শেষ পর্যন্ত জরুরি অবস্থাই ঘোষণা করতে যাচ্ছেন ট্রাম্প!

ডোনাল্ড ট্রাম্প
ডোনাল্ড ট্রাম্প

মেক্সিকোর সঙ্গে পরিকল্পিত সীমান্ত দেয়ালের অর্থ বরাদ্দে শেষমেশ জাতীয় জরুরি অবস্থা ঘোষণার পথই বেছে নিতে যাচ্ছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ নিয়ে এত দিন ঝেড়ে কাশেননি তিনি। হোয়াইট হা্উসের বিবৃতিতে জানানো হয়, শেষ পর্যন্ত সে পথেই হাঁটতে যাচ্ছেন ট্রাম্প।

আজ শুক্রবার বিবিসি অনলাইনের খবরে জানানো হয়, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর পরিকল্পনা অনুসারে যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছে হোয়াইট হাউস। এক বিবৃতিতে হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, কেন্দ্রীয় সরকারের অচলাবস্থা বা শাটডাউন ঠেকাতে তিনি ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকানদের ঐকমত্যের ভিত্তিতে আসা সীমান্ত নিরাপত্তা বিলে সই করবেন। তবে জরুরি অবস্থা ঘোষণার মাধ্যমে কংগ্রেসকে পাশ কাটিয়ে দেয়াল নির্মাণে সামরিক তহবিলের অর্থ ব্যবহার করবেন।

গতকাল বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউসের তথ্যসচিব সারাহ স্যান্ডার্স বলেন, দেয়াল নির্মাণ, সীমান্ত সুরক্ষা ও দেশের নিরাপত্তা রক্ষায় প্রেসিডেন্ট তাঁর প্রতিশ্রুতির কথা আবারও তুলে ধরেছেন। এ ক্ষেত্রে জরুরি অবস্থাসহ প্রেসিডেন্ট অন্য নির্বাহী ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারেন।

প্রতিক্রিয়ায় ডেমোক্রেটিক দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা এটাকে প্রেসিডেন্টের ‘ক্ষমতার বড় ধরনের অপব্যবহার’ ও ‘বেআইনি কর্মকাণ্ড’ বলে মন্তব্য করেছেন।

যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তে বাজেট ইস্যুতে বিতর্কের জেরে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে রেকর্ডসংখ্যক ৩৫ দিন বন্ধ ছিল ফেডারেল সরকারের একাংশের কাজকর্ম (শাটডাউন)। অর্থ বরাদ্দ না পেয়ে ফেডারেল সরকারের আট লাখ কর্মী বিনা বেতনে দিনযাপন করেছেন। এ নিয়ে দফায় দফায় বিক্ষোভ করেছেন ফেডারেল কর্মীরা। পরে রাজনৈতিক চাপের কাছে নতিস্বীকার করে ২৫ জানুয়ারি ফেডারেল সরকারের চাকা আবার সচল করেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তবে ফেডারেল সরকারকে ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অর্থ বরাদ্দ দেন ট্রাম্প। তাঁর দাবি অনুসারে কংগ্রেস অর্থ বরাদ্দ না পেলে ফের শাটডাউনের হুমকি দেন তিনি।

রিপাবলিকান এই প্রেসিডেন্ট দেয়াল নির্মাণে ৫৭০ কোটি ডলার না পেলে কোনো ধরনের বাজেট নথিতে সই করবেন না বলে জানিয়েছিলেন। সীমান্তে দেয়াল নির্মাণের বিষয়টি তাঁর নির্বাচনী অঙ্গীকার ছিল। তবে প্রতিনিধি পরিষদের নিয়ন্ত্রণ নেওয়া ডেমোক্র্যাটরা ট্রাম্পের চাহিদা অনুযায়ী অর্থ দিতে অস্বীকৃতি জানান।

কেন্দ্রীয় সরকারের দ্বিতীয় দফা অচলাবস্থা এড়াতে ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকানদের ঐকমত্যের বিলটি গতকাল বৃহস্পতিবার কংগ্রেসে পাস হয়েছে। ট্রাম্প বিলটি সই করার পরপরই তা আইনে কার্যকর হবে। তবে এই বিলে দেয়াল নির্মাণের অবকাঠামো খাতে ১৩০ কোটি মার্কিন ডলার দিতে সম্মতি প্রকাশ করা হয়েছে, যা ট্রাম্পের পরিকল্পনা অনুসারে দেয়াল নির্মাণের জন্য দাবি করা অর্থের চেয়ে অনেক কম।
সিনেটে বিলটি ৮৩-১৬ ভোটে পাস হয়। পরে বিলটি ৩০০-১২৮ ভোটের ব্যবধানে প্রতিনিধি পরিষদেও পাস হয়।

বিলটি পাসের সময় সিনেটে রিপাবলিকান নেতা মিচ ম্যাককনেল জরুরি অবস্থা ঘোষণার পক্ষে তাঁর সমর্থন থাকার আভাস দেন। তিনি বলেন, সীমান্ত সুরক্ষা আরও জোরদার করতে প্রেসিডেন্ট বৈধভাবে যেকোনো ব্যবস্থা নিতে পারেন।

অন্যদিকে প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ডেমোক্র্যাট নেতা ন্যান্সি পেলোসি ডেমোক্র্যাটদের উদ্দেশে বলেছেন, প্রেসিডেন্ট জরুরি অবস্থা ঘোষণা করলে ডেমোক্র্যাটদের উচিত একে আইনিভাবে চ্যালেঞ্জ করা।
ন্যান্সি পেলোসি ও ডেমোক্রেটিক নেতা চাক শুমার এক যৌথ বিবৃতিতে নিন্দা জানিয়ে বলেন, জরুরি অবস্থা ঘোষণা হবে বেআইনি এবং প্রেসিডেন্টের ক্ষমতার বড় ধরনের অপব্যবহার।

যুক্তরাষ্ট্রে জাতীয় সংকটের সময় প্রেসিডেন্ট জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে ট্রাম্পের ভাষায় যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তে জড়ো হওয়া অভিবাসীদের কারণে সংকট তৈরি হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, স্বাভাবিক রাজনৈতিক প্রক্রিয়াকে পাশ কাটিয়ে বিশেষ ক্ষমতাবলে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে পারেন প্রেসিডেন্ট। জরুরি অবস্থা ঘোষণার মাধ্যমে দেয়াল নির্মাণে সামরিক বা দুযোর্গ তহবিলের জন্য বরাদ্দ করা বাজেট থেকে অর্থ নিতে পারবেন প্রেসিডেন্ট।