর বয়সে। কিন্তু ‘রাইটিং দ্য ওকানাগান’ বইয়ে ‘ডেলসিং’ উপন্যাসের ভূমিকায় লেখক জানিয়ে দেন, ‘মিরর অন দ্য ফ্লোর’ ছিল তাঁর দ্বিতীয় উপন্যাস। প্রথমটি ছিল ‘ডেলসিং’ স্নাতক শ্রেণিতে পড়ার সময় তিনি সেটি রচনা করেন। টাইপস্ক্রিপ্টে ৫৫০ পৃষ্ঠার হয়েছিল সেটি। এরপর স্নাতকোত্তর শ্রেণিতে পড়ার সময় তিনি রচনা করেন ‘মিরর অন দ্য ফ্লোর’। যদিও দ্বিতীয় উপন্যাসটি আসতে পার হয়ে গিয়েছিল ঠিক এক দশক। ১৯৮০ সালে প্রকাশিত তৃতীয় উপন্যাস ‘বার্নিং ওয়াটার’ কবি জর্জ বাওয়ারিংকে বহু প্রত্যাশিত ওই পুরস্কারটি এনে দেয় দ্বিতীয়বারের জন্য। তত দিনে জর্জের কাব্যগ্রন্থের সংখ্যা এক ডজন ছাড়িয়ে গেছে।
সত্তরের দশকের শুরুতে কবি জর্জ আরও একটি ধারায় হাত পাকাতে শুরু করলেন। লিখতে শুরু করলেন জীবনকথা। ১৯৭২ সালে প্রকাশিত হলো ‘অটোবায়োলজি’। অসাধারণ সুখপাঠ্য সে বইয়ের ধারাবাহিকতাতেই ২০০১ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর আরেকটি জীবনকথা ‘আ ম্যাগপাই লাইফ: গ্রোইং আ রাইটার’। ২০১২ আত্মজীবনীমূলক আরও যে একটি গ্রন্থ জর্জ প্রকাশ করেন সেটি হলো ‘পিন বয়: আ মেময়ের’। ‘পিনবয়’তে জর্জ তুলে ধরলেন তাঁর কৈশোরকালকে। পনেরো বছরের কিশোরের বিশ্বটাকে উন্মোচন করা হলো পৌনে তিন শ পৃষ্ঠাজুড়ে। ২০১৫ সালে, অর্থাৎ ৮০ বছর বয়সে নিজের চল্লিশটি বই থেকে সেরা রচনাগুলোকে সংকলন করে প্রকাশ করা হয় ‘রাইটিং দ্য ওকানাগান’ শিরোনামে। বলে রাখা যেতে পারে, ওকানাগান হলো ভ্যাঙ্কুভারে জর্জের জন্ম গ্রামের অঞ্চলটির নাম।
‘রাইটিং দ্য ওকানাগান’ গ্রন্থের ‘অটোবায়োলজি’ অংশে এক পৃষ্ঠার একটি ছোট্ট ভূমিকা আছে। জর্জ লিখেছেন, ‘অটোবায়োলজি’ তাঁর জন্য একটি উল্লেখযোগ্য প্রস্থান ছিল। ভাষার ওপর জোর দেওয়ার ব্যাপারটি এই গ্রন্থ থেকে জর্জের শুরু হয়েছিল। কোনো কোনো সমালোচক মনে করেন ‘অটোবায়োলজি’তে জর্জ আসলে কাহিনিগদ্যের একটি আলাদা ধরনকে আবিষ্কার করে ফেলেন এবং সেই ধরনটি পরবর্তীকালে তাঁর কথাসাহিত্য এবং জীবন সাহিত্য উভয় ধারাতেই বহুলভাবে আমরা পেয়ে থাকি। পাঠকের কাছে জর্জের জনপ্রিয়তার কারণগুলোর অন্যতমটিও তাঁর এই ভাষা-ভঙ্গিমার মধ্যে নিহিত। জর্জ তাঁর গদ্যকে জটিল করেননি, যদিও তাঁর গদ্য প্রচলিত গদ্যের অনেক বাইরের। তিনি যেন সব সময়ই একটি নিজস্ব গদ্যধারা এবং আঙ্গিক আবিষ্কারের মধ্যে নিমগ্ন ছিলেন। আঙ্গিক বৈচিত্র্যের প্রশ্নে জর্জ বাওয়ারিংয়ের আত্মজীবনীমূলক পরবর্তী বইয়ের প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধ করা যেতে পারে।
জীবনকথা যে কাব্য হয়ে উঠতে পারে, সে কাব্যকথায় যে উপন্যাসের বীজ লুকিয়ে থাকতে পারে, সে উপন্যাসের পরতে পরতে যে কানাডার ইতিহাস প্রথিত থাকতে পারে, এর বোধ করি শ্রেষ্ঠ উদাহরণ জর্জ বাওয়ারিংয়ের জীবনকথাগুলো, যেটির চূড়ান্ত প্রকাশ ঘটেছে ‘পিনবয়—আ মেময়ের’-এ। জীবনের টুকরো টুকরো লেখাকে যে কীভাবে মূল্যবান করে তোলা যায়, সেটির জ্বলন্ত উদাহরণ জর্জ। বিপুল পরিমাণে লিখেছেন, আবার সব লেখাকেই মূল্যবান করে উপস্থাপন করেছেন। ২০১১ সালে জর্জের লেখা ছোট্ট বই ‘হাউ আই রাইট সারটেইন অব মাই বুকস’ পড়লে এটি স্পষ্ট হয়। মোট ছাব্বিশটি ছোট ছোট রচনার সমন্বয়ে নিজের ছাব্বিশটি বই রচনার পেছনের কথা তুলে এনেছেন জর্জ। আবার ধরা যাক, ২০০৫ সালে প্রকাশিত ‘লেফট হুক’-এর কথা। ব্যক্তি-কথার ভেতর দিয়ে সাহিত্য সমালোচনার অনন্য এক যুগলবন্দী ঘটিয়েছেন জর্জ। সঙ্গে মিশেল দিয়েছেন নিজের দর্শন ও ইতিহাস চেতনাকে। আর এভাবেই গ্রন্থটি হয়ে উঠেছে অসামান্য এক পাঠ। সমালোচনা ধারায় জর্জ বাওয়ারিংয়ের আরেকটি অসাধারণ গ্রন্থ ‘ওয়ার্ডস, ওয়ার্ডস, ওয়ার্ডস’। এ কথা নির্দ্বিধ কণ্ঠে বলা যায়, উনিশ শ ষাটের দশক থেকে ছয় দশক ধরে সক্রিয় কানাডার সাহিত্যের চড়াই-উতরাই, অলিগলি, তত্ত্ব ও তথ্যের জন্য শেষোক্ত বই দুটি যেকোনো পাঠকের জন্য আবশ্যিক সংগ্রহ।
এ প্রসঙ্গে বলে রাখা যেতে পারে যে, জর্জ বর্ণমালার ক্রমের ব্যাপারে খুবই দুর্বল। তিনি যেমন অ্যালফাবেট বই পড়তে পছন্দ করেন, তেমন লিখতেও ভালোবাসেন। কখনো কখনো এমনও হয়েছে যে, তিনি লেখকের নামের আদ্যাক্ষরের বর্ণক্রম অনুসরণ করে কিছুদিন পড়াশোনা করেছেন। জর্জ জানিয়েছেন যে, তিনি যখন বিছানায় যান, তখন বর্ণমালার খেলা তাঁর করোটিতে খেলা করতে শুরু করে (হাউ আই রাইট, পৃষ্ঠা–১৯)।
৮৩ বছর বয়সী জর্জ এ বছরের শুরুতে যোগ দেন ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার গ্যালিয়ানো আইল্যান্ডে সাহিত্য উৎসবে। ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত সে উৎসবের আগে জানুয়ারিতে জর্জের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়, আয়োজকদের পক্ষ থেকে। কোন জাতীয় লেখা তাঁর পছন্দ, এমন একটি প্রশ্নের উত্তরে জর্জ জানিয়েছেন, ‘I don’t get interested in novels or poetry unless the writing is showing me something I haven’t seen.’ জর্জের সাহিত্যকর্ম মূল্যায়নের মূলসূত্র বোধ করি এই বাক্যটির মধ্যে লুকিয়ে আছে। জর্জের লেখা পড়তে পড়তে পাঠকের সব সময় এই অনুভবটি কাজ করতে থাকে, যা পড়িনি, পড়া হয়নি সেটাই পড়ছি, এমন পড়ার অনুভব।
‘আ ম্যাগপাই লাইফ’ বইতে ‘পোয়েমস ফর মেন’ শিরোনামে একটি ছোট্ট অধ্যায় আছে। ছোটবেলায় কবিতা পড়া নিয়ে জর্জের অভিজ্ঞতার কথা আছে সেখানে। জানা যায়, বাড়িতে বহু খণ্ডের একটি বইয়ের সেট ছিল। এক একটি খণ্ড এক একটি বিষয় নিয়ে। কোনোটি ছিল ভূগোল নিয়ে, আবার কোনোটির বিষয় ছিল মহাকাশবিদ্যা। দশম খণ্ডটি ছিল গোলাপি রঙের। বহু ব্যবহারে সেটি বিবর্ণ হয়ে গিয়েছিল। পনেরো বছর বয়সে কিন্তু ওটাই ছিল জর্জের কবিতাপাঠের একমাত্র উৎস। অর্থাভাবেরও ইঙ্গিত আছে লেখাটিতে। প্রথম কবিতার যে বইটি কিনেছিলেন সেটি হলো, ১৯৪৭ সালে প্রকাশিত আমেরিকার কবি ড্যামন রুনিয়ানের (১৮৮০-১৯৪৬) লেখা ‘পোয়েমস ফর মেন’ (পৃষ্ঠা ৫৩-৫৪)। এভাবেই কবি জর্জ বাওয়ারিংয়ের কাব্যযাত্রা শুরু যে যাত্রাটি গভর্নর জেনারেল পুরস্কার পাওয়ার পর এমন: ‘দ্য ক্যাচ’ (১৯৭৬), ‘ওয়েস্ট উইনডো’ (১৯৮২), ‘কেরিসডেল এলিগিস’ (১৯৮৪), ‘ডিলেড মার্সি অ্যান্ড আদার পোয়েমস’ (১৯৮৭), ‘আরবান স্নো’ (১৯৯১), ‘ব্লন্ডস অন বাইকস’ (১৯৯৭) এবং ‘দ্য ওয়ার্ল্ড আই গেজ’ (২০১৫)।
জর্জের লেখা একটি দীর্ঘ কবিতা আছে: ‘হিজ লাইফ: আ পোয়েম’। ছাপা হয়েছিল ২০০০ সালে। ১২০ পৃষ্ঠার বইটিতে ১২০টি সেকশন আছে। সেকশনগুলো আসলে ছোট ছোট কবিতা এবং সবগুলো মিলিয়ে এটি আসলে জর্জের স্মৃতিকথা, কবিতায় লেখা স্মৃতিকথা। স্পষ্ট হয়, কবি আসলে ধরতে চেয়েছেন একজন জর্জ বাওয়ারিংয়ের জীবনের সেই মুহূর্তগুলোকে যেগুলো তাঁকে একজন ‘কবি’ বানাতে বানাতে বর্তমানের কানাডার একজন কিংবদন্তিতে পরিবর্তন করেছে। এই দীর্ঘ কবিতা লেখার ইতিহাসটি স্পষ্ট হয় ‘হাউ আই রোট সার্টেন অব মাই বুকস’ গ্রন্থের ‘হিজ লাইফ: পোয়েম (২০০০)’ অধ্যায়ে। সেখান থেকে জানা যায় জর্জ ১৯৫৮ সালে ডায়েরি লেখা শুরু করেন। ১৯৭৮ সালে সিলভিয়া ফলসাপেরলা তাঁকে একটি হার্ডবাউন্ড খাতা উপহার দেন। এর দশ বছর পর তাঁর ইচ্ছে জাগে ওই খাতায় বিশ বছর আগের ডায়েরি থেকে তথ্য ব্যবহার করে কবিতা লিখবেন। আর সেভাবেই তৈরি হয় ছোট ছোট কবিতা সমন্বিত এই দীর্ঘ কবিতাটি।
জর্জের দীর্ঘ কবিতার আরেকটি বইয়ের নাম ‘মাই ডার্লিং নেলি গ্রে’। সে বইটি লেখা হয়েছে ২০০৬ সালজুড়ে। ছাপা হয় ২০১০ সালে। সে বই লেখার প্রেক্ষাপট সম্পর্কে জানা যায়, ২০০৫ সালের শেষ দিকে তিনি সিদ্ধান্ত নেন যে, তিনি প্রতিদিন খানিকটা করে লিখে ৩৬৫ দিন ধরে যা লিখবেন, সেটি হবে একটি বই। শুরুতে কোনো বিষয় স্পষ্ট হয়ে না উঠলেও ধীরে ধীরে একটি বিষয় খুঁজে পান জর্জ। আর সেই বিষয়কে নিয়ে ক্রমে এগিয়ে যান তিনি। বইটির আরও একটি বিশেষত্ব এই যে, প্রতি মাসের লেখাগুলো একসঙ্গে একটি স্বতন্ত্র বিষয় ছিল। এবং জর্জ প্রতি মাসের কবিতাগুলো আলাদা আলাদা চ্যাপবুক আকারেও প্রকাশ করেছেন। জর্জের লেখা এমন দীর্ঘ কবিতার তালিকাটি কিন্তু ছোট নয়। ‘অ্যালোফেনস’, ‘ডু সিংক’ বা ‘ডেজার্ট এলম’ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ‘অ্যালোফেনস’ নিজের কাছে খুব প্রিয় বলে জানিয়েছেন জর্জ (হাউ আই রোট, পৃষ্ঠা–৫৪)। ‘ডু সিংক’ নিজের মায়ের পূর্বপুরুষদের নিয়ে। আর ‘ডেজার্ট এলম’ হলো তাঁর বাবার কথা। ‘ডু সিংক’ হলো সেই কবিতা যেটি গুয়েলফের এক অনুষ্ঠানে জর্জ পড়েছিলেন এবং তা শুনে আনন্দে চিৎকার করে উঠেছিলেন মার্গারেট অ্যাটউডের মতো লেখক (হাউ আই রোট, পৃষ্ঠা ১৩১)।
দীর্ঘ কবিতার বাইরে জর্জের রয়েছে বিপুলসংখ্যক কাব্য সংকলন। গভর্নর জেনারেল পুরস্কার বিজয়ী গ্রন্থ ‘গ্যাংস অব কসমস’-এ ‘দ্য বোট’ শিরোনামের একটি কবিতা আছে। বিবাহ নিয়ে, বিবাহের সামগ্রিকতা নিয়ে বোধ করি এ এক অনন্য উচ্চারণ। অথবা ধরা যাক, ১৯৯১ সালে প্রকাশিত ‘আরবান স্নো’ কাব্যগ্রন্থের কথা। সেখানে ‘ডেথ’ শিরোনামের একটি কবিতা আছে। মৃত্যু নিয়ে এমন খেলা করার সাহস এবং ভাষা-দক্ষতা জর্জের মতো কবিরই থাকা সম্ভব বলে মনে করেন কানাডার সাহিত্য সমালোচকেরা।
২০০৩ সালে এপ্রিলে ‘ক্যানন’ পত্রিকার সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে জর্জ বাওয়ারিংকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, যদি তাঁর একটি টাইম মেশিন থাকত, তিনি কোন সময়টিতে যেতে চাইতেন। জর্জের সহজ উত্তর ছিল, তিনি প্যারিসের সেই সময়টাতে যেতে চান, যখন ‘ইউলিসিস’ উপন্যাসের পাতাগুলো মুদ্রণ যন্ত্র থেকে বের হচ্ছে। ৮০ বছর পূর্তিতে ‘দ্য টাইই’ পত্রিকা জর্জের যে সাক্ষাৎকার নিয়েছিল, সেটি থেকে জানা যায়, তাঁর নোটবুক ভর্তি নতুন নতুন বইয়ের আইডিয়ার কথা। এ ছাড়া অন্তত ছয়টি পাণ্ডুলিপি তিনি শুরু করেও শেষ করেননি। এর বাইরেও রয়েছে তাঁর বারোটি মোটাসোটা গদ্যের পাণ্ডুলিপি, যেগুলো বিভিন্ন কারণে তিনি প্রকাশ করেননি।
জর্জ বাওয়ারিংকে নিয়ে এই লেখাটি শেষ করতে চাই বাঙালি সাহিত্য আন্দোলনের সঙ্গে জর্জের সংযোগ নিয়ে। উনিশ শ ষাটের দশকে কলকাতায় যে যুগান্তকারী সাহিত্য আন্দোলন হয়, যেটির নাম ছিল হাংরি আন্দোলন, সেই আন্দোলনের পুরোধা ছিলেন মলয় রায়চৌধুরী, সমীর রায়চৌধুরী, শক্তি চট্টোপাধ্যায়, দেবী রায়সহ অন্যরা। ১৯৬৫ সালে আন্দোলনের এগারো জনের বিরুদ্ধে পশ্চিমবঙ্গ সরকার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। এর প্রতিবাদ করেছিল পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের সাহিত্য গোষ্ঠীগুলো। কানাডাতে তেমন একটি প্রতিবাদের নেতৃত্বে ছিলেন জর্জ বাওয়ারিং। সম্পাদক হিসেবে জর্জ ১৯৬১ থেকে ১৯৬৩ সাল পর্যন্ত প্রকাশ করেন ‘টিম’ পত্রিকা, ভ্যাঙ্কুভার থেকে। ১৯৬৪ থেকে ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত তিনি ছিলেন ‘ইম্যাগো’ পত্রিকার সম্পাদক, যেটি একই সঙ্গে কানাডার লন্ডন (অন্টারিও), মন্ট্রিয়ল ও ভ্যাঙ্কুভার থেকে প্রকাশিত হতো। ইম্যাগো পত্রিকার সপ্তম সংখ্যাটি ছিল হাংরি আন্দোলনের প্রতি সরকারের নির্যাতনের বিরুদ্ধে। সে সংখ্যায় লেখকদের মধ্যে যেমন ছিলেন মলয় রায়চৌধুরী, তেমন ছিলেন জর্জ নিজেও।