উদ্বেগ ও ভয়কে জয় করুন

উদ্বিগ্নতা: যেসব জিনিস পাওয়ার জন্য (বা সমস্যা সমাধানের জন্য) আমরা কোনো প্রকার পরিকল্পনা তৈরি করতে পারি না এবং যে সব পাওয়া (বা সমস্যার সমাধান) আমাদের জানাশোনা বা নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকে, সেসব জিনিস পাওয়ার আশায় (বা সমাধানের আশায়) দুশ্চিন্তা করতে করতে আমাদের মনের যে পরিস্থিতি তৈরি হয় তা-ই হলো উদ্বিগ্নতা। “উদ্বিগ্নতার অনুভূতি কেমন?” - একজন উদ্বিগ্ন মানুষই শুধু এই প্রশ্নের উত্তর বুঝবেন, তবে কাউকে বোঝানো তাঁর খুব কষ্ট হবে।
চাকরির জন্য মৌখিক পরীক্ষা বা ভিসা ইন্টারভিউতে গেলে কী প্রশ্নের সম্মুখীন হতে পারেন তা শুধুই সম্ভাব্য। কী জিজ্ঞাসা করতে পারে? কী উত্তর দেব? না পারলে কী হবে? এসব ভাবতে ভাবতে মানুষের মনে যদি কোনো দুশ্চিন্তা বা ভয় কাজ করে তখন তাঁর মানসিক অবস্থাই হলো উদ্বিগ্নতা। উদ্বিগ্নতা মোটামুটি অন্ধকারে ভয় পাওয়ার মতো। কারণ আমরা আসলে অন্ধকার নিয়ে তেমন ভাবি না। অন্ধকারের ফলে আমাদের যেসব সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে তা নিয়ে ভাবতে ভাবতে আমাদের মনে যে দুশ্চিন্তার তৈরি হয় তাই উদ্বিগ্নতা। বস্তুত, আমরা জানিই না আমাদের কী সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে। ভূত আসবে না বাঘ আসবে কেউ বলতে পারি না, কারণ এক একজনের ভয় এক এক রকম!
মানুষ দৈনন্দিন জীবনে উদ্বিগ্ন হতেই পারেন। তবে সেই উদ্বিগ্নতা স্থায়ী হলেই সমস্যা। কারণ উদ্বিগ্ন মানুষের রক্তচাপ বেশি থাকে এবং উদ্বিগ্ন অবস্থায় মানুষের মস্তিষ্ক ভালোভাবে কাজ করতে পারে না। তাই উদ্বিগ্নতা নিয়ন্ত্রণ করতে নিচের পদ্ধতিগুলো চেষ্টা করে দেখতে পারেন।
১। যা আপনার হাতে তা ভালোভাবে করুন। ‘কী হবে’- তা সব সময় আপনার হাতে না থাকলেও চেষ্টা ও প্রস্তুতি কিন্তু আপনার হাতে। উদাহরণ: চাকরির জন্য মৌখিক পরীক্ষা বা ভিসা ইন্টারভিউর প্রস্তুতি যেহেতু আপনার হাতে, তাই সেটা ভালোভাবে করুন।
২। কখনো যাতে নিজেকে দোষারোপ করতে না হয় সেদিকে নজর দিন। উদ্বিগ্ন থাকলে আপনি জানা জিনিসও ভুল করতে পারেন। তখন নিজেকে দোষারোপ না করতে এখন নিজেকে সহজ রাখার চেষ্টা করুন।
৩। ভালোভাবে চেষ্টা করে থাকলে কর্মফল আপনার ভাগ্যের ওপর ছেড়ে দিন। কারণ ফল নিয়ে চিন্তা না করলে আপনি কখনোই উদ্বিগ্ন হবেন না।
৪। কী সমস্যা তৈরি হবে, সেটা না ভেবে বর্তমান সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করুন। উদাহরণ: অন্ধকারে কী সমস্যা তৈরি হতে পারে সেটা না ভেবে অন্ধকার দূর করার চেষ্টা করুন।
৫। বসে চুমুক চুমুক করে পানি পান করুন, উদ্বিগ্নতা কমবে।
৬। কোনো হাস্যরসের কৌতুক দেখুন বা আপনার ভালো লাগার কোনো মুহূর্ত স্মৃতিচারণ করুন।
৭। দিনে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত সমানভাবে উদ্বিগ্ন থাকলে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
ভয়: যেসব দুশ্চিন্তার কারণ মানুষ জানে সেসব দুশ্চিন্তাই হলো ভয়। উদ্বিগ্নতা আর ভয়ের পার্থক্য হলো একজন উদ্বিগ্ন মানুষ তার উদ্বিগ্নতার কারণ জানেন না। কিন্তু একজন ভিতু মানুষ তাঁর ভয়ের কারণ জানেন। উদাহরণস্বরূপ: অন্ধকারে হাঁটার সময় একজন উদ্বিগ্ন মানুষও দুশ্চিন্তা করেন এবং একজন ভিতু মানুষও দুশ্চিন্তা করেন। পার্থক্য হলো একজন উদ্বিগ্ন মানুষ জানেন না তিনি কীসের জন্য অন্ধকার নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত। সেটা হতে পারে ভূতের ভয় বা সাপের ভয় বা অন্য কিছুর ভয়। অন্যদিকে একজন ভিতু মানুষ জানেন তিনি কীসের ভয় পাচ্ছেন। তাই, একজন উদ্বিগ্ন মানুষ ভীত হতে পারেন। তবে, একজন ভিতু মানুষ উদ্বিগ্ন হবেন না কারণ তিনি তাঁর ভয়ের কারণ জানেন।
ভয় জিনিসটা কেমন সেটা ব্যাখ্যা করতে একটা পুরোনো কৌতুকের কথা বলতে হয়। কৌতুকটা এ রকম। একজন লোক বিরামহীনভাবে তাঁর হাতের আঙুল দিয়ে ঠুনকি দিচ্ছিল। তা দেখে তার এক বন্ধু জিজ্ঞাসা করছিল সে কেন এমন করছিল। উত্তরে লোকটি ভিতু কণ্ঠে বলল, ‘হাতিগুলোকে দূরে সরাতেই আমি সেটা করছি’। লোকটির বন্ধু আশ্চর্যজনকভাবে বলল, ‘আশপাশে এক হাজার মাইলের মধ্যে তো কোনো হাতি থাকার কথাই নাই।’ লোকটি তখন একটু সাহস নিয়ে বলল, ‘ঠিক, ঠুনকিগুলো কত সুন্দর কাজ করে!’ লোকটি তখন আঙুলের ঠুনকির মাত্রা আরও বাড়িয়ে দিল।
আপনি হয়তো বলবেন হাতিকে ভয় পাওয়ার কী আছে! এই প্রশ্নের উত্তর হয়তো যে হাতিকে ভয় পায় সে-ই ভালোভাবে দিতে পারবে। তবে, আমি নিজে অনেক মানুষকে দেখেছি যাঁরা সাপের ভয় পান। তাঁদের সাপের ভয় পেতে কোনো বনে-জঙ্গলে যেতে হয় না। নিউইয়র্কের ম্যানহাটনে দাঁড়িয়েও আমি তাঁদের সাপের ভয় পেতে দেখেছি। সাপে কামড় দিতে পারে সেই ভয়ে কেউ কেউ বিমানে ঘুমাতে পারেননি—এমন গল্পও শুনেছি। তাই ভয়ের কারণ কী সেটা বলা অনেক কঠিন। তবে এসব ভয় থেকে একজন ভিতু মানুষকে মুক্তি দিতে কিছু পদ্ধতি চেষ্টা করে দেখতে পারেন
১। কখনো বলবেন না তাঁদের ভয়ের কারণ অতি নগণ্য বা ভুল। এতে তাঁদের আপনি বুঝতে পারবেন না।
২। তাঁরা এখন কি ভয় পাচ্ছেন সেটা জিজ্ঞাসা করবেন না। কারণ এতে তাঁদের ভয় আরও বাড়তে পারে।
৩। জিজ্ঞাসা করুন তাঁরা সাধারণত কিসে বেশি ভয় পান। উত্তরে স্বাভাবিকভাবেই তাঁরা তাঁদের ভয়ের কারণ বলবেন।
৪। ভয়ের কারণ সরানোর চেষ্টা করুন। উদাহরণ: কেউ যদি অন্ধকারে ভূতের ভয় পান, অন্ধকার সরানোর চেষ্টা করুন।
আর আপনি নিজেই যদি কোনো কিছুতে ভিতু থাকেন তবে
১। ভয়কে জয় করার জন্য আপনি মনে মনে কোনো পদ্ধতি বের করুন।
২। অন্য কেউ সমান ভয় পেলে তাঁদের ভয় কীভাবে দূর করবেন সেটা ভাবুন।