কাজ নেই তো বই পড়ুন

কর্মহীন হয়ে পড়া সরকারি কর্মীদের বিনা মূল্যে বই পড়া ও অনলাইনে নেটওয়ার্কিংয়ের সুযোগ দিতে দিনব্যাপী এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে আমেরিকান ইউনিভার্সিটির স্কুল অব পাবলিক অ্যাফেয়ার্স। ছবি: এএফপি
কর্মহীন হয়ে পড়া সরকারি কর্মীদের বিনা মূল্যে বই পড়া ও অনলাইনে নেটওয়ার্কিংয়ের সুযোগ দিতে দিনব্যাপী এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে আমেরিকান ইউনিভার্সিটির স্কুল অব পাবলিক অ্যাফেয়ার্স। ছবি: এএফপি

রাজায় রাজায় যুদ্ধ হয়, উলুখাগড়ার প্রাণ যায়—মার্কিন ফেডারেল কর্মীদের এখন এমন দশা। মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণ ইস্যুতে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও কংগ্রেসে ডেমোক্র্যাটদের রশি টানাটানিতে এখন কর্মহীন সময় কাটাতে হচ্ছে আট লাখ সরকারি কর্মচারীর। অনেককে যদিও বা কাজ করতে হচ্ছে, কিন্তু পারিশ্রমিক জুটছে না। রশি টানাটানি শেষ হবে কবে, সেদিকে উদ্‌গ্রীব হয়ে তাকিয়ে রয়েছেন তাঁরা। 

নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি হিসেবে মেক্সিকো সীমান্তে ইস্পাতের দেয়াল নির্মাণে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বদ্ধপরিকর। এ জন্য তিনি ৫০০ কোটি ডলারের বেশি অর্থ বরাদ্দ চেয়েছেন। গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদে রিপাবলিকানদের আধিপত্য থাকায় ট্রাম্পের দাবি অনুসারে অর্থ বরাদ্দের বিষয়টি পাস হয়ে যায়। তবে সিনেটে এসে তা ডেমোক্র্যাটদের ভেটোতে আটকে যায়। এটি সিনেটে পাসের জন্য কমপক্ষে ৬০ ভোট প্রয়োজন। সিনেটে রিপাবলিকানদের আসন ৫১। ডেমোক্র্যাটরা এ খাতে ১৩০ কোটি ডলারের বেশি অর্থ ছাড় দিতে রাজি নয়।
মধ্যবর্তী নির্বাচনে জয়ের কারণে এ মাস থেকে প্রতিনিধি পরিষদে ডেমোক্র্যাটরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। সেখানেও এ বিষয়ে ছাড় না দেওয়ার কথা জানিয়েছেন ডেমোক্র্যাটরা। অন্যদিকে সিনেটে অর্থ ছাড় আটকে যাওয়ায় ক্ষুব্ধ ট্রাম্প জানিয়েছেন, এই অর্থ ছাড় না হওয়া পর্যন্ত তিনি বাজেট-সংক্রান্ত কোনো নথিতে সই করবেন না। ফলে বাজেটের অভাবে ২২ ডিসেম্বর থেকে ফেডারেল সরকারের ২৫ শতাংশের কাজকর্ম বন্ধ হয়ে যায়। সরকারি অনেক বিভাগের কর্মীদের বাড়িতে ছুটি কাটাতে হচ্ছে। তবে কিছু কিছু বিভাগের কর্মচারীদের কাজ বিনা বেতনে অব্যাহত রাখা হয়েছে।

সংকট সমাধানে দুই দলের নেতৃত্বের মধ্যে কয়েক দফা আলোচনা হলেও কোনো ফল আসেনি। কবে নাগাদ এই সংকটের সমাধান হবে, তা বোঝা যাচ্ছে না। তাই এ সময়টাকে ভিন্নভাবে বৈচিত্র্যের সঙ্গে কাটানোর উদ্যোগে শামিল হয়েছেন কর্মহীন কর্মচারীদের অনেকে। সাময়িক এই পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে গতকাল মঙ্গলবার পড়াশোনা করতে কলেজে ফিরে গেছেন শত শত কর্মী।

বার্তা সংস্থা এএফপির খবরে জানানো হয়, সরকারি ওই কর্মচারীদের বিনা মূল্যে বই পড়া ও অনলাইনে নেটওয়ার্কিংয়ের এই সুযোগ দিতে গতকাল দিনব্যাপী এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে আমেরিকান ইউনিভার্সিটির স্কুল অব পাবলিক অ্যাফেয়ার্স। এর সঙ্গে যুক্ত হতে নিবন্ধন করেন ৫৫০ জন কর্মচারী।

ওই আয়োজনে অংশ নিয়েছেন বাণিজ্য অধিদপ্তরের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা অ্যাডাম সান্টো। এই ব্যতিক্রমী আয়োজনে যোগ দেওয়ার কারণ বলতে গিয়ে অ্যাডামের সরস জবাব, ‘আমাকে বাড়ি থেকে বের হতে দেখে আমার স্ত্রী খুব খুশি।’ তিন সপ্তাহ ধরে তিনি বাড়িতে। তিনি জানান, ‘এই সময়ে আমি মেয়ের যত্ন নিচ্ছি, রাতের খাবার তৈরিতে সাহায্য করছি, কাপড় ধোয়ার কাজ করছি।’

একইভাবে রসাল জবাব দিলেন রাজস্ব বিভাগের কর্মী ২৮ বছর বয়সী ম্যাথিউ গারলিপ। তিনি রাজধানী ওয়াশিংটনে থাকেন। বললেন, ‘আমার সঙ্গে বাড়তি সময় কাটাতে পেরে আমার কুকুর খুব খুশি।’ আয়োজন প্রসঙ্গে বললেন, ‘অ্যাপার্টমেন্ট থেকে বেরিয়ে এসে কিছুটা পড়াশোনা করার এটি একটি ভালো সুযোগ। তবে আমি কাজে ফিরতে চাই।’
তবে এই বিরক্তি ও কৌতুকের পেছনে সত্যিকারভাবে দুশ্চিন্তা কাজ করছে তাঁদের ভেতর। কারণ এই কাজকর্ম বন্ধ থাকার কারণে তাঁরা বেতন পাচ্ছেন না।

কৃষি অধিদপ্তরের কর্মী মারসেলা ট্রাস্ক বলেন, সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের বিষয় হচ্ছে, কী হবে এবং কত দিন পর্যন্ত এ অবস্থা চলবে, তা জানা যাচ্ছে না। তিনি জানান, এক দিক দিয়ে তাঁর ভাগ্য ভালো যে স্বামী সরকারি চাকরিজীবী না। তাই স্বামীর বেতনের টাকা দিয়ে সংসারের খরচ চালানো যাচ্ছে এখনো। তবে এই অবস্থা দীর্ঘ সময় ধরে চললে বন্ধক বাবদ অর্থ পরিশোধ ও শিশুসন্তানের খরচের জোগান দিতে জমানো অর্থে হাত দিতে হবে বলে জানান তিনি।

৪৪ বছর বয়সী একাকী মা মেলিন্ডা ব্যাটসন কাজ করেন খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসনে। তিনি জানান, ২০১৩ সালে ওবামা সরকারের সময়েও একবার তিনি এমন পরিস্থিতির শিকার হয়েছিলেন। সেবার ১৬ দিন পর্যন্ত অচলাবস্থা ছিল। তিনি বলেন, ‘আমি খুব একটি চিন্তিত নই, এটা শুনে যে কেউ আমাকে গবেট ভাবতে পারেন। আমি আমার বাড়িওয়ালা ও ক্রেডিট কার্ড প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা বলেছি। তাঁরা সদয় হয়েছেন। এরপরও ঋণ থাকলে কিছু দেওয়ার বাধ্যবাধকতা তো থাকেই।’
মেলিন্ডা গতকালের আয়োজনে কর্মস্থলের এমন পরিস্থিতিতে মন সতেজ করার ক্লাসে অংশ নেন। তিনি বলেন, ‘এই পরিস্থিতির ওপর আমার কোনো হাত নেই। এই অবস্থা মেনে নিয়ে আবেগ নিয়ন্ত্রণে ক্লাস থেকে উপকৃত হয়েছি। আমি জানি, একদিন আমি কাজে ফিরে যাব, তবে কবে সেটাই সমস্যা।’

আয়োজক স্কুল অব পাবলিক অ্যাফেয়ার্সের মুখপাত্র ভিকি উইলকিনসের মতে, এ ধরনের পরিস্থিতি লোকজনকে সরকারি চাকরি বিমুখ করে তুলতে পারে। তিনি বলেন, রেস্তোরাঁ, ব্যাংক, বাড়ির মালিকেরাও এ সময়ে এগিয়ে এসেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে তাঁরাও ভুক্তভোগীদের সহায়তায় এগিয়ে এসেছেন।