প্রযুক্তিতে বদলে যাওয়া জীবন

এই শহরে কিছুতেই সময়ের লাগাম টেনে ধরা যায় না। রেসের ঘোড়ার মতো বেপরোয়া ছুটেও অনেকেই সাংসারিক জীবনে স্বস্তির পেয়ালায় তৃপ্তির চুমুক দিতে পারেন না। কিছুটা স্বস্তি এনে দেয় মোবাইল ফোনের অ্যাপসের মাধ্যমে হোম ডেলিভারি। এখন আর কর্তার হাতে বাজারের ফর্দটা না দিলেও চলে। গিন্নি ঘরে বসে অথবা কাজের জায়গা থেকে ফেরার পথে বাসে, ট্রেনে বসে অর্ডার করেন নিজের পছন্দ মতো আর ঘরে পৌঁছবার কিছুক্ষণের মধ্যে বাজারও এসে হাজির হয় ঘরের দরজায়। অন্তত কিছু পরিবার বাজারের ঝামেলা থেকে মুক্তি পেয়ে গেছেন বিভিন্ন কোম্পানির হোম ডেলিভারির মাধ্যমে। শুধু এই অ্যাপস কোম্পানিগুলোকে বাড়তি কিছু টাকা দিতে হয়। তবুও শান্তি যে, অনেক সময় বেঁচে যায়। অফিস থেকে ফিরে আবার বাজার করার চিন্তা থেকে মুক্তি পেয়ে যাচ্ছেন অনেক পরিবার।
তেল, পেঁয়াজ, হলুদ, মরিচ গুঁড়ো থেকে শুরু করে জন্মদিনের কেক পর্যন্ত ঘরের দরজায় এসে পৌঁছে যায় ঠিক সময় মতো। যারা স্বামী–স্ত্রী দুজনেই চাকরি করেন এবং বাড়িতে বৃদ্ধ মা–বাবা অথবা ছোট বাচ্চা আছে, তারা নিজ অফিস থেকে অর্ডার করে খাবার অথবা ওষুধপত্র কয়েক মিনিটের মধ্যেই পাঠিয়ে দিচ্ছেন নিজের ঘরে। আবার বাড়ি ফিরে রান্না করতে ইচ্ছে হচ্ছে না, তো রেস্টুরেন্ট থেকে পছন্দের খাবার অর্ডার করে ডিনারটা সেরে নেন সহজে। অনেক সময় অ্যাপসের বিড়ম্বনাতেও পড়তে হয়।
দাউদ নামের এক ভদ্রলোক অ্যাপসের মাধ্যমে পণ্য ডেলিভারির কাজ করেন। তাঁর থেকে জানা গেল মজার কিছু অভিজ্ঞতার কথা। একবার তিনি পণ্য ডেলিভারি দিতে গিয়েছিলেন লং আইল্যান্ডে। নিরিবিলি রাস্তা ধরে জিপিএস তাকে বহু দূরে নিয়ে গেছে। উঁচু টিলার ওপর একটা বাড়ির লোকেশন দেখাচ্ছিল। বাড়িটা একটু উঁচু জায়গায় আর গাছগাছালি ঘেরা, এলাকাটাও নিরিবিলি। আশপাশে তেমন বাড়ি ঘর নেই বললেই চলে। তিনি গাড়ি থেকে অর্ডার করা পণ্যগুলো নামালেন, প্রায় ২০–২৫টি আইটেম ছিল। দরজায় দাঁড়িয়ে কয়েকবার কলিং বেল চেপেও কোনো সাড়া শব্দ পেলেন না। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর একজন বৃদ্ধ মহিলা দরজা খুললেন, খুব সম্ভবত আমেরিকান মহিলা, বয়স ৭০–৮০ বছর হবে।
দাউদ ওই বৃদ্ধাকে বললেন, ম্যাডাম আপনি যে সব বাজারের অর্ডার করেছিলেন সেগুলো নিয়ে এসেছি। মহিলা বললেন, কিছুক্ষণ আগেই তো আমি বাজারগুলো রিসিভ করলাম, আবার বাজার কেন? দাউদ ভেবেছিলেন, বৃদ্ধা বয়সের কারণে ভুল বলছেন। তাই তিনি বৃদ্ধাকে বললেন, আপনি হয়তো ভুল করছেন। এই যে দেখুন, সেল ফোনটা মহিলার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন, আমার নাম দাউদ। আমিই আপনার অর্ডার মতো বাজার করে নিয়ে এসেছি। তখন বৃদ্ধ মহিলা তাঁর সেলফোন বের করে দেখালেন এবং বললেন এই দেখ, দাউদ নামের একজন ইতিমধ্যে ডেলিভারি দিয়ে গেছে। শুধু পাঁচটা আইটেম কম এসেছে, তুমি বরং এক কাজ কর, ওই পাঁচটা আইটেম রেখে চলে যাও।
দাউদের কাছে ব্যাপারটা একটু ভৌতিক মনে হলো। তিনি সঙ্গে সঙ্গে কোম্পানিকে ফোন দিয়ে বিষয়টা জানালেন। বললেন, আমার নামে আরেকজন কীভাবে ডেলিভারি দিয়ে যায়? অ্যাপস কোম্পানি জানায়, তুমি ওই গ্রাহকের পাঁচটা আইটেম দিয়ে চলে এসো। আমরা ব্যাপারটা দেখছি। দাউদ কিছুতেই হিসাব মেলাতে পারছেন না। কী ভুতুড়ে কাণ্ডরে বাবা! ওনার গা ছমছম করছিল, কারণ সেটা ছিল হ্যালোইনের সপ্তাহ। পরে অবশ্য সব রহস্যের জট খুলে দিল অ্যাপস কোম্পানির কলসেন্টার থেকে আসা একটা কল। বিষয়টা হচ্ছে, বৃদ্ধা মহিলা একটা অর্ডার ভুল বসত দুবার করেছিলেন এবং দুই ডেলিভারিম্যানের কাছে অর্ডারটা চলে যায়। আর তারা দুজনই একই বাজার প্রায় কাছাকাছি সময়ের মধ্যেই নিয়ে আসেন। শুধু একজনের কাছে পাঁচটা আইটেম কম ছিল আর বৃদ্ধার মোবাইল ফোনে শুধু দ্বিতীয় অর্ডারটাই দেখাচ্ছিল, দাউদের নামের যে অর্ডার ছিল।
আবার কোনো অর্ডার নিতে অথবা দিতে দেরি হলে কোম্পানি তা বাতিল করে দেয়। যাই হোক, সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে সময় স্বল্পতার এবং বৈরী আবহাওয়ার এই দেশে অ্যাপস কোম্পানিগুলো আমাদের জন্য আশীর্বাদ হয়ে এসেছে। এই মাধ্যমে এই বৃদ্ধা মহিলার মতো আরও অনেক অসুস্থ নিরুপায় মানুষ কোনো ঝক্কি ঝামেলা ছাড়াই কিছু অর্থের বিনিময়ে ঘরে বসেই ক্রয় করতে পারছেন নিজের পছন্দ মতো প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র। এটাই বা কম কিসের! আশা করতে পারি, ভবিষ্যতে হয়তো প্রযুক্তির আরও নতুন নতুন দ্বার উন্মোচিত হবে আমাদের জন্য।