রাগ নিয়ন্ত্রণ করার উপায়

ভূমিকম্পে/নদীর ভাঙনে কারও ঘর-বাড়ি বিলীন হয়ে গেলেও কাউকে রাগ করতে দেখছেন কখনো? মোটেই না। কারণ? সম্ভবত এতে কাউকে দোষারোপ করার সুযোগ থাকে না বলে। কিন্তু কেউ একজন যদি আপনার সামান্য একটা শখের ফুলগাছ উপড়ে ফেলে? খুব রাগ হয়। তাই না? কারণ এতে অন্যকে দোষারোপ করার সুযোগ থাকে। কাজেই, কোনো কিছু না পেলে বা কোনো সমস্যায় পড়লে বা কোনো কিছুর ক্ষতি হলে মানুষ যদি অন্য কাউকে দোষারোপ করার সুযোগ পায় তখন তাঁর উত্তেজিত মানসিক অবস্থাকেই রাগ/ক্রোধ বলে। কী করতে পারে এই রাগ? এটা মানুষকে সম্পূর্ণই ধ্বংস করে দিতে পারে। কারণ রাগের মাথায় মানুষের হিতাহিত জ্ঞান থাকে না। মানুষের রক্তচাপ বৃদ্ধি পায়, হার্ট ফেল করতে পারে, স্ট্রোক করতে পারে বা এমনকি মানুষ মানুষকে খুন পর্যন্তও করতে পারে। তাই, আসুন দেখি রাগ নিয়ন্ত্রণ করার কী উপায় আছে।
১. মানুষ একা একা খুব বেশি রাগ করতে পারে না। তাই, রাগ উঠলে দেখবেন মানুষ তাঁর ঘর থেকে ঝড়-গতিতে বের হয়ে উত্তেজিত সুরে কথা বলছে। এমতাবস্থায়, তাঁর সঙ্গে কোনো কথায় জড়াবেন না। মনে রাখবেন, আপনি কোনো কথা/তর্কে না জড়ালে এই রাগ বেশি সময় স্থায়ী হবে না, আস্তে আস্তে কমে যাবে।
২. রাগ কমলে কোনো এক সময় ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করুন আপনি যত বিষয়ে রাগ করে অন্যকে দোষারোপ করেন সেসব বিষয়ে আপনার কোনো লাভ হয় কি না। যদি কোনো লাভ না হয়, তবে পরবর্তী সময়ে রাগ না করার জন্য এখন থেকে নিজেকে তৈরি করার প্রস্তুতি নিন। মনে রাখবেন, রাগ করে কোনো লাভ না হলেও ক্ষতি কিন্তু হচ্ছে আপনারই। কারণ আপনি উত্তেজিত হচ্ছেন।
৩. ট্রাফিক জ্যামে আটকে থেকে রাগ হয় খুব? আপনার সামনে যাঁরা জ্যামে আটকে আছেন তাঁরাও নিঃসন্দেহে জ্যামে থেমে থাকতে চান না। তাই, আপনি রাগ করে উচ্চ শব্দে হর্ন দিয়ে অন্যদেরও রাগান্বিত করে পরিস্থিতি গরম করে কোনো লাভ আছে? এসব কিছু কিছু রাগের খুবই সহজ সমাধান হলো ধৈর্য। আর ‘ধৈর্য’ হচ্ছে রাগ না করে আপনার অপেক্ষা করার ক্ষমতা। ধৈর্য যে খুবই বড় গুন তা সম্পর্কে কারও কোনো সন্দেহ নাই। তবে, মনে মনে রাগ করলে আপনি তা প্রকাশ করেন আর নাই করেন সেটা হবে আপনার এক তিক্ত অপেক্ষা। কখনোই তা ধৈর্য বলে গণ্য হবে না।
৪. ব্যাংক কাউন্টার বা অন্য কোনো লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে রাগ হয়? রাগ, চেঁচামেচি বা সার্ভিস কাউন্টারে কাজের অদক্ষতার সমালোচনা করে কোনো লাভ হবে? তাই এসব না করে যদি পারেন তবে অন্য কারও সঙ্গে কথা বলে সার্ভিস কাউন্টারে অতিরিক্ত লোককে সেবা দেওয়ার জন্য অনুরোধ করুন। যদি এসব কিছুই সম্ভব না হয়, তবে তার চেয়ে ভালো সার্ভিস খোঁজ করে সেখানে যান। তবুও রাগ করবেন না। কারণ রাগ করলে আপনারই ক্ষতি। আপনার মতো সবাই অন্য জায়গায় সার্ভিস নিতে গেলে আস্তে আস্তে এই কম-দক্ষতার কাউন্টার হয় ব্যবসা বন্ধ করবে, না হয় তাঁদের দক্ষতা বাড়াবে বা অতিরিক্ত লোক নিয়োগ করবে।
৫. কিছু কিছু ক্ষেত্রে কোনো বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় ওপরের ৪নম্বর পদ্ধতি কাজ করে না। যেমন: ভিসা বা ইমিগ্রেশন সিস্টেম। আপনি হয়তো চাইলেই আজই আমেরিকার ইমিগ্রেশন পদ্ধতি খুবই দ্রুত সেরে ফেলতে পারবেন না। সে ক্ষেত্রে আপনি কী পারবেন সেটার ওপর গুরুত্ব দিন। উদাহরণস্বরূপ: আপনার প্রিয়জনকে ভিসা দিতে দেরি করায় রাগ হচ্ছে খুব? সে ক্ষেত্রে আপনার প্রিয়জনের জন্য অপেক্ষা না করে আপনি নিজেই গিয়ে আপনার প্রিয়জনকে দেখে আসুন। এসব ক্ষেত্রে একটা না একটা পথ খোলা থাকবেই আপনার কাছে সব সময়।
৬. রাগ করলে পরিস্থিতি তেমন ভয়াবহ না হলেও অন্তত সম্পর্ক খারাপ হয়ে যায়। কাজেই, চিন্তা করুন সামান্য সময়ের জন্য রাগ করে সারা জীবনের সম্পর্ক খারাপ করা কি ঠিক? আর আপনি এটা চাইলেই মুহূর্তের মধ্যেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারতেন।
৭. এই পৃথিবীর কোনো সিস্টেমই ১০০শতাংশ পারফেক্ট নয়। আপনার কাছে আমাকে ১০০শতাংশ পারফেক্ট মনে হলেও আমি কিন্তু অন্যের কাছে ১০০শতাংশ পারফেক্ট নই। তাই অযথা রাগ করে কী লাভ? কারণ রাগ করে সেসব মানুষ/সিস্টেমকে পারফেক্ট করতে পারবেন না। তবে, কর্মক্ষমতা বা গুণগত মান বাড়াতে ধৈর্য ধরে পরামর্শ দেন। সেটা অনেক কাজে আসবে।
৮. দৃষ্টিভঙ্গি বদলানোর চেষ্টা করুন। যাঁর ওপর রাগ হচ্ছে তাঁর জায়গায় আপনাকে বসিয়ে দেখুন আপনি কী করতেন। তাঁর পরিস্থিতিও বোঝার চেষ্টা করুন। এরপরও যদি মনে করেন আপনি তাঁর চেয়ে ভালো করতেন, তবে ভাবুন সব সমান না। নিশ্চয়ই এই পৃথিবীতে কেউ না কেউ আছে যে আপনার চেয়েও ভালো করবে। সে কি আপনার ওপর রাগ করছে? না। তাহলে আপনি রাগ করছেন কেন?
৯. আপনি রাগ করলে আপনার রাগের জন্য আপনাকে কেউ কোনো কিছু না বললেও, আপনার ওপর কেউ সন্তুষ্ট থাকবে না। তাঁরা আপনার এ রাগের জন্য শাস্তি না দিলেও আপনার রাগই আপনাকে অটোমেটিক শাস্তি দেবে। প্রথমে অনুশোচনার মাধ্যমে মানসিক শাস্তি এবং পরে অসুখের মাধ্যমে শারীরিক শাস্তি।
১০. কোনো কিছু ঠিক করার জন্য যদি কৃত্রিম রাগ দেখাতে হয় তবে পরে তা বুঝিয়ে বলুন। তা না করলে আপনার সম্পর্কে অন্যের ধারণা বদলে যাবে।
পরিশেষে এটাই বলতে চাই, কুকুর পায়ে কামড় দিলেও মানুষ হয়ে যেমন কুকুরের পায়ে কামড় দেওয়া শোভা পায় না। ঠিক তেমনি কেউ রাগ করে আপনার ওপর চড়াও হলেও আপনি যদি নিজেকে সৃষ্টির সেরা মানুষ মনে করেন তাহলে তাঁর ওপর রাগ করবেন না। কারণ রাগ করলে এই পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে। এমনকি মারামারিও হতে পারে। কুকুর বা অন্য কোনো হিংস্র প্রাণীর মতো! সে ক্ষেত্রে আপনি যাই বলেন না কেন, অপর পক্ষ সেটা না বুঝলে নীরব থাকুন এবং এক নম্বর পদ্ধতি আবার পড়ুন। রাগ কমে যাওয়ার পরে অপর পক্ষ তাঁর ভুল বুঝতে পেরে লজ্জিত হবে এবং আপনার কাছে ক্ষমাও চাইতে পারে। এই পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করার পরেও যদি আপনার রাগ না কমে তবে অন্যের ওপর রাগ না করে আমার ওপর রাগ করুন। আমি বাজি রেখে বলতে পারি আমি কিছু না করেই চুপচাপ বসে থেকে আপনার রাগ কমিয়ে দেব।