উত্তরের নকশার জন্য ভালোবাসা

সেদিন হঠাৎ বন্ধু মনিজার কল। ফোন করে বলছিল মাকসু তোমাকে কিন্তু আসতে হবে ১০ তারিখে... (আমার কিছু বন্ধু আমাকে ভালোবেসে মাকসু বলেই ডাকে)। জিজ্ঞেস করলাম কেন, কোথায়? মনিজা বলল, প্রথম আলোর “উত্তরের নকশা”র প্রথম জন্মদিন উপলক্ষে একটা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছি। বিশেষ করে এখানে তাঁরাই আসবে যাঁরা এই “উত্তরের নকশার” সঙ্গে জড়িত আছে নানা ভাবে। যেমন কেউ লেখা দিয়েছে, কেউ মডেল হয়েছে, কেউ রান্নার রেসিপি দিয়েছে...!!! মনিজা বলেই ফেলল তুমিও তো “উত্তরের নকশার” মডেল হয়েছিলে। তুমি অবশ্যই আসবে। হ্যাঁ, মনিজার কথায় বা দাওয়াত দেওয়ার মধ্যে বেশ আন্তরিকতা ছিল। সঙ্গে সঙ্গেই বলে ফেললাম আমি আসব। তোমার অনুষ্ঠান আমি অবশ্যই আসব। যদিও কাজ শেষ করে আসতে হবে, পরের দিন আবারও কাজ, তবুও খুব আনন্দের সঙ্গে দাওয়াত কবুল করলাম।
এমন একটা অনুষ্ঠানে শাড়ি পড়ব এটা খুবই স্বাভাবিক বিষয়। তবে কোন শাড়ি পড়ব শত ব্যস্ততার কারণে তা আর আগে থেকে ঠিক করা হলো না। সেদিন ছিল ১০ তারিখ। সময় মতো মনিজার দাওয়াতে রওনা হলাম বন্ধু বাঁধনের সঙ্গে। সেই দিন কাজ থেকে ফেরার পথে পড়লাম ভীষণ এক ঝামেলায়। থাক সেই কথা আজ না হয়, নাই বললাম। রেডি হতে হতে ভীষণ দেরি করে ফেলেছিলাম। এদিকে বাঁধন রেডি হয়ে আমাকে ৩/৪ বার ফোন করেও পাচ্ছিল না, শেষে আমি ওকে কল দিলাম, বললাম একটু সমস্যায় পড়েছি, আমি এখনো রেডি না প্লিজ আমাকে ১৫ মিনিট সময় দিতে হবে! সে বলল, ওকে আমি তোমার বাসার নিচেই আছি। ১৫ মিনিটের মধ্যে শাড়ি খুঁজে, ঝটপট সাজুগুজু করে বের হয়ে গেলাম। অনুষ্ঠানে পৌঁছালাম গিয়ে ঠিক ৬:১৫তে। তবে খুব একটা দেরি করিনি।
হল কানায় কানায় পূর্ণ। ছিমছাম সুন্দর গুছানো অনুষ্ঠান। পরিচিত সব মুখ, কি যে ভালো লাগছিল তা বলে বোঝানো যাবে না। অবাক কিছুটা হতেই হলো এমন একটা অনুষ্ঠান সাউন্ড সিস্টেম ছাড়া হওয়ার কারণে। পরে দেখলাম যে এত বড় একটা অনুষ্ঠানও সাউন্ড সিস্টেম ছাড়া এত আন্তরিকতার সঙ্গে শেষ করা যায়। মনিজাকে শুভেচ্ছা জানাব বলে কিছু ফুল নিয়ে গেলাম। যাওয়ার পরে তারা জায়গা করে দিল বসার জন্য। আমার কেবলই মনে হচ্ছিল আমি একজন অতিথি। সবাই বারবার জিজ্ঞেস করছিল, কি লাগবে? কি খাবে? বারবার নাশতা, বা খাবারের প্লেট হাতে তুলে দিচ্ছিল। ইব্রাহিম ভাই, মাযহার ভাই, রুপু ভাই, মনিজা, রওশন আপু, শেলী আপুর অতিথি আপ্যায়ন দেখে সেই দিন আমি মুগ্ধ হয়েছি খুব। মাইক্রো ফোন ছাড়াই সাবলীল উপস্থাপনা করল আমাদের প্রীতি। একের পর এক সবাই শুভেচ্ছা জানাল “উত্তরের নকশার” মনিজাকে। আমিও এর মাঝে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানালাম।
বার ঘোষণা দেওয়া হলো কেউ যাবেন না প্লিজ, শেষ পযর্ন্ত থাকবেন সবাই। মজার মজার খাবার আছে, সবাই ডিনার করে যাবেন। আছে সাজ আর রান্নার পুরস্কার। আছে দামি দামি সব গিফট। রুখসান আরা, রেখা আহমেদ, আর সামসাদ হুসাম আপাকে দায়িত্ব দেওয়া হলো সুন্দর সাজের মুখগুলোকে খুঁজে বের করতে। এদিকে সবাই যে যার মতো করে আনন্দ করছে, ছবি তুলছে , কেউ আবার সেলফি। এরই মাঝে গান হলো, কবিতা হলো, হলো ধুমধাম করে সবাই মিলে নকশার জন্মদিনের কেক কাটা। এরই মাঝে ইব্রাহিম চৌধুরী ভাই ঘোষণা দিলেন, যাঁরা বিজয়ী হয়েছেন একে একে সবাই স্টেজে আসুন। নামগুলো হলো (১) মাকসুদা আহমেদ, (২) শাম্মী আক্তার হ্যাপী, (৩) লুবনা কাইজার ও (৪) কামরুন্নাহার ডলি। আহা! আনন্দের বন্যা বইছিল যেন। অতঃপর আমাদের সবাইকে পুরস্কৃত করলেন আয়োজকেরা। সবশেষে ডিনার করে বুক ভরা আনন্দ নিয়েই বাড়ি ফিরলাম সবাই। শুভ কামনা আর ভালোবাসা রইল উত্তরের নকশার জন্য। বারবার যেন ফিরে আসে এমন দিন আমাদের মাঝে। অসংখ্য অসংখ্য ধন্যবাদ প্রথম আলো ও প্রথম আলোর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে। বিশেষ ধন্যবাদ বন্ধু মনিজাকে।