খাসোগি হত্যার জবাব চাই: মার্কিন আইনপ্রণেতারা

সাংবাদিক জামাল খাসোগি। ছবি: রয়টার্স
সাংবাদিক জামাল খাসোগি। ছবি: রয়টার্স

সৌদি সাংবাদিক জামাল খাসোগি হত্যায় যুক্তরাষ্ট্রকে সৌদি আরবের জবাবদিহি চাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন মার্কিন আইনপ্রণেতারা। কংগ্রেসে ডেমোক্রেটিক ও রিপাবলিকান দুই দলের বেশ কয়েকজন প্রতিনিধি এ আহ্বান জানিয়ে বলেন, ট্রাম্প প্রশাসন যদি তা না করে, তবে কংগ্রেসই এই জবাবদিহি চাইতে পারে।

গতকাল বৃহস্পতিবার ক্যাপিটল কমপ্লেক্সে মুক্ত গণমাধ্যম উদ্‌যাপন উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে সিনেট ও প্রতিনিধি পরিষদের ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান সদস্যরা এ আহ্বান জানান। অনুষ্ঠানে জামাল খাসোগিসহ গত বছর বিশ্বজুড়ে নিহত ৫০ জনেরও বেশি নিহত সাংবাদিককে স্মরণ করা হয়।

গত বছরের ২ অক্টোবর তুরস্কের ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেট ভবনের ভেতরে সৌদি সাংবাদিক জামাল খাসোগিকে (৫৯) হত্যা করা হয়। বিয়ে–সংক্রান্ত নথিপত্র আনার প্রয়োজনে তিনি কনস্যুলেট ভবনে গিয়েছিলেন। সৌদি আরব থেকে এসে ১৫ জনের একটি দল তাঁকে হত্যা করে। তাঁর লাশের সন্ধান এখনো পাওয়া যায়নি। খাসোগিকে হত্যার নির্দেশদাতা হিসেবে সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের নাম উঠে এসেছে।

মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাও মনে করে, যুবরাজ মোহাম্মদের নির্দেশেই খাসোগিকে হত্যা করা হয়েছে। যদিও সৌদি আরব শুরু থেকেই ওই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। সৌদি আরব শুরুতে কনস্যুলেট ভবনে খাসোগি হত্যার বিষয়টিও অস্বীকার করে। তবে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে তা স্বীকার করতে বাধ্য হয় এবং সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের বিচার শুরু করে। খাসোগি ছিলেন যুবরাজ মোহাম্মদের কড়া সমালোচক। ২০১৭ সালের জুনে যুবরাজ মোহাম্মদ ক্রাউন প্রিন্স হওয়ার পর খাসোগি সেপ্টেম্বরে সৌদি আরব থেকে পালিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে স্বেচ্ছানির্বাসনে চলে যান। সেখানে ওয়াশিংটন পোস্টে তিনি কলাম লিখতেন।
নিজ দেশের গোয়েন্দা সংস্থার মূল্যায়নের পরও ট্রাম্প যুবরাজ মোহাম্মদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। এর সপক্ষে সৌদি আরবের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাপক বাণিজ্যিক স্বার্থের বিষয়টি তিনি তুলে ধরেছেন।

ডেমোক্র্যাটরা খাসোগি হত্যায় প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের কঠোর অবস্থান না নেওয়ার সমালোচনা করে বলেন, মুক্ত মত প্রকাশের গণতান্ত্রিক অধিকার শেষ করার মাধ্যমে সৌদি আরবের সঙ্গে কৌশলগত ও বাণিজ্যিক বন্ধনের বিজয়োৎসব করা যায় না।
কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি বলেন, ‘যদি আমরা সিদ্ধান্ত নিই যে বাণিজ্যিক স্বার্থের কারণে আমাদের এই বক্তব্য ও পদক্ষেপ অগ্রাহ্য করা হবে, তবে আমাদের স্বীকার করতে হবে যে আমরা সব ধরনের নৈতিক অবস্থান হারিয়েছি।’

এর আগেও খাসোগি হত্যার ব্যাপারে মার্কিন আইনপ্রণেতারা কঠোর সমালোচনা করেছেন। গত বছরের ডিসেম্বরে কয়েকজন রিপাবলিকান সিনেটর প্রেসিডেন্টের অবস্থানের বিরোধিতা করে ডেমোক্র্যাটদের সঙ্গে যোগ দিয়ে সিনেটে একটি প্রস্তাব পাস করেন। ওই প্রস্তাবে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটের ইয়েমেনে যুদ্ধের সমাপ্তি চাওয়া হয় এবং খাসোগি হত্যায় যুবরাজ মোহাম্মদকে দোষারোপ করা হয়। তবে প্রস্তাবটি ওই সময়ে রিপাবলিকান সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রতিনিধি পরিষদে উত্থাপনের জন্য গৃহীত হয়নি। নভেম্বরে মধ্যবর্তী নির্বাচনে জয় পেয়ে প্রতিনিধি পরিষদে আধিপত্য পায় ডেমোক্রেটিক দল। এ মাস থেকে নতুন প্রতিনিধি পরিষদের যাত্রা শুরু হয়েছে। এই প্রস্তাবটি আবারও প্রতিনিধি পরিষদে উপস্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে ডেমোক্র্যাটদের।

প্রতিনিধি পরিষদে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক–বিষয়ক কমিটির রিপাবলিকান প্রতিনিধি মাইক ম্যাককাউল খাসোগি হত্যাকে সৌদি আরব ও যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে ‘বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতা’ বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, এ অবস্থার পরিবর্তন হওয়া প্রয়োজন।
কমিটির চেয়ারম্যান ডেমোক্র্যাট প্রতিনিধি ইলিয়ট এংগেল বলেছেন, সামনে তিনি সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্কের ব্যাপারে আলোচনার পরিকল্পনা করছেন।