নিজের সরকারের বিরুদ্ধে ট্রাম্পের 'হরতালের' ২০ দিন

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স

নিজের সরকারের বিরুদ্ধে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘হরতাল’ ২০ দিন হতে চলল। ফেডারেল সরকারের এক–চতুর্থাংশ এখনো মুখ থুবড়ে আছে। ৮ লাখ ফেডারেল কর্মচারী আজ শুক্রবার তাঁদের বেতনের চেক পাবেন না। হোয়াইট হাউসের প্রধান অর্থনীতিবিদ বলেছেন, ‘বন্ধের’ ফলে অর্থনীতিতে ক্ষতির পরিমাণ প্রতিদিন ১২০ কোটি ডলার। আর কত দিন সরকার বন্ধ থাকবে, এই বিষয়ে সাংবাদিকেরা তাঁকে প্রশ্ন করলে ট্রাম্প জানান, যত দিন লাগে।

অর্থাৎ যত দিন তিনি মেক্সিকোর সঙ্গে দেয়াল নির্মাণের জন্য ৫৭০ কোটি ডলার না পাচ্ছেন, তিনি কোনো বাজেট প্রস্তাবে স্বাক্ষর করবেন না। প্রতিনিধি পরিষদে বিরোধী ডেমোক্র্যাটরা পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন দপ্তর খুলে দেওয়ার লক্ষ্যে তাদের বাজেট মঞ্জুর করে প্রস্তাব গ্রহণ শুরু করেছে। কিন্তু সিনেটে রিপাবলিকান নেতা মিচ ম্যাককনেল বলেছেন, ট্রাম্প সম্মত না হওয়া পর্যন্ত প্রতিনিধি পরিষদে গৃহীত প্রস্তাব সিনেটে ভোটের জন্য উত্থাপন করবেন না। কংগ্রেসের উভয় কক্ষের সম্মতির পরেই কোনো প্রস্তাব প্রেসিডেন্টের স্বাক্ষরের জন্য প্রেরণ করা হয়ে থাকে।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জন্য মেক্সিকোর সঙ্গে দেয়ালের প্রশ্নটি একটি রাজনৈতিক অগ্রাধিকার হয়ে দাঁড়িয়েছে। নির্বাচনী প্রচারণার সময় তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর তিনি এই দেয়াল নির্মাণ করবেন, যার খরচ আসবে মেক্সিকো থেকে। ইতিমধ্যে তাঁর ক্ষমতা গ্রহণের দুই বছর হতে চলল, সে দেয়াল তৈরি হয়নি। এত দিন কংগ্রেসের উভয় কক্ষ রিপাবলিকানদের নিয়ন্ত্রণে ছিল, কিন্তু তা সত্ত্বেও তাঁর দাবিমতো অর্থ বরাদ্দ তিনি পাননি। এখন প্রতিনিধি পরিষদ বিরোধী ডেমোক্র্যাটদের হাতে। মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে এই দল ট্রাম্পের অভিবাসন–নীতির বিরুদ্ধে প্রচারণা চালিয়ে কংগ্রেসের নিম্নকক্ষের দখল ফিরে পেয়েছে। এখন ট্রাম্পের দাবিমতো অর্থ বরাদ্দের কোনো ইচ্ছাই তাঁদের নেই। স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি বলেছেন, দেয়ালের জন্য এক পয়সাও তাঁরা দেবেন না।

এ কথা স্পষ্ট, ট্রাম্প ও তাঁর বিরোধীদের জন্য দেয়ালের প্রশ্নটি একটি রাজনৈতিক ফুটবল খেলায় পরিণত হয়েছে। পরবর্তী নির্বাচন এখনো দুই বছর দূরে থাকলেও দ্বিতীয় দফা নির্বাচনের জন্য ট্রাম্প ইতিমধ্যেই ক্যাম্পেইন ইতিমধ্যে শুরু করেছেন। অবৈধ অভিবাসন প্রশ্নটি এবারও তাঁর ক্যাম্পেইনের কেন্দ্রবিন্দু হবে। কিন্তু প্রতিশ্রুত দেয়াল নির্মাণে ব্যর্থ হলে তাঁর অনুগত সমর্থকদের কাছে ট্রাম্প ‘নির্বোধ’ প্রমাণিত হবেন। এই যুক্তিতে তিনি নিজ সরকারের বিরুদ্ধে অবরোধ চালিয়ে যাচ্ছেন।

অন্যদিকে, বিরোধী ডেমোক্র্যাটদের সমর্থকদের মধ্যে ট্রাম্পবিরোধী মনোভাব এত প্রবল যে ট্রাম্প বিজয়ী হন, এমন কোনো পদক্ষেপেই তারা সম্মত হবে না। ডেমোক্র্যাটদের অনমনীয় মনোভাবে অন্য কারণ, অধিকাংশ আমেরিকান সরকার বন্ধের জন্য ট্রাম্পকেই দোষারোপ করছে।

এই বিপদের কথা ট্রাম্প যে জানেন না তা নয়, কিন্তু তিনি নিজেকে এই দেয়াল নিয়ে এতটা বাক্সবন্দী করে ফেলেছেন যে বেরোবার কোনো পথ খুঁজে পাচ্ছেন না। গত বুধবার তিনি কংগ্রেসের উভয় কক্ষের নেতাদের হোয়াইট হাউসে সলাপরামর্শের জন্য ডেকেছিলেন। কিন্তু দেয়াল প্রশ্নে ন্যান্সি পেলোসি কোনো পয়সা দেওয়া হবে না বলার পর ট্রাম্প বৈঠক থেকে উঠে পড়েন ও ‘বাই বাই’ বলে বেরিয়ে যান। পরে এক টুইটে তিনি জানান, আলাপ-আলোচনার নামে কেবল সময়ের অপচয় হয়েছে।

তাহলে এই সংকট শেষ হবে কি করে? অনেকের ধারণা, প্রেসিডেন্ট সম্ভবত জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে প্রতিরক্ষা দপ্তরের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ থেকে নিজের প্রয়োজনীয় অর্থ আদায় করে নেবেন। তেমন কোনো চেষ্টা করলে তিনি আইনি ঝামেলায় পড়বেন, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তা সত্ত্বেও তিনি এই পথ গ্রহণ করতে পারেন এবং তাঁর নিজের আরোপিত ‘অবরোধ’ সমাপ্ত ঘোষণা করতে পারেন। তাহলে অন্ততপক্ষে নিজের সমর্থকদের কাছে তিনি নিজেকে অভিবাসনবিরোধী ‘মহান যোদ্ধা’ হিসেবে চিহ্নিত করে ডেমোক্র্যাটদের সঙ্গে এই লড়াইতে জয়ী ঘোষণা করতে পারেন।

অন্য সম্ভাব্য চিত্রটি হলো, দেয়ালের বদলে সীমান্ত নিরাপত্তার জন্য ডেমোক্র্যাটরা ট্রাম্পকে তাঁর অনুরোধকৃত অর্থ দিতে সম্মত হওয়া। প্রতিদানে ট্রাম্প ও রিপাবলিকান পার্টি অভিবাসন প্রশ্নে ডেমোক্র্যাটরা যে দাবিগুলো করে আসছে, তার প্রতি সম্মতি প্রদান করতে পারে। এই দাবির অন্যতম হলো, ‘ডাকা’ নামে পরিচিত কর্মসূচির অধীনে বৈধ কাগজপত্রবিহীন তরুণ অভিবাসীদের বৈধতা প্রদান। ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ পরামর্শদাতা হিসেবে পরিচিত সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম এমন একটি সম্ভাবনা নিয়ে উভয় দলের সহকর্মীদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করছেন। বুধবার তিনি অর্ধডজন রিপাবলিকান সিনেটরদের সঙ্গে তাঁর পরিকল্পনা নিয়ে মতবিনিময় করেন।

সবাই একমত, ট্রাম্প অথবা ডেমোক্রেটিক নেতৃত্ব কাউকে না কাউকে ছাড় দিতে রাজি না হওয়া পর্যন্ত সংকটের সমাধান হবে না। তবে কাল অথবা এক মাস পর, এই সংকট যেভাবেই শেষ হোক, দেশের মানুষের স্বার্থের বদলে নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেওয়ায় তাঁদের কেউই নিজেকে শুদ্ধ দাবি করতে পারবেন না।