আমি রাশিয়ার এজেন্ট নই: ট্রাম্প

ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স
ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স

যুক্তরাষ্ট্রের হোয়াইট হাউসের লনে গতকাল সোমবার একজন সাংবাদিক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সরাসরি প্রশ্ন করেন, ‘মাননীয় প্রেসিডেন্ট, আপনি কি রাশিয়ার হয়ে কাজ করছেন?’ অবশ্য এই প্রশ্ন তিনি আগেও শুনেছেন। দুদিন আগে ট্রাম্পের অনুগত সমর্থক হিসেবে পরিচিত ফক্স নিউজের এক অনুষ্ঠানেও তাঁকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, তিনি কখনো রাশিয়ার পক্ষে কাজ করেছেন কি না। আমেরিকার প্রায় আড়াই শ বছরের ইতিহাসে এর আগে কোনো প্রেসিডেন্টকে এমন প্রশ্ন করা হয়নি। ১৯৭১ সালে রিচার্ড নিক্সন আমেরিকার ‘শত্রু’ হিসেবে পরিচিত চীন সফরে যান। তখন কেউ সন্দেহ করেনি তিনি চীনের এজেন্ট। তবে একমাত্র ব্যতিক্রম ট্রাম্প।

ফক্স নিউজের প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প সরাসরি কোনো উত্তর দেননি। শুধু বলেছিলেন, ‘আমাকে এমন প্রশ্ন করাটাও অপমানজনক।’ সেই উত্তর শোনার পরও গতকাল সাংবাদিকেরা তাঁকে সেই একই প্রশ্ন করা থেকে বিরত থাকেনি। এবার অবশ্য ট্রাম্প উত্তর দিয়ে বলেন, ‘আমি রাশিয়ার এজেন্ট নই। আমি কখনো রাশিয়ার হয়ে কাজ করিনি।’

রাশিয়ার সঙ্গে ট্রাম্পের সম্পর্ক নিয়ে সন্দেহ নতুন নয়। রাশিয়া ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পের হয়ে কাজ করেছে—এই অভিযোগের ভিত্তিতে বিশেষ কৌঁসুলি রবার্ট ম্যুলার দেড় বছরের বেশি সময় ধরে তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছেন।

গত কয়েক দিনে ট্রাম্পের সঙ্গে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ‘বিশেষ সম্পর্ক’ নিয়ে পরপর দুটি প্রতিবেদন ওয়াশিংটনের রাজনৈতিক মহলে রীতিমতো ভূমিকম্প সৃষ্টি করেছে। প্রথম প্রতিবেদনটি নিউইয়র্কে টাইমসের। এতে জানানো হয়, ট্রাম্প রাশিয়ার হয়ে কাজ করছেন কি না, তা খতিয়ে দেখার জন্য ক্ষমতা গ্রহণের পরপর এফবিআই একটি গোপন তদন্তের সূচনা করে। সাবেক এফবিআইপ্রধান জেমস কোমির পদচ্যুতির পর তাদের এই সন্দেহ আরও দৃঢ় হয়। রাশিয়া তদন্ত বন্ধে ট্রাম্পের অনুরোধ রাখতে অসম্মত হওয়ায় কোমিকে পদচ্যুত করা হয়।

দ্বিতীয় প্রতিবেদনটি ওয়াশিংটন পোস্টে বের হয়েছে। সেখানে বলা হয়, প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে তাঁর কী কথা হয়েছে, তা যাতে অন্য কেউ না জানতে পারে, সে জন্য ট্রাম্প কোনো সহকারী ছাড়া একান্তে সাক্ষাৎ করেন। ২০১৭ সালে প্রথম হামবুর্গে, পরে হেলসিঙ্কিতে একই ঘটনা ঘটে। হামবুর্গে পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাতের পর ট্রাম্প দোভাষীর কাছ থেকে তাঁর সব নথিপত্র কেড়ে নেন। সেগুলো এখন কোথায় কেউ জানে না। হেলসিঙ্কি বৈঠকের পর ট্রাম্প তাঁর দোভাষীকে অন্য কারও সঙ্গে আলোচনার বিষয়বস্তু নিয়ে কথা না বলতে নির্দেশ দেন। পররাষ্ট্র বিভাগের কোনো প্রতিনিধি না থাকায় তাঁদের দুজনের কী কথা হয়েছে, কেউ তা বলতে পারে না।

অধিকাংশ নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষক পুতিনের ব্যাপারে ট্রাম্পের ব্যবহার ‘সন্দেহজনক’ বলে মন্তব্য করেছেন। মার্কিন জাতীয় গোয়েন্দা বিভাগের সাবেক প্রধান জেমস ক্লাপার সিএনএনকে বলেছেন, কোনো সন্দেহ নেই, ট্রাম্প কিছু একটা লুকাতে চাইছেন। সাবেক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্ট্রোব ট্যালবট বলেছেন, আগে কখনোই কোনো প্রেসিডেন্ট কোনো বিদেশি নেতার সঙ্গে তাঁর কথোপকথন নিজের অধস্তনদের কাছ থেকে লুকানোর চেষ্টা করেননি। তিনি ওয়াশিংটন পোস্টকে বলেছেন, কোনো সহকারী না থাকায় পুতিনের পক্ষে ট্রাম্পকে নিয়ে ইচ্ছামতো ‘খেলার’ সুযোগ ছিল।

হোয়াইট হাউস থেকে অবশ্য যুক্তি দেখানো হয়েছে, সরকারের ভেতর থেকেই অনেক খবর গণমাধ্যমে ফাঁস হয়ে যাচ্ছে। তা ঠেকাতেই ট্রাম্পকে সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়েছে। কিন্তু তাই বলে নিজের দোভাষীর ‘নোট’ তিনি কেন কেড়ে নিয়ে নিজের কাছে রেখে দেবেন, তার ব্যাখ্যা পাওয়া যায় না।

নতুন কংগ্রেসের গোয়েন্দাবিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান এলিয়ট এঙ্গেল বলেছেন, এই দুই নেতার মধ্যে কী আলোচনা হয়েছে, তা তদন্তের জন্য তাঁরা একটি বিশেষ সাব-কমিটি করবেন। তিনি বলেছেন, ‘হেলসিঙ্কি বৈঠকের পর দীর্ঘ সময় কেটে গেছে। আমরা এখনো জানি না তাঁরা কী নিয়ে কথা বলেছেন। এ কথা ভাবলে আমাদের হতবুদ্ধি হতে হয়।’

ট্রাম্পের জন্য আরও মন্দ খবর আসছে আগামী মাসে। তাঁর দীর্ঘদিনের অপকর্মের সঙ্গী হিসেবে পরিচিত ব্যক্তিগত কৌঁসুলি মাইকেল কোহেন ৭ ফেব্রুয়ারি কংগ্রেসের সামনে এক উন্মুক্ত শুনানিতে অংশ নেবেন। অনেকেই বলেছেন, ট্রাম্পের জন্য ম্যুলার তদন্তের চেয়েও কোহেনের সাক্ষ্যভাষ্য অনেক বেশি ক্ষতিকর প্রমাণিত হতে পারে। রুশ ধনকুবেরদের অনেকে ট্রাম্পের মাধ্যমে অর্থ পাচারে জড়িত, এই সন্দেহ পুরোনো। আগামী মাসের শুনানিতে কোহেন এই গোপন সম্পর্কের অনেক অজ্ঞাত তথ্যই ফাঁস করতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ম্যুলার তদন্ত শেষ হলে রাশিয়া নিয়ে সব জল্পনাকল্পনার অবসান হবে। কিন্তু কবে সে তদন্ত শেষ হবে, তা স্পষ্ট নয়। এই তদন্তের অংশ হিসেবে ম্যুলার ট্রাম্পের সঙ্গে সরাসরি কথা বলতে চান, কিন্তু ট্রাম্প তাতে সম্মত হননি। নিজের আইনজীবীদের পরামর্শে ট্রাম্প এমন কোনো সাক্ষাৎকার দিতে অস্বীকার করেন। আইনজীবীদের ভয়, ট্রাম্প শপথ নিয়ে ম্যুলারের কাছে মিথ্যা তথ্য দিতে পারেন, যা তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হতে পারে। বিস্ময়ের ব্যাপার হলো, রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে একান্তে কথা বলতে ট্রাম্পের কোনো দ্বিধা নেই। কিন্তু তাঁর সরকারের বিচার বিভাগীয় তদন্তের জন্য মুখোমুখি সাক্ষাতে তাঁর ভয়। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে, ঠিক কী নিয়ে এত ভয় ট্রাম্পের?