ট্রাম্প ফের হুমকি দিলেন জরুরি অবস্থা জারির

গতকাল বৃহস্পতিবার টেক্সাসে যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্ত পরিদর্শনে যান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স
গতকাল বৃহস্পতিবার টেক্সাসে যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্ত পরিদর্শনে যান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স

যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণে অর্থ পেতে প্রয়োজনে জাতীয় জরুরি অবস্থা ঘোষণার আবারও হুমকি দিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ইস্পাতের দেয়াল নির্মাণে ট্রাম্পের দাবি অনুসারে ৫৭০ কোটি ডলারের বাজেট বরাদ্দে কংগ্রেস অনুমোদন না দেওয়ায় অর্থ পেতে তিনি জরুরি অবস্থা ঘোষণার হুমকি দিয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার সীমান্তে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন ট্রাম্প।

আজ শুক্রবার বিবিসি অনলাইনের খবরে জানানো হয়, গতকাল বৃহস্পতিবার টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের রিও গ্র্যান্ডে ভ্যালির সীমান্ত স্টেশন ম্যাকঅ্যালেন পরিদর্শন করেন ট্রাম্প। সেখানে ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, ‘জাতীয় জরুরি অবস্থা ঘোষণার পুরোপুরি ক্ষমতা রয়েছে আমার।’ তিনি বলেন, দেয়াল নির্মাণে মেক্সিকোরও ‘পরোক্ষভাবে’ অর্থ দেওয়া উচিত।

দেয়াল নির্মাণে বাজেট বরাদ্দ ইস্যুতে কংগ্রেসে ডেমোক্র্যাটদের সঙ্গে মতবিরোধের জের ধরে ২০ দিন ধরে ফেডারেল সরকারের একাংশের কাজকর্ম বন্ধ হয়েছে। গত ২২ ডিসেম্বর থেকে চলছে এ অচলাবস্থা। আট লাখের মতো ফেডারেল কর্মী কোনো বেতন পাচ্ছেন না।

কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদ এখন ডেমোক্র্যাটদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আর সিনেটে রিপাবলিকানদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকলেও প্রেসিডেন্টের দাবি অনুসারে বাজেট পাসে তা যথেষ্ট নয়। সিনেটে কমপক্ষে তা ৬০ ভোটে পাস হতে হবে। সেখানে রিপাবলিকানদের আসন রয়েছে ৫১। এদিকে ৫৭০ কোটি ডলার বাজেট পাস না হওয়ায় ট্রাম্প অন্যান্য বাজেটের নথিতে সই করা বন্ধ করে দিয়েছেন। এতে ফেডারেল সরকারের ২৫ শতাংশের অর্থ বরাদ্দ না হওয়ায় কাজকর্ম বন্ধ রাখা হয়েছে। সরকারি কর্মীদের ছুটিতে পাঠানো হয়েছে।

বেশির ভাগ রিপাবলিকান নেতা প্রেসিডেন্টের পক্ষে অবস্থান নিলেও কেউ কেউ এই অচলাবস্থা নিরসনে সমঝোতা চাইছেন।

সীমান্ত এলাকা থেকে মার্কিন সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর জব্দ করা অস্ত্র, মাদকদ্রব্য ও অর্থ প্রদর্শন করা হয় প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে। ছবি: এএফপি
সীমান্ত এলাকা থেকে মার্কিন সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর জব্দ করা অস্ত্র, মাদকদ্রব্য ও অর্থ প্রদর্শন করা হয় প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে। ছবি: এএফপি

অর্থ বরাদ্দের জন্য কংগ্রেসের অনুমোদন এড়াতে ট্রাম্প জরুরি অবস্থা ঘোষণা করলেও তা আইনি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্লেষকেরা। তাঁদের মতে, যুদ্ধ বা জাতীয় জরুরি প্রয়োজনে সামরিক নির্মাণ প্রকল্পের জন্য প্রেসিডেন্ট এভাবে সরাসরি অর্থ নিতে পারেন। তা না হলে সাংবিধানিক প্রক্রিয়া লঙ্ঘনের কারণে বিষয়টি নিশ্চিতভাবে আইনি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। অন্য খাতের জন্য কংগ্রেসের বরাদ্দকৃত তহবিল থেকেও দেয়াল নির্মাণের অর্থ সংগ্রহ করতে পারেন ট্রাম্প, তবে তাতে কয়েকজন রিপাবলিকান নেতারই আপত্তি রয়েছে।
ট্রাম্পের পক্ষে মত প্রকাশ করেছেন তাঁর ঘনিষ্ঠ রিপাবলিকান সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম। তিনি বলেছেন, ‘দেয়াল নির্মাণে অর্থের জন্য ট্রাম্পের জরুরি অবস্থা জারির ক্ষমতা প্রয়োগের সময় এসেছে।’
এর বিরোধিতা করে ডেমোক্র্যাট সিনেটর জো মানচিন বলেছেন, যদিও ট্রাম্পের জরুরি অবস্থা ঘোষণা হবে ‘ভুল’ পদক্ষেপ। তবে এ অচলাবস্থা নিরসনে প্রেসিডেন্টের সামনে এটাই হয়তো ‘একমাত্র পথ’।
জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে অর্থ নেওয়ার পদক্ষেপ থেকে রাজনৈতিক সুবিধাও পেতে পারেন ট্রাম্প। তিনি এর পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে বলতে পারবেন, অচলাবস্থা নিরসন এবং নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূরণে তাঁকে এই ব্যবস্থা নিতে হয়েছে।
তবে অর্থ পেতে ট্রাম্পকে আরেকটি উপায়ও বাতলে দিচ্ছেন তাঁর সহযোগীরা। সেটা হলো, পুয়ের্তো রিকোসহ দুর্যোগ এলাকায় পুনর্নির্মাণ প্রকল্পের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ থেকে দেয়াল নির্মাণে অর্থ নিতে পারেন।

ম্যাকঅ্যালেন স্টেশন পরিদর্শনে গিয়ে ট্রাম্প দেয়াল নির্মাণের প্রয়োজনীয়তার ওপর আবারও জোর দেন। সীমান্ত এলাকা থেকে সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর জব্দ করা অস্ত্র, মাদক ও অর্থ প্রদর্শন করা হয় সে সময়। তিনি বলেন, যদি কোনো বাধা না থাকে, এ ধরনের সমস্যার সমাধান করা যাবে না। দেয়াল না থাকলে লোকজনকে কঠিন পরিস্থিতির মুখে পড়তে হবে। ব্যাপক প্রাণহানির ঘটনা ঘটতে পারে।