কিং কং বনাম গডজিলা

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি।
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি।

মার্কিন কংগ্রেসের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির নেতৃত্বে একাধিক ডেমোক্রেটিক কংগ্রেস সদস্যের বৃহস্পতিবার বেলা তিনটা নাগাদ বিশেষ সামরিক বিমানে করে আফগানিস্তান যাওয়ার কথা ছিল। এ জন্য বাস যখন বিমানের উদ্দেশে ছাড়বে ছাড়বে করছে, সেই সময় অকস্মাৎ জানা গেল—প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পেলোসির বিমানযাত্রা আটকে দিয়েছেন।

পেলোসিকে লেখা এক চিঠিতে ট্রাম্প জানান, এখন ফেডারেল সরকারের কর্মবন্ধ চলছে। এই সময় বিদেশে ‘আনন্দ ভ্রমণে’ যাওয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই। পেলোসিকে ওয়াশিংটনে থেকে তাঁর (ট্রাম্প) সঙ্গে আলাপ-আলোচনায় অংশগ্রহণের পরামর্শ দেন প্রেসিডেন্ট।

এক দিন আগেই পেলোসি এ মাসের ২৯ তারিখ কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে ট্রাম্পের যে ‘স্টেট অব দ্য ইউনিয়ন’ ভাষণ দেওয়ার কথা, তা কার্যত বাতিল করে দেন। কর্মবন্ধের কারণে প্রেসিডেন্টসহ সব অতিথির নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অসম্ভব—এই যুক্তি দেন পেলোসি। কর্মবন্ধ শেষ না হওয়া পর্যন্ত এই ভাষণ বিলম্বিত করার প্রস্তাব রাখেন তিনি। বিকল্প হিসেবে ট্রাম্প লিখিতভাবে বা হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিস থেকে এই ভাষণ দিতে পারেন বলে প্রেসিডেন্টকে পরামর্শ দিয়েছিলেন পেলোসি।

পেলোসির ঢিলের জবাবে তাঁর বিদেশযাত্রা আটকে দিয়ে ট্রাম্প পাটকেলটি ছুড়লেন। অনেকেই ব্যাপারটাকে স্কুলছাত্রদের মধ্যে কাদা-ছোড়াছুড়ির সঙ্গে তুলনা করেছেন।

সিএনএনের এক প্রতিবেদক এই দুই নেতার কথা-যুদ্ধকে কিং কং ও গডজিলার মধ্যে মল্লযুদ্ধ বলে বর্ণনা করেছেন।

সমস্যা সমাধানের বদলে ডেমোক্রেটিক স্পিকার পেলোসিকে ‘হেনস্তা’ করার এই চেষ্টার সমালোচনা করেছেন অনেকে।

রিপাবলিকান সিনেটর লিন্ডসি গ্রাহাম বলেছেন, পেলোসি কাজটি ঠিক করেননি। কিন্তু তাঁর জবাবে ট্রাম্প যা করলেন, সেটাও মোটে ভালো কাজ হয়নি।

গ্রাহাম বলেছেন, একজন স্কুলবালকসুলভ ব্যবহার করলেন বলে তাঁর সঙ্গে সেই একই রকম ব্যবহার দিয়ে জবাব দিতে হবে, তা মোটেই কাম্য নয়।

তবে কোনো কোনো রিপাবলিকান নেতা ট্রাম্পের আচরণের পক্ষে সায়ও দিয়েছেন। সিনেটর জন করনাইন বলেছেন, পেলোসি যা করেছেন, তা অতি ক্ষুদ্র মনের পরিচায়ক। জবাবে প্রেসিডেন্ট যা করলেন, তা হলো—ঢিলের বদলে পাটকেল ছোড়া।

কর্মবন্ধের যুক্তি দেখিয়ে ট্রাম্প শুধু পেলোসির নয়, তাঁর মন্ত্রিসভার দুই সদস্যের সামরিক বিমানে করে যাত্রাও নিষিদ্ধ করেছেন। সপ্তাহান্তে তাঁদের দাভোস যাওয়ার কথা। তবে একই দিন ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্প সামরিক বিমানে যথাসময়ে ফ্লোরিডায় তাঁর অবকাশ ভবনে পৌঁছেছেন।

পেলোসি ও অন্যান্য কংগ্রেস সদস্য আফগানিস্তানে ‘আনন্দ ভ্রমণে’ নয়; বরং সে দেশে অবস্থানরত মার্কিন সেনাদের সেবার জন্য ধন্যবাদ জানাতে যেতে চাচ্ছিলেন। নিরাপত্তাজনিত কারণে এই সফরের খবর আগে প্রকাশ করা হয়নি। প্রচলিত নীতিমালা লঙ্ঘন করে ট্রাম্প সে সফরের খবর জনসমক্ষে ফাঁস করে দিলেন।

অধিকাংশ ভাষ্যকার এ বিষয়ে একমত যে, কর্মবন্ধের যুক্তিতে পেলোসির সফর আটকানোর যে যুক্তি ট্রাম্প দিয়েছেন, তার কোনো ভিত্তি নেই। ট্রাম্পের লক্ষ্য ছিল—পেলোসি ও তাঁর ডেমোক্রেটিক সমর্থকদের গালে চপেটাঘাত করা। তিনি খুব ভালো করেই জানেন, এমন একটি চপেটাঘাতে সবচেয়ে খুশি হবেন তাঁর অনুগত সমর্থকেরা।

বিস্ময়ের কিছু নেই যে, পেলোসিকে লেখা ট্রাম্পের চিঠিটিকে তাঁর শাসনামলের সেরা চিঠি বলে উল্লেখ করেছেন রক্ষণশীল ভাষ্যকার এরিক এরিকসন।

এই ইট-পাটকেল ছোড়াছুড়িতে আর যা-ই হোক ফেডারেল সরকারের চলমান কর্মবন্ধের ইতি টানার আলোচনায় বিন্দুমাত্র সাহায্য করবে না। এই কর্মবন্ধ ইতিমধ্যে ২৭ দিন অতিক্রম করেছে। কীভাবে সরকারি কাজকর্ম ফের শুরু হবে, সে ব্যাপারে কোনো পক্ষই নতুন কোনো প্রস্তাব উত্থাপন করেনি।