ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের বিরোধিতায় মার্কিন দূতের পদত্যাগ

ব্রেট ম্যাকগুর্ক। ছবি: রয়টার্স
ব্রেট ম্যাকগুর্ক। ছবি: রয়টার্স

সিরিয়ায় ইসলামিক স্টেটের (আইএস) বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নিযুক্ত মার্কিন শীর্ষ কর্মকর্তা ব্রেট ম্যাকগুর্ক পদত্যাগ করেছেন। সিরিয়া থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের বিষয়ে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের জের ধরে এই পদত্যাগের ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে।

আইএসকে পরাজিত করতে বৈশ্বিক যৌথ বাহিনীতে প্রেসিডেন্টের বিশেষ দূত ছিলেন ব্রেট ম্যাকগুর্ক। ফেব্রুয়ারি মাসে তাঁর মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে তার আগেই তিনি পদত্যাগ করেছেন।

ট্রাম্পের ঘোষণার আগে ম্যাকগুর্ক সিরিয়ায় আইএসের বিরুদ্ধে মার্কিন সেনাবাহিনীর কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখার ওপর জোর দিয়েছিলেন। এই ইস্যুতে এর আগে গত বৃহস্পতিবার পদত্যাগ করেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী জিম ম্যাটিস।

ম্যাকগুর্ক একজন অভিজ্ঞ কূটনীতিক। ওবামা প্রশাসন ২০১৫ সালে তাঁকে এই পদে নিয়োগ দেন। ডিসেম্বরের শুরুতে তিনি সাংবাদিকদের বলেছিলেন, সিরিয়ার বিভিন্ন এলাকার স্থিতিশীলতা রক্ষায় তাঁরা সেখানেই অবস্থান করতে চান। আইএস পরাজিত হয়েছে ভেবে সেখান থেকে চলে এলে তা অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্ত হবে বলে তিনি মন্তব্য করেছিলেন।

এদিকে পদত্যাগপত্রে ম্যাকগুর্ক বলেছেন, সিরিয়ায় আইএস জঙ্গিরা পিছু হটেছে, কিন্তু এখনো পরাজিত হয়নি। সিরিয়া থেকে মার্কিন বাহিনী প্রত্যাহার করা হলে আইএসের আবারও উত্থানের মতো পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে।

ম্যাকগুর্ক আরও বলেছেন, সেনা প্রত্যাহারে ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত একটি ধাক্কার মতো লেগেছে এবং এটি মার্কিন নীতির সম্পূর্ণ পরিপন্থী। এটা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শরিকদের দ্বিধান্বিত করেছে এবং লড়াইরত শরিকদের হতভম্ব করে ফেলেছে। তিনি আরও বলেছেন, নিজের সততা রক্ষায় নতুন নির্দেশনা মেনে নেওয়া তাঁর পক্ষে সম্ভব না।

আইএস পরাজিত হয়েছে উল্লেখ করে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গত বুধবার সিরিয়া থেকে প্রায় দুই হাজার মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন। একই সঙ্গে তিনি আফগানিস্তানে তালেবানসহ জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে যুদ্ধরত প্রায় সাত হাজার সেনা প্রত্যাহারেরও ঘোষণা দেন।

তবে ট্রাম্প এখনো ম্যাকগুর্কের পদত্যাগের ব্যাপারে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাননি।

এদিকে ট্রাম্প বলেই চলেছেন, সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত সঠিক হয়েছে। গতকাল শনিবারও তিনি একই কথা বলেছেন যে সেখানে আইএস পরাজিত হয়েছে। এখন তুরস্কসহ অন্যরা পরিস্থিতি দেখভাল করতে পারে।

তবে শরিক দেশগুলোর পাশাপাশি জ্যেষ্ঠ রিপাবলিকান নেতারা ও শক্তিশালী দেশগুলো ট্রাম্পের এই বক্তব্যের বিরোধিতা করে বলছে, এই সিদ্ধান্তের কারণে আইএস আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে। একই রকম আশঙ্কা প্রকাশ করেছে কুর্দি নেতৃত্বাধীন জোট সিরিয়া ডেমোক্রেটিক ফোর্স (এসডিএফ)।

যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সিরিয়ায় এখনো ১৪ হাজারের বেশি আইএস জঙ্গি রয়েছে এবং প্রতিবেশী ইরাকে আরও বেশি রয়েছে।

সিরিয়ায় ২০১৫ সালে প্রথম সেনা পাঠায় যুক্তরাষ্ট্র। ওই সময়ের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা আইএসের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত কুর্দি বাহিনীকে প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দেওয়ার জন্য ছোট একটি বিশেষ বাহিনী পাঠান। সময়ে সময়ে সেই সংখ্যা বেড়ে প্রায় দুই হাজার হয়েছে। মার্কিন সেনারা সিরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলজুড়ে বৃত্তাকার স্থল ও বিমান নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে। আইএস এবং অন্যান্য জঙ্গি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বিমান হামলায় আন্তর্জাতিক বাহিনীর সঙ্গেও যুক্ত রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।