সংবাদমাধ্যমের ওপর আঘাত

গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার যত শেষের দিকে আসে ততই বিশ্ব জুড়ে একটা বড় অংশের মানুষ আনন্দ-উৎসবে মেতে ওঠে। এর একটি বড় দিন, অন্যটি নববর্ষ। এর বাইরেও বছর শেষের কিছু বিষয় নিয়ে মানুষের আগ্রহ থাকে। আর সেটা বিশ্ব জুড়েই। এ রকমই একটি বিষয় বিখ্যাত টাইম ম্যাগাজিনের ‘পারসন অব দা ইয়ার’। ১৯২৭ সাল থেকে টাইম সাময়িকী এই কাজটি করে আসছে। আর মাত্র ৯ বছর পরে এটা শতবর্ষে পা দেবে। ফলে ঐতিহ্যের দিক দিয়ে এর একটি মূল্য আছে। তাই বিশ্বের অনেক মানুষ অপেক্ষা করে থাকেন এটা জানার জন্য যে, কে বা কোন বিষয় হবে টাইম-এর পারসন অব দা ইয়ার।
বিখ্যাত ফোর্বস সাময়িকী প্রতি বছর বিশ্বের ধনী লোকজনের তালিকা প্রকাশ করে। এই তালিকা ধরেই সংবাদমাধ্যম বছর জুড়ে ওই ব্যক্তিদের পরিচয় লিখতে থাকে। গতবারে টাইম-এর পারসন অব দা ইয়ার হয়েছিল ‘হ্যাশট্যাগ মিটু’। নারীদের যৌন নিগ্রহের বিরুদ্ধে সরব লোকেদের স্বীকৃতি দিয়েছিল টাইম, যা ছিল সময়োপযোগী এবং প্রশংসনীয়।
‘টাইম’ ম্যাগাজিন এবার তাঁদের পারসন অব দা ইয়ার হিসেবে চারজন সাংবাদিক ও একটি পত্রিকাকে স্বীকৃতি দিয়েছে। এই তালিকায় আছেন নৃশংসভাবে নিহত সৌদি সাংবাদিক জামাল খাসোগি, বার্তা সংস্থা রয়টার্সে কর্মরত মিয়ানমারে কারাদণ্ডপ্রাপ্ত দুই সাংবাদিক ওয়া লোন ও কাও সো উক, ফিলিপাইনের সাংবাদিক মারিয়া রেসা এবং মেরিল্যান্ডের অ্যানাপোলিসের ক্যাপিটাল গেজেট পত্রিকা।
জামাল খাসোগিকে যেভাবে সৌদি সরকারের মদদে হত্যা করা হয়েছে তার নজির খুঁজে পাওয়া কঠিন। এই ঘটনা যে অর্থের দম্ভের কাছে হারিয়ে যাবে তার সব সম্ভবনা স্পষ্ট। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারও ঘোষণা দিয়েছেন এই ঘটনায় তিনি তিনি সৌদি যুবরাজের পাশেই আছেন। এর চেয়ে দুঃখ ও লজ্জাজনক ঘটনা কমই আছে।
মিয়ানমারে কারাবন্দী রয়টার্সের দুই সাংবাদিক জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তুলে এনেছিলেন সে দেশের সেনাবাহিনীর অপকীর্তি। মিয়ানমারের আরাকান প্রদেশের রোহিঙ্গা মুসলমানদের কীভাবে জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে হত্যা করে বাড়ি ছাড়া করা হয়েছে সেটাই তাঁরা প্রকাশ করে দিয়েছিলেন সারা বিশ্বের সামনে। কিন্তু এতেও বিশ্ব বিবেক কেঁদে ওঠেনি। বহাল তবিয়তে আছে অপরাধীরা। অথচ যাঁরা এর খবর প্রকাশ করলেন তাঁরা এখন কারাগারে। ফিলিপাইনের নির্বাচিত স্বৈরশাসক প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতার্তের কাজের সমালোচক হিসেবে রুখে দাঁড়িয়েছেন মারিয়া রেসা। মেরিল্যান্ডে বন্দুকধারীদের গুলিতে পাঁচ সংবাদ কর্মী নিহত হওয়ার পরেও সকালে ঠিকই প্রকাশিত হয়েছিল ক্যাপিটল গেজেট।
এত কথা বলার অর্থ এটাই যে, সাংবাদিকেরা কী পরিবেশে কাজ করেন, তা বোঝান। যখন সবাই পিছিয়ে যায় তখন একজন সাংবাদিক কীভাবে রুখে তারই নমুনা ওপরের ঘটনাবলি। সংবাদমাধ্যমকে সক্রিয় রাখতে বন্দুকধারীর সামনেও তাঁরা অকুতোভয়। বিশ্বজুড়ে কী ধরনের বৈরী পরিবেশে সংবাদকর্মীরা কাজ করে যাচ্ছেন তারই সামান্য কিছু উদাহরণ এ সব।
সংবাদমাধ্যমকে যতই স্তব্ধ করে দেওয়া যাবে ততই সুবিধা স্বৈরশাসকদের, এটা সবাইকে বুঝতে হবে। বুঝলেই উপকার।