অচলাবস্থা নিরসনে ট্রাম্পের 'সমঝোতা'প্রস্তাব

ডোনাল্ড ট্রাম্প। ফাইল ছবি
ডোনাল্ড ট্রাম্প। ফাইল ছবি

যুক্তরাষ্ট্রে ফেডারেল সরকারের অচলাবস্থা নিরসনে ‘সমঝোতার’ জন্য বেশ কিছু প্রস্তাব তুলে ধরেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ট্রাম্পের প্রস্তাবগুলোর মধ্যে রয়েছে, অভিবাসন নীতি বিষয়ক ড্রিমারস ও টেম্পরারি প্রোটেকশন স্ট্যাটাসের (টিপিএস) মেয়াদ বাড়ানো। গতকাল শনিবার হোয়াইট হাউসের কূটনৈতিক অভ্যর্থনা কক্ষে দেওয়া বক্তব্যে ওই প্রস্তাবগুলো তুলে ধরেন তিনি। তবে ট্রাম্পের এসব প্রস্তাবও প্রত্যাখ্যান করেছেন ডেমোক্র্যাটরা।

আজ রোববার বিবিসি অনলাইনের খবরে বলা হয়, আংশিকভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়া ফেডারেল সরকারের কাজকর্ম (শাটডাউন) আবার চালু করতে ট্রাম্পের ‘সমঝোতা প্রস্তাবগুলোর’ একটি হচ্ছে কথিত ড্রিমার ইস্যু। বাবা-মায়ের সঙ্গে অবৈধভাবে কম বয়সে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশকারীদের ‘ড্রিমারস’ বলা হয়ে থাকে। তবে তিনি এখনো মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণে ৫৭০ কোটি ডলারই চাইছেন।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বক্তব্য শুরু করেন অভিবাসীদের নিয়ে। তিনি বলেন, অভিবাসীদের স্বাগত জানানোর ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের গর্বিত ইতিহাস রয়েছে। তবে দীর্ঘ দিন ধরে এই পদ্ধতি খুব বাজেভাবে ভেঙে পড়েছে। তাঁর প্রস্তাবের ব্যাপারে তিনি জানান, তিনি এই অচলাবস্থা ভাঙতে চান এবং শাটডাউনের সমাপ্তি টানতে কংগ্রেসে পথ বাতলে দিচ্ছেন।

ওই সময় ট্রাম্প দেয়াল নির্মাণে তাঁর যুক্তি তুলে ধরেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন, দেয়াল নির্মাণের কাজটি চলমান কিছু হবে না। শুধু বিশেষ কিছু এলাকায় একটি ইস্পাতের দেয়াল দেওয়া হবে। তবে এর জন্য আগের মতোই তিনি ৫৭০ কোটি ডলার অর্থ বরাদ্দ দাবি করেন।

যুক্তরাষ্ট্রে বাবা–মায়ের সঙ্গে কম বয়সে অবৈধভাবে প্রবেশকারী ড্রিমারস রয়েছে সাত লাখের মতো। তাঁরা এখন একটি কর্মসূচির আওতায় যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিতাড়ন হওয়া থেকে রক্ষা পাচ্ছেন। তাঁরা কাজের অনুমতি পান কিন্তু নাগরিকত্ব পান না। ট্রাম্প ক্ষমতায় এসে এই কর্মসূচি বাতিলের চেষ্টা করেছেন।

তবে নতুন প্রস্তাবে ট্রাম্প বলেছেন, তিনি এই কর্মসূচি আরও তিন বছর বাড়াবেন এবং কাজের অনুমতিও দেবেন। তিনি আরও বলেছেন, তিনি টিপিএসধারীদের ভিসা আরও তিন বছর বাড়াবেন। যুক্তরাষ্ট্রে তিন লাখ টিপিএসধারী রয়েছেন, যাঁরা যুদ্ধ বা বিপর্যয়ের কারণে দেশ থেকে পালিয়ে এসেছেন। টিপিএসের আওতায় তাঁরা কাজের অনুমতি পান। আগে ট্রাম্প এই কর্মসূচিও বাতিল করতে চেয়েছিলেন।

ট্রাম্পের প্রস্তাবের মধ্যে আরও রয়েছে মানবিক বিপর্যয়ে জরুরি সহায়তার জন্য ৮০০ মিলিয়ন ডলার প্রদান, ২ হাজার ৭৫০ জন সীমান্ত এজেন্ট ও নিরাপত্তা কর্মকর্তা নিযুক্ত করা এবং ৭৫টি নতুন অভিবাসী বিচারক দল গঠন। এই প্রস্তাবগুলো তাঁর পক্ষে অনেক বেশি যৌক্তিক সমঝোতা বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। তাঁর মতে, এই প্রস্তাবের মাধ্যমে আস্থা ও সুনাম প্রতিষ্ঠিত হবে।

এদিকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে কংগ্রেসে প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি এক বিবৃতিতে বলেছেন, আগেই প্রত্যাখ্যাত হয়েছে—এমন সব পদক্ষেপকে একত্র করে এই প্রস্তাব তৈরি করা হয়েছে। এর প্রতিটিই অগ্রহণযোগ্য। মানুষের জীবনের নিশ্চয়তা পুনঃস্থাপনে এই প্রস্তাবে আস্থা রাখা যায় না।

দেয়াল নির্মাণে বাজেট বরাদ্দ ইস্যুতে কংগ্রেসে ডেমোক্র্যাটদের সঙ্গে মতবিরোধের জের ধরে রেকর্ডসংখ্যক প্রায় এক মাস ধরে ফেডারেল সরকারের ২৫ শতাংশের কাজকর্ম বন্ধ রয়েছে। গত ২২ ডিসেম্বর থেকে চলছে এ অচলাবস্থা। আট লাখের মতো ফেডারেল কর্মী কোনো বেতন পাচ্ছেন না। এর মধ্যে সাড়ে তিন লাখ কর্মীকে ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। বাকিরা বিনা পারিশ্রমিকে কাজ চালিয়ে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। অর্থের এমন অনিশ্চয়তার মধ্যে হাজার হাজার কর্মী ইতিমধ্যে বেকার ভাতাসহ সুবিধাদি পেতে আবেদন করেছেন।

কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদ এখন ডেমোক্র্যাটদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আর সিনেটে রিপাবলিকানদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকলেও প্রেসিডেন্টের দাবি অনুসারে অর্থ বরাদ্দ অনুমোদনে তা যথেষ্ট নয়। সিনেটে কমপক্ষে তা ৬০ ভোটে পাস হতে হবে। সেখানে রিপাবলিকানদের আসন রয়েছে ৫১। এদিকে ৫৭০ কোটি ডলার বাজেট পাস না হওয়ায় ট্রাম্প অন্যান্য বাজেটের নথিতে সই করা বন্ধ করে দিয়েছেন। এতে ফেডারেল সরকারের ২৫ শতাংশের অর্থ বরাদ্দ না হওয়ায় কাজকর্ম বন্ধ রাখা হয়েছে।

আরও পড়ুন: