পুত্রকে লেখা শহীদ বুদ্ধিজীবীর শেষ চিঠি

[১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ ছিল বাঙালির শ্রেষ্ঠ অর্জন। কারণ এই যুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাঙালি তার আত্মপরিচয়কে খুঁজে পেয়েছিল। তবে একটি স্বাধীন দেশ আর স্বাধীন দেশের পতাকা অর্জন এত সহজ ছিল না। এ জন্য প্রাণ দিতে হয়েছিল ৩০ লাখ বাঙালিকে। ২৫ মার্চ কালো রাত থেকেই পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা বাঙালিকে মেধাশূন্য করতে তৎপর হয়েছিল। দেশ স্বাধীন হওয়ার মাত্র পাঁচদিন আগে ১০ ডিসেম্বর শুরু হয় আরেক দফা বুদ্ধিজীবী হত্যা। হায়েনারা ১০ ডিসেম্বর ধরে নিয়ে যায় প্রথিতযশা সাংবাদিক সিরাজউদ্দীন হোসেনকে। তাঁকে আর পাওয়া যায়নি। তিনি ছিলেন দৈনিক ইত্তেফাকের বার্তা সম্পাদক এবং ১৯৭০ সালে নির্বাহী সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন। এই শহীদ সাংবাদিকের নিউইয়র্কপ্রবাসী ছেলে ফাহীম রেজা নূরও একজন সাংবাদিক। পাশাপাশি লেখক ও সংগঠক। আজকের মুক্তিযুদ্ধের গল্পমালায় তিনি ১৯৭১ সালের সেই উত্তাল সময়ের গল্প আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন। তাঁর গল্পের প্রতিটা শব্দের ভাঁজে ফুটে উঠেছে মুক্তিযুদ্ধকালের এক অসাধারণ চিত্র। সেই চিত্রে যেমন ধরা পড়েছে তাঁর শহীদ সাংবাদিক বাবা সিরাজউদ্দীন হোসেনের নানা রকম কীর্তির কথা, তেমনি মুক্তিযোদ্ধা ভাই, একটি গোপন চিরকুটসহ আরও অনেক অজানা কথা। ফাহীম রেজা নূরের মুখে শোনা যাক তাঁর কথা।

গল্প-১৩
দেশ স্বাধীন হওয়ার প্রাক্কালে প্রথম শহীদ বুদ্ধিজীবী ১৯৭১ সাল। মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রতিটা দিন, প্রতিটা মুহূর্ত ছিল আনন্দ–বেদনার ঘটনাবহুল এক সময়। তাই কোন ঘটনা রেখে কোন ঘটনা বলব, তা ভাবতেই দিশেহারা হতে হয়। ১৯৭১ সালের সেই উত্তাল সময়ে আমরা থাকতাম রাজারবাগ পুলিশ লাইন সংলগ্ন চামেলীবাগে। আব্বা দৈনিক ইত্তেফাকে সারা দিন দেশের বিক্ষুব্ধ আন্দোলনের খবর পরিবেশনে ব্যস্ত থাকতেন। দিনটি ছিল ২৫ মার্চ কালরাত। মধ্যরাতে পাকিস্তানি সেনারা ‘অপারেশন সার্চ লাইট’ শুরু করল। তাৎক্ষণিকভাবেই বাঙালি পুলিশ ও ইপিআর আর সেনারা জুলুমবাজ পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল। পরে কামানের গোলায় সিআইডি, অফিসের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়, পুলিশ সদস্যদের থাকার টিনের লম্বা ঘর আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। বিদ্যুৎহীন অন্ধকারে আগুনের লেলিহান শিখায় চারদিক যেন হাজারটা সূর্যের আলোতে আলোকিত হয়ে উঠল। সর্বত্র ভয়ার্ত মানুষের আর্তচিৎকার আর অসহায় এলাকাবাসী ও পুলিশ সদস্যরা পিছু হটে তাদের অবস্থান পরিবর্তন করল। মনে পড়ে, প্রাণের ভয়ে অগণিত নিরীহ মানুষ আমাদের বাসায় আশ্রয় নিয়েছিল। পাকিস্তানি সেনারা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বুদ্ধিজীবীদের নির্মমভাবে হত্যা করল, শহীদ মিনার কামানের গোলায় ভেঙে চুরমার করে দিল। রাস্তাঘাটে, পথে–প্রান্তরে নির্বিচারে গণহত্যা চালানো হলো। একপর্যায়ে কামানের গোলায় দৈনিক ইত্তেফাকে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হলো। পরদিন ভোরে ধ্বংসস্তূপ থেকে দুটি লাশ পাওয়া গেল। সে যাত্রায় আব্বা প্রাণে বাঁচলেও দুদিন পর কারফিউ ও গোলাগুলি থামার পর তিনি বাড়ি ফিরেছিলেন।
সেদিন পাকিস্তানি সেনারা অতর্কিত নির্বিচারে নিষ্ঠুরভাবে বাঙালিদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে, পুরো ঢাকাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছিল। এই নৃশংসতার কথা কেউ কি কখনো ভুলতে পারবে? তারা কাঁচাবাজারগুলো পর্যন্ত জ্বালিয়ে–পুড়িয়ে ছারখার করে দিল। ২৭ মার্চ ২ ঘণ্টার জন্য কারফিউ উঠল। আর তখনই রাজধানীবাসী জীবন বাঁচাতে বাড়িঘর ছেড়ে গ্রামগঞ্জে ছুটল। শহর প্রায় জনশূন্য হয়ে গেল।
দিন যত যাচ্ছিল, ততই সরকারি ফরমান জারি ও বিধিবিধান ঘোষিত হচ্ছিল। স্কুল-কলেজ, অফিস আদালত, ব্যাংক–বিমার কর্মচারী, ছাত্র–শিক্ষকদের উপস্থিতি না থাকলে তাদের জন্য বিভিন্নরকম শাস্তিযোগ্য অপরাধের ফিরিস্তি রেডিও, টিভি ও পত্রিকায় প্রচার হচ্ছিল।
এদিকে এপ্রিল মাসে প্রবাসী সরকার গঠিত হয়েছে। বীর বাঙালি যুবক, শ্রমিক, ছাত্র–শিক্ষক, কৃষকসহ সব শ্রেণিপেশার মানুষ জীবনবাজি রেখে দেশের জন্য দলে দলে মুক্তিযুদ্ধে যেতে শুরু করল। আর দেশের ভেতরে প্রায় ৩ কোটি মানুষ এক স্থান থেকে অন্য স্থানে আশ্রয়ের আশায় দিন যাপন করছিল। আশ্চর্যের বিষয় হলো, সেদিন কেউ কাউকে না চিনলেও সবাই সবাইকে আপন করে নিয়েছিল।
এর মধ্যেই মুক্তিযোদ্ধারা দেশে ঢুকে টিভি সেন্টার, হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল, বিদ্যুতের ট্রান্সফরমার, সেন্সর বোর্ড অফিসসহ বিভিন্ন স্থানে গ্রেনেড ও বোমা হামলা চালিয়ে পাকিস্তানিদের নাস্তানাবুদ করতে লাগল। এ অবস্থায় অবরুদ্ধ হয়ে আমজনতা গোপনে আর আগ্রহ নিয়ে স্বাধীন বাংলা বেতার, আকাশবাণী, বিবিসি, ভয়েস অব আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবরাখবর শুনত আর আকুল আশায় বুক বাঁধত। তখন তারা সবাই স্বাধীন দেশের স্বপ্ন দেখত। স্বপ্ন দেখত কীভাবে দেশটা একদিন শত্রু মুক্ত হবে।
আমাদের বাড়ির পাশেই ছিল একটা ‘ছাড়া বাড়ি’। নাম ‘ছাড়া বাড়ি’ হলেও সে বাড়িতে লোকজন থাকত। তবে বাড়িটি ছিল একটি ব্যাচেলর মেস। সেই বাড়ির সামনে একটা মাঠ ছিল, সেখানে আমরা চামেলীবাগের ছেলেরা খেলাধুলা করতাম, গল্পগুজব করতাম। হঠাৎ একদিন সন্ধ্যার দিকে আমার এক সহপাঠী ও বন্ধু মজনু এসে আমার হাতে একটি কাগজ গুঁজে দিয়ে বলল, তিন দিন পর একটি নির্দিষ্ট ঠিকানায় সকাল ৯টায় যেন চলে আসি। বিশেষ জরুরি কথা আছে। এই বলে সে মাঠে অন্য ছেলেদের মাঝে মিলিয়ে গেল। আমার তখন থেকেই মনের মধ্যে নানা প্রশ্ন উঁকিঝুঁকি দিতে শুরু করল। কী আছে এই চিরকুটে? বাসায় ফিরে ঝটপট খুললাম চিরকুটটি। দেখি সেখানে একটি ঠিকানা দেওয়া আছে। চিরকুটটি খুলে পড়তে শুরু করলাম। আগরতলা থেকে মুক্তিযোদ্ধা আমাদের বড় ভাই শামীম চিঠি দিয়েছেন। সঙ্গে সঙ্গেই মাকে দেখালাম। রান্নাঘরে চুপিচুপি চিঠিটা পড়লাম। রাতে আব্বা বাসায় এসে চিঠিটা পড়লেন। বড় ভাই চিঠিতে তাঁর অবস্থানের কথা লিখেছেন। লিখেছেন থাকা–খাওয়ার চরম কষ্টের কথা। কিন্তু সেই সঙ্গে দৃঢ় মনোবলের কথাও লিখলেন। তিন দিন পর পাক মোটর (বর্তমানে বাংলামোটর) জহুরা মার্কেটের ঠিকানায় মজনুর উদ্দেশ্যে আব্বার দেওয়া একটি চিঠি নিয়ে রওনা হলাম। আব্বা শামিম ভাইয়ের চিঠির উত্তর দিয়েছিলেন। আমার মেজ ভাই শাহীন ভাই আব্বার উত্তরটি কপি করে রেখেছিলেন। সকালে বেইলি রোড দিয়ে রমনা পার্কের মধ্যে দিয়ে হেঁটে রওনা হয়েছিলাম। ফাঁকা রাস্তায় লোকজন নেই বললেই চলে। প্রেসিডেন্ট হাউসের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় হঠাৎ নারী কণ্ঠের আর্তনাদ শুনে ঘাবড়ে গেলাম। তাকিয়ে দেখি, এক যুবতী নারী ঊর্ধ্বশ্বাসে দৌড়াচ্ছে আর তার পেছনে পাকিস্তানি সেনারা একটা জিপ নিয়ে ধাওয়া করছে। হঠাৎ করে সার্কিট হাউসের রোড থেকে একটি মোটরসাইকেল ঘটনাস্থলের পথ ধরেই এগিয়ে আসছিল। সামনে এই অবস্থা দেখে বাইকটি থামিয়ে বিদেশি লোকটি ক্যামেরা নিয়ে ছবি তুলতে প্রস্তুত হলো। এই দেখে সেনা জিপটি আমাদের পাশ কাটিয়ে চলে গেল।
আমরা তখন জানতে পারলাম, মেয়েটি পাতাকুড়ানি মেয়ে। সে এখানে পাতা কুড়াতে এসেছিল। হঠাৎ এক পাকিস্তানি সৈন্য তাকে একা পেয়ে কাছে আসতে বলে। তখন সে ভীষণ ভয় পেয়ে দৌড় দেয়। মেয়েটাকে নিরাপদ দূরত্বে পৌঁছে দিয়ে জহুরা মার্কেটে গেলাম। সেখানে এক ঘড়ি মেরামতকারীর কাছে আমার নাম বলতেই সে ড্রয়ার থেকে চাবি বের করে আমাকে দিয়ে বলল, তিন তলার কোনার রুমের দরজায় দুইবার টোকা দিয়ে ভেতরে ঢুকতে। ঘড়ি মেরামতকারীর কাছে যে চাবি পাব, সে কথা মজনু আমাকে অনেক আগেই বলে রেখেছিল। দরজা খুলে ভেতরে ঢুকতেই দেখি চাদর মুড়ি দিয়ে মজনু চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে। আমি ডাকতেই সে চোখ খুলে বলল ‘আমি জেগেই আছি’। আমি তাকে বাবার লেখা চিঠিটা দিলাম। চিঠিটা নিয়ে সে জানাল, সম্ভব হলে কিছু গরম কাপড় আর টাকা জোগাড় করে আনতে। পরে মা একটা সোয়েটার আর চাদর দিয়েছিলেন। আর আব্বা অল্প কিছু টাকাও দিয়েছিলেন। এদিকে আব্বা ইত্তেফাকের পাতায় মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে নিরন্তর লিখে যাচ্ছিলেন। বিশেষ করে পাকিস্তানিরা মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে দেশি–বিদেশি গণমাধ্যমে যেসব অপপ্রচার ছড়াচ্ছিল আব্বা সেসব অপপ্রচারের বিরুদ্ধে লিখতে থাকেন। শুধু তাই নয়, তিনি গোপনে অনেক খবর প্রবাসী সরকারের কাছে পাঠাতেন। সেসব খবর বেতারে প্রচারিতও হচ্ছিল। আব্বার লেখা শেষ সম্পাদকীয় ‘এত দিনে’ শিরোনামে প্রকাশ হয়েছিল।
এদিকে দিন যতই যাচ্ছিল সবার উৎকণ্ঠা, আতঙ্ক যেন দিন দিন বাড়তে লাগল। গোটা দেশে তখন তুমুল যুদ্ধ। পরাজয় নিশ্চিত জেনে পাকিস্তানি সেনারা তাদের দোসর আলবদর, আলশামস, রাজাকারদের নিয়ে বাংলাদেশকে মেধাশূন্য করার পরিকল্পনা আঁটে। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের প্রথম ধাপে ১০ ডিসেম্বর রাত থেকে বুদ্ধিজীবী নিধন শুরু করে। যদিও বুদ্ধিজীবী হত্যা মূলত শুরু হয় ২৫ মার্চ কালো রাত থেকেই। ১০ ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবী নিধনের প্রথম ধাপে আব্বা নির্মমভাবে শহীদ হলেন। আব্বা অর্থাৎ সিরাজ উদ্দিন হোসেন ছিলেন দেশ স্বাধীন হওয়ার প্রাক্কালে প্রথম শহীদদের একজন।
অবশেষে ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয় এল। সেদিন আনন্দ–বেদনায় চোখের কোনায় অশ্রু চিকচিক করলেও হৃদয়ে আব্বাকে হারানোর বেদনায় মুষড়ে পড়েছিলাম। তখন ছেলেকে লেখা আব্বার চিঠিটির কথা বারবার মনে পড়ছিল।
তখনকার প্রেক্ষাপট না বললে সেই চিঠির মর্মকথাটি বলা খুব কঠিন হবে। তখন দেশে চলছিল ভয়াবহ বন্যা। পানিতে থই থই করছিল প্রায় গোটা দেশ। আমাদের গ্রামের বাড়ি যশোরের শালিখা থানার শরশুনা গ্রামে সর্বহারা, নকশালপন্থী আর রাজাকারদের দৌরাত্ম্য চলছিল। চাচাতো ভাই মনুকে ধরে নিয়ে জবাই করতে উদ্যত হলে চাচি তাদের হাত–পা ধরে ছেলের জীবন বাঁচান। আর তার মেয়েকে (ডলি বু) তারা ধরে নিয়ে যেতে চাইলে দাদি অনেক অনুরোধ ও কান্নাকাটি করে তাদের হাত থেকে মেয়েকে রক্ষা করেছিলেন।
পুত্রকে লেখা বাবার (শহীদ সিরাজউদ্দীন হোসেন) সেই চিঠিটি এখানে হুবহু তুলে ধরছি। এই চিঠিটিই ছিল তার আমাদের লেখা শেষ চিঠি।
স্নেহের শামীম,
কারও কোন বিপদে এখন আর এক পয়সার সাহায্যে আমার পক্ষে সম্ভব নয়। এ অবস্থা আমার কাছে অসহ্য। সারা জীবন পরিশ্রম করে আজ বলতে গেলে একেবারে নতুন করে সংসার যাত্রা শুরু করতে হবে। কোন অপঘাতে যদি মৃত্যু হয়, জানি না কোন অকুলপাথারে সকলকে ভাসিয়ে রেখে যাব। কোনো দিন স্বপ্নেও ভাবিনি যে সংসার জীবন এমনি করে পেছনে ফিরে যেতে হবে। এ বয়সে নতুন করে দুঃখ–কষ্টের মধ্যে যাওয়ার মতো মনের বল আর অবশেষ নেই। যা হোক তোমাকে আশীর্বাদ করি, জীবনে সত্য ও ন্যায়ের পথে থেকে সামনে এগিয়ে যাও। আমার বন্ধুবান্ধবের সম্পর্কে যে কথা লিখেছ, ওতে আমি বিস্মিত হইনি, কারণ আমি অনেকের বন্ধু হলেও কেউ আমার বন্ধু ছিল না। কারণ এ সংসারে সকলেই স্বার্থের দাস, জীবনের মহত্ত্বের গুণাবলি কয়েকজনের আছে। আমার জীবনে অপরিচিত জন ছিল যাঁরা বিপদেআপদে তাঁরাই আমার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে, পরিচিত কোন বন্ধুজন নয়।
শুনে খুশি হলাম, তুমি মানিকের স্নেহস্পর্শে আছ। ওদের কয়েকজনকে আমি বরাবর স্নেহের নয়, শ্রদ্ধার চোখেই দেখেছি। ওকে আমার শুভেচ্ছা জানাবে।
ইতি, আব্বা
এগারোই অক্টোবর উনিশ শ একাত্তর