৭৬ হাজারবার মিথ্যা বলেছেন ট্রাম্প!

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স

বিশ্বসাহিত্যের নমস্য লেখক মার্ক টোয়েনের সমাধির পাশে বড় হওয়া মানুষ প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। মার্ক টোয়েন শুধু লেখক হিসেবেই সমাদৃত, এমন নয়; আজও আমেরিকার রাজনীতিতে মার্ক টোয়েনের তির্যক বাণীতে ধাতস্থ হতে দেখা যায় অনেককে। তাঁর সেই বিখ্যাত উক্তি, ‘জনগণকে বোকা বানানোটা সহজ। বোঝানো কঠিন যে তাদের বোকা বানানো হয়েছে।’

নিউইয়র্কের উডলন সেমিট্রিতে ১৯১০ সাল থেকেই শুয়ে আছেন মার্ক টোয়েন। এর তিন দশকের বেশি সময় পরে তাঁর সমাধির পাশেই জন্ম আর বেড়ে ওঠা ট্রাম্পের। সর্ব বিষয়ে নিজেকে ‘জ্ঞানী’ দাবি করা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে তাঁর কোনো বক্তৃতায় মার্ক টোয়েনের কোনো বাণী অবশ্য উচ্চারণ করতে দেখা যায়নি।

প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার আগে থেকেই ট্রাম্প একের পর এক অসত্য তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করে আসছেন। নানা কারণে অবদমিত আমেরিকার গোঁড়া শ্বেতাঙ্গদের বোঝাতে সক্ষম হয়েছেন, তিনি তাদেরই লোক। ফলে তাঁর জনপ্রিয়তা আর সমর্থন নিজের ভিত্তিতে এখনো বেশ শক্ত।

সীমান্তে দেয়াল নির্মাণ নিয়ে অচল ফেডারেল সরকার। ট্রাম্প গোঁ ধরেছেন, দেয়াল নির্মাণের জন্য কংগ্রেস পর্যাপ্ত অর্থ না দিলে তিনি ফেডারেল সরকারকে দীর্ঘদিন অচল করেই রাখবেন। এ নিয়ে নানাভাবে দায় চাপাবেন কংগ্রেসের ওপর। ডেমোক্র্যাট–নিয়ন্ত্রিত কংগ্রেসের ওপর দায় চাপিয়ে নিজের ভিত্তিকে আরও মজবুত করতে চান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তাঁর বিরুদ্ধে তদন্তসহ সামনে আসা নানা ঝামেলা সামাল দিতে হচ্ছে। একদিকে অভিশংসনের হুমকি তো আছেই, অন্যদিকে নিজের পুনর্নির্বাচনের চিন্তা। গত দুই বছর থেকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পই মাতিয়ে রেখেছেন মার্কিন সংবাদমাধ্যম।

ট্রাম্প এবার সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্টদের নিয়ে মিথ্যাচার করছেন। ৪ জানুয়ারি দেয়াল নির্মাণ নিয়ে বক্তব্য দেওয়ার সময় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, পূর্বসূরি প্রেসিডেন্টরাও সীমান্তে দেয়াল নির্মাণের প্রয়োজনীয়তার কথা তাঁকে বলেছেন। বিষয়টির গুরুত্ব অনুভব করে দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকা এ নিয়ে তদন্ত চালায়। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে চারজন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট দেয়াল নির্মাণ নিয়ে পরামর্শ দিতে পারতেন। এর মধ্যে সদ্য প্রয়াত সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশের মুখপাত্র বলেছেন, মাত্র কিছুদিন আগে ডব্লিউ বুশ মারা গেছেন। দ্রুত এমন বিতর্কে তাঁকে না জড়ানোই ভালো হবে।

সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার মুখপাত্র এরিক শালটজ বলেছেন, কিছুদিন আগেই সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা প্রকাশ্যে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের দেয়াল নির্মাণের অসার পরিকল্পনার বিরুদ্ধে বলেছেন! জীবিত সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশের মুখপাত্র ফ্রেডি ফোর্ড বলেছেন, ট্রাম্পের সঙ্গে এ নিয়ে কখনো কোনো কথাই বলেননি। আর সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের মুখপাত্র এঞ্জেল উরেনা আরও এক ধাপ বাড়িয়ে বলেছেন, শপথ নেওয়ায় পর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের কোনো কথাই হয়নি। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার তাঁর মানবাধিকার কর্ম নিয়ে এখনো বিখ্যাত। কার্টার এক বিবৃতিতে বলেছেন, দেয়াল নির্মাণ নিয়ে তিনি কোনো কথা বলেননি। সীমান্তে দেয়াল নির্মাণ করে অভিবাসী আসা বন্ধ করার কর্মসূচি তিনি সমর্থন করেন না।

ওয়াশিংটন পোস্ট বলেছে, তাদের রেকর্ড অনুযায়ী নির্বাচিত হওয়ার পর প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ৭৬ হাজারবার মিথ্যা বলেছেন বা বিভ্রান্তিমূলক কথা বলেছেন! সীমান্তে দেয়াল নির্মাণ নিয়ে পূর্বসূরি প্রেসিডেন্টদের কথাটি এই ৭৬ হাজারের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত নয় বলে পোস্ট বলেছে। বিকারহীন ডোনাল্ড ট্রাম্প হয়তো জানেনই না, মার্ক টোয়েনের সমাধির পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় আজও মানুষ তাঁর কথাটি উচ্চারণ করে—একজন সৎ মানুষকে অন্য যেকোনো স্থানের চেয়ে রাজনীতিতেই বেশি উজ্জ্বল দেখায়!