মার্কিন নির্বাচনে ভোটারদের প্রভাবিত করেছিল রাশিয়া

২০১৬ সালের মার্কিন নির্বাচনে বিজয়ী হন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: এএফপি
২০১৬ সালের মার্কিন নির্বাচনে বিজয়ী হন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: এএফপি

২০১৬ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প জিতলেও রাশিয়ার সহযোগিতার বিতর্ক পিছু হটেনি। অভিযোগ উঠেছিল, ট্রাম্পকে জেতাতে গোপনে কাজ করেছিল রাশিয়া। রুশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ গড়ে তুলেছিল ট্রাম্প শিবির। নির্বাচন ঘিরে রাশিয়ার পক্ষ থেকে অনলাইনে ভুয়া তথ্য ছড়ানোর প্রচেষ্টার চিত্র দেখতে পেয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সিনেট ইনটেলিজেন্স কমিটি। তারা অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির কম্পিউটেশনাল প্রোপাগান্ডা প্রজেক্ট অ্যান্ড গ্রাফিকা ও অস্টিনভিত্তিক সাইবার নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান নিউ নলেজকে দুটি গবেষণার দায়িত্ব দিয়েছিল। সেই গবেষণা প্রতিবেদন গতকাল সোমবার প্রকাশিত হয়। সিএনএন ও এক্সিওএসের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

এর আগে রাশিয়া ইন্টারনেট ব্যবহার করে ২০১৬ সালে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন দারুণভাবে প্রভাবিত করেছিল বলে অভিযোগ বিতর্কিত ফেসবুক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে ‘বিভেদ ও অবিশ্বাসের বীজ বপন’ করার জন্য ব্যবহার করা হচ্ছিল। ইন্টারনেট রিসার্চ এজেন্সি (আইআরএ) স্পনসর হয়ে হাজার হাজার বিজ্ঞাপন এক কোটি মানুষের কাছে পাঠিয়েছিল বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। সেসব বিজ্ঞাপন আইআরএর বিভিন্ন পেজে লাইক দিতে উৎসাহিত করত।

সিনেট কমিটির জন্য অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির কম্পিউটেশনাল প্রোপাগান্ডা প্রজেক্টের তৈরি করা প্রতিবেদনে বলা হয়, রাশিয়ার পক্ষ থেকে মার্কিন জাতিকে বিভক্ত করার লক্ষ্যে অনলাইনে নানা কর্মসূচি চালানো হয়।

অভিযোগ উঠেছে, ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে ভুয়া ও মিথ্যা খবর ছড়িয়ে ব্যাপক প্রচারণা চালায় রাশিয়া। ডোনাল্ড ট্রাম্প যাতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে পারেন, এ জন্য তাঁর সমর্থনে সামাজিক যোগাযোগের প্রতিটি মাধ্যমই ব্যবহার করে মস্কো। এমনকি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পরও সহায়তা অব্যাহত রাখে।

মার্কিন কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটের নতুন প্রতিবেদনে বিতর্কিত রুশ হস্তক্ষেপের এ চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। ফেসবুক, টুইটার, গুগল ও প্রচলিত অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কয়েক লাখ পোস্ট বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদনটি প্রস্তুত করেছে সিনেট ইনটেলিজেন্স কমিটি।

নিউ নলেজের প্রতিবেদনে জানানো হয়, ২০২০ সালের মার্কিন নির্বাচন লক্ষ্য করে আরও প্রচারণা চালানো হতে পারে। এ জন্য ভুয়া খবর ছড়াতে নিয়োগ, খবর বিকৃত করার ঘটনা ও নির্বাচনের প্রভাব খাটানোর প্রচেষ্টা দেখতে পাওয়া যাবে। যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যমগুলোর বা বিভিন্ন তথ্যের প্রকৃত উৎসগুলোর খবরের মতো করে বিকৃত বর্ণনা অনলাইনে ছড়িয়ে পড়তে পারে ওই সময়।

নিউ নলেজের প্রতিবেদনে বলা হয়, বিগত মার্কিন নির্বাচনের সময় কৃষ্ণাঙ্গদের লক্ষ্য করে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে অনেক প্রচার করা হয়েছে। বিষয়টি অনেকের সন্দেহের বাইরে ছিল। এতে ভোটারদের দমিয়ে রাখতে কাজে লাগে। এর মাধ্যমে ভোটারদের মনে ভয় ঢোকানো হয়। ২০১৬ সালের নির্বাচনের পরেও রাশিয়ার আইআরএ নামের একটি সংস্থা তাদের প্রচার চালিয়ে যায়। বিভিন্ন ফেসবুক পেজ আর ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে তারা ভোটারদের মতামত বদলে দেওয়ার চেষ্টা করে।

অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির গবেষকেদের মতে, দেশটির ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের আইআরএর অ্যাকাউন্টগুলোর আকৃষ্ট করতে পেরেছিল। অন্তত একটি আইআরএ অ্যাকাউন্ট মানুষকে সংগঠিত করে সমাবেশ ও মিছিলের আয়োজন করতে সমর্থ হয়েছিল।

অবশ্য দুটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে পাওয়া তদন্ত প্রতিবেদন সিনেট প্যানেলের মতামত নয়। এ বিষয়ে বিষদ তদন্ত করছে ওই কমিটি।

সিনেটের হয়ে তদন্ত করার সময় গবেষকেরা সিলিকন ভ্যালির প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর দিকে অভিযোগ তুলেছেন। এ তদন্তে ফেসবুক, গুগলের মতো প্রতিষ্ঠান খুব বেশি সহায়তা করেনি। তারা যৎসামান্য তথ্য দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তাঁরা।

সিনেট ইনটেল কমিটির চেয়ারম্যান রিচার্ড বার এক বিবৃতিতে বলেছেন, নতুন করে প্রকাশিত তথ্যে দেখা গেছে, মার্কিন জাতিকে বর্ণ, ধর্ম ও আদর্শের ভিত্তিতে বিভক্ত করতে মরিয়া প্রচেষ্টা চালিয়েছিল রাশিয়া। এ ক্ষেত্রে রাশিয়ার আইআরএ সক্রিয়ভাবে কাজ করেছিল। এ কার্যক্রম এখনো বন্ধ হয়নি।