অভিবাসন ব্যবস্থায় ভয়াবহ জট

আমেরিকার অভিবাসন ব্যবস্থায় ভয়াবহ জট শুরু হয়েছে। গ্রিনকার্ডসহ অভিবাসন-সংক্রান্ত সব প্রক্রিয়া প্রচণ্ড ধীর গতিতে হচ্ছে। এতে অভিবাসী, তাদের পরিবার ও নিয়োগকর্তাদের অহেতুক ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের অধীনে অভিবাসন-সংক্রান্ত বিভিন্ন অনুমোদন প্রক্রিয়ার জট মাত্র এক বছরে দ্বিগুণ হয়েছে। অভিবাসন আইনজীবীরা এই জটকে ‘বড় সমস্যা’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
গ্রিনকার্ড থেকে অভিবাসন ও কাজের অনুমোদন সব ধরনের প্রক্রিয়ায় অভিবাসন বিভাগ অযথা কালক্ষেপণ করছে। বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০১২ অর্থবছরে গড়ে অভিবাসন মামলা প্রক্রিয়া করতে সময় লাগত মাত্র পাঁচ মাস। ২০১৮ অর্থবছরে এ গড় সময় বেড়ে নয় মাসে দাঁড়িয়েছে। গত চার বছরেই অভিবাসন মামলা নিষ্পত্তিতে সময় বেড়েছে ৯১ শতাংশ।

আমেরিকার অভিবাসন বিভাগের (ইউএসসিআইএস) তথ্য বিশ্লেষণ করে অভিবাসন আইনজীবীদের সংস্থা এআইএলএ অভিবাসন মামলার জটকে ভয়াবহ পরিস্থিতি হিসেবে বর্ণনা করেছে। সংগঠনটির মতে, এই জট আমেরিকা বৈধ অভিবাসনের সামনে তোলা ট্রাম্প প্রশাসনের অদৃশ্য দেয়ালের ইটের মতো।
এআইএলএর বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, ২০১৬ অর্থবছরের তুলনায় অভিবাসন-সংক্রান্ত যেকোনো আবেদন নিষ্পত্তিতে বিলম্বের হার বেড়েছে ৪৬ শতাংশ। যদিও এই সময়ের মধ্যে অভিবাসন-সংক্রান্ত নতুন আবেদনের সংখ্যা কমেছে। ২০১৭ অর্থবছরের তুলনায় ২০১৮ অর্থবছরে নতুন আবেদনের সংখ্যা কমেছে ১৭ শতাংশ। অথচ একই সময়ে এসব আবেদন নিষ্পত্তির সংখ্যা কমেছে ১৯ শতাংশ। ৯৪ শতাংশ মামলার ক্ষেত্রে সংস্থাটি ধীর গতিতে কাজ করছে। সংস্থাটিতে নিষ্পত্তির অপেক্ষায় ২৩ লাখ মামলার জট রয়েছে বলে জানিয়েছে ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটি (ডিএইচএস)। ডিএইচএসের তথ্যমতে, এত বেশিসংখ্যক মামলার জট আমেরিকায় আগে কখনো হয়নি। এটি একটি রেকর্ড। অথচ ইউএসসিআইএসের কাজটি ঠিক বিপরীত। অভিবাসন সম্পর্কিত মামলার জট খুলে এ-সংক্রান্ত বিভিন্ন আবেদনের দ্রুত নিষ্পত্তি করাই তাদের দায়িত্ব। ২০০২ সালে অভিবাসন-সংক্রান্ত আবেদনের নিষ্পত্তি দ্রুত সময়ে করার লক্ষ্যেই এই বিভাগটি খোলা হয়। এ বিভাগটির জন্মই হয়েছিল অভিবাসীদের সহায়তার জন্য, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নয়।
অথচ ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের অধীনে ইউএসসিআইএস উল্টো পথেই চলছে। বিভাগটি অহেতুক অভিবাসীদের করা বিভিন্ন আবেদন যাচাই-বাছাইয়ের নামে ফেলে রাখছে। অযথা বিলম্ব করে অভিবাসী, তাদের পরিবার ও নিয়োগকর্তাদের বিপাকে ফেলছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, কর্মসূত্রে গ্রিনকার্ড পাওয়ার প্রক্রিয়া বিলম্বিত হওয়ার বিষয়টি। বর্তমানে এ ক্যাটাগরিতে গ্রিনকার্ড পেতে হলে প্রত্যেক আবেদনকারীকে সশরীরে উপস্থিত হয়ে সাক্ষাৎকার দিতে হয়। এ ছাড়া শরণার্থী গ্রহণ বন্ধ করার কারণেও অভিবাসন বিভাগের কাজ বেড়ে গেছে। শরণার্থী আবেদন করা ব্যক্তিদের যাচাই-বাছাইয়ের কাজটিও এখন করছে ইউএসসিআইএস।
২০১৭ অর্থবছরে নাগরিকত্বের আবেদন (এন-৪০০) নিষ্পত্তিতে গড়ে ৮ মাস সময় লাগলেও ২০১৮ অর্থবছরে তা বেড়ে ১০ মাসে দাঁড়ায়। একইভাবে স্থায়ী বসবাসের আবেদন (আই-৪৮৫) নিষ্পত্তিতে গড় সময়ও বেড়েছে। আগে এ ক্ষেত্রে ৮ মাস সময় লাগলেও সর্বশেষ অর্থবছরে এ গড় সময় বেড়ে ১১ মাসে দাঁড়িয়েছে। আর কাজের অনুমতি পাওয়ার আবেদন (আই-৭৬৫) নিষ্পত্তিতে সময় লাগছে ৪ মাস। অথচ আগে এ ক্ষেত্র ৩ মাস সময় লাগত।
এআইএলএর বিশ্লেষণে বলা হয়, এই জটের কারণে অভিবাসীদের অনেককেই কাজ পেতে সমস্যা পোহাতে হচ্ছে। এতে তার পরিবার, বিশেষত শিশুদের ভয়াবহ এক বাস্তবতার মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে। আর যারা নিজ দেশের সহিংসতা থেকে পালিয়ে এসেছেন, এই জট তাঁদের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে। বর্তমান এই পরিস্থিতির কারণে শুধু অভিবাসীরাই নয়, বিপাকে পড়ছে আমেরিকার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানও। এই অবস্থায় ইউএসসিআইএসের উচিত নিজের প্রকৃত ভূমিকায় ফিরে আসা। অভিবাসীদের সেবা দেওয়াই তাদের কাজ। নিরাপত্তা ঝুঁকি শনাক্তের নামে অভিবাসীদের হেনস্তা করাটা তাদের কাছে কোনোভাবেই কাম্য নয়। এ ক্ষেত্রে সংস্থাটির কার্যক্রম পর্যবেক্ষণের জন্য একটি কর্তৃপক্ষ নিয়োগ করতে পারে কংগ্রেস। গত দুই বছরে সংস্থাটির কার্যক্রম এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে, এর কোনো বিকল্প হাতে নেই। অভিবাসন-সংক্রান্ত আবেদন নিষ্পত্তিতে গড় সময় বেড়ে যাওয়ার কারণ জনসাধারণের সামনে স্পষ্ট করা উচিত ইউএসসিআইএসের।