পাবলিক অ্যাডভোকেট নির্বাচনে পারবেন হেলাল শেখ?

হেলাল শেখ
হেলাল শেখ

কে হচ্ছেন নিউইয়র্ক শহরের নতুন পাবলিক অ্যাডভোকেট? এই প্রশ্ন এখন শহরবাসী বিশেষ করে নিউইয়র্ক নগরে বসবাসরত বাংলাদেশি অভিবাসীদের মুখে মুখে। এ নিয়ে প্রতিদিনই চলছে সভা, সেমিনার, জনসংযোগ। প্রচণ্ড ঠান্ডার মধ্যেও পাবলিক অ্যাডভোকেট নির্বাচনের উত্তাপ লেগেছে বাঙালি কমিউনিটিতে। এর প্রধান কারণ বাংলাদেশি আমেরিকান হেলাল শেখ এবার পাবলিক অ্যাডভোকেট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
অতীতে কোনো বাংলাদেশি অভিবাসী পাবলিক অ্যাডভোকেট পদে প্রার্থী হননি। এবারের নির্বাচনে একমাত্র দক্ষিণ এশীয় প্রার্থীও হেলাল। তাই তাঁর প্রধান ভরসা বাংলাদেশি আমেরিকান ভোটাররা। 

হেলাল শেখ বলেন, বর্তমানে নিউইয়র্ক শহরে রেজিস্টার্ড ভোটারের সংখ্যা ৯০ হাজার। এদের মধ্যে ৩০ হাজার যদি ভোট দেন, তবে তিনি জয়ী হতে পারবেন।
বর্তমান এবং সাবেক নির্বাচিত সরকারি কর্মকর্তা, অ্যাটর্নি ও অ্যাকটিভিস্টসহ ১৬ জন প্রার্থী পরবর্তী নিউইয়র্ক শহরের পাবলিক অ্যাডভোকেট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ২৬ ফেব্রুয়ারি এই পদে ভোটগ্রহণ হবে। পাবলিক অ্যাডভোকেট লেটিয়া জেনস গত নভেম্বরে স্টেট অ্যাটর্নি জেনারেল নির্বাচিত হওয়ায় এই পদটি শূন্য হয়ে যায়। ফলে প্রথমবারের মতো অন্তর্বর্তীকালীন নির্বাচন করতে হচ্ছে। নিউইয়র্ক শহরের জনগণের যেকোনো আইনের বিষয়ে পাবলিক অ্যাডভোকেট মূল ভূমিকা রাখেন।

সম্প্রতি নিউইয়র্কের মূলধারার একটি পত্রিকা পাবলিক অ্যাডভোকেট পদে ১৬ জন সক্রিয় প্রার্থীকে তাদের অগ্রাধিকার, যোগ্যতা এবং কীভাবে তারা ভাড়াটেদের সরকারি আবাসন ব্যবস্থা পেতে সাহায্য করবেন—এসব বিষয় নিয়ে প্রশ্ন করেছিল। ৪৯ বছর বয়সী অ্যাটর্নি মেনি আলেসান্দ্রোকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, সরকারি উকিল হিসেবে অফিস নেওয়ার পরে আপনার প্রথম কাজ কি হবে? তিনি বলেন, প্রথম অগ্রাধিকার হলো গৃহহীন ও ট্রানজিট বিষয়ে সর্বজনীন জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা। এই সমস্যা সমাধানে কাজ শুরু করা। ডি ব্লাজিওর ধ্বংসাত্মক ঘোষণার বিরোধিতা করা। ‘এল’ ট্রেনসহ এমটিএ ইস্যুতে কাজ করতে চান তিনি।

তৃতীয় মেয়াদে ৭৯ নম্বর ডিস্ট্রিক্ট ব্রঙ্কসের নির্বাচিত নিউইয়র্ক স্টেট অ্যাসেম্বলির সদস্য ও ডেমোক্র্যাট ন্যাশনাল কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান ৩৭ বছর বয়সী মাইকেল ব্লেক এবার পাবলিক অ্যাডভোকেট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, সরকারি উকিল হিসেবে অফিস নেওয়ার পরে আপনার প্রথম কাজ কি হবে? তিনি বলেন, ‘পাবলিক ট্রানজিট। এই বিশেষ নির্বাচনে কোনো অন্তর্বর্তীকালীন সময় নেই, তাই পরবর্তী গণনির্বাচনে একদিন যেতে প্রস্তুত থাকা প্রয়োজন। আমার প্রথম পদক্ষেপ হল, এমটিএ বোর্ডে একটি স্থায়ী আসন দাবি, ট্রেন ও বাসের বিলম্বের বিষয়টি দ্রুত সমাধান, অপ্রয়োজনীয় এবং ব্যয়বহুল নির্মাণ প্রস্তাবগুলো প্রত্যাখ্যান এবং অপর্যাপ্ত পরিষেবার কারণে ভাড়া বৃদ্ধি এবং শনাক্ত, পরিবহন বিনিয়োগের জন্য আন্ডারকাভার এলাকা নির্ধারণ। পরিবহন শুধু এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাওয়ার সম্পর্কে নয়, আমি বিশ্বাস করি এটা একটা মৌলিক অধিকার।’ এর বাইরে সরকারি আবাসনের ব্যাপারে উদ্যোগের কথা বলেন মাইকেল ব্লেক। ২০২১ সালে মেয়র পদে প্রার্থিতার বিষয়টি তিনি নাকচ করে দেন।

৪৬ বছর বয়সী ইতিহাসের অধ্যাপক ডেভিড আইজেনবাখকে একই প্রশ্ন করা হয়। তিনি বলেন, নগর-পরিকল্পনা কমিশনে একটি এন্টি-রেজিওনিং উকিল নিয়োগ করা। তারপর জানতে চাওয়া হয়, কেন আপনি নিজেকে নিউইয়র্ক পাবলিক অ্যাডভোকেট বা অধিকারকর্মী হিসেবে প্রতিনিধিত্ব করতে চান? আপনি অন্য প্রার্থীদের থেকে কি জন্য সেরা? আইজেনবাখ উত্তরে বলেন, ‘আমি ছোট বিজনেস জব সারভাইভাল অ্যাক্ট (এসবিএসএ)-এর জন্য লড়াই করছি, যা ৩৩ বছর ধরে রিয়েল এস্টেট বোর্ডের অধীনে রয়েছে।’ তিনি ২০২১ সালে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ব্যাপারে নিজের অনাগ্রহের কথা জানান।

সিটি কাউন্সিল মেম্বার ফর ডিস্ট্রিক্ট ৩৭, ৩৪ বছর বয়সী বাঙালি কমিউনিটিতে পরিচিত মুখ রাফায়েল এসপিনাল একই ধরনের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘আমার প্রথম অগ্রাধিকারটি হচ্ছে নিউইয়র্কের শহরের সব অংশে অফিস ও কর্মচারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা, তাই জনগণের পক্ষে এই বিষয়টি উত্থাপন করা সহজ হবে। সরকারি অধিকারকর্মী যে কাজ করেছেন, তা এবারই প্রথম করা হবে।’ এরপর জানতে চাওয়া হয়, আপনি এই পদে কেন নিজেকে যোগ্য মনে করছেন এবং অন্যদের চেয়ে নিজেকে এগিয়ে রাখছেন—এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমি বুঝতে পারি শহর ও রাজ্য কীভাবে কাজ করে। কারণ আমি সিটি কাউন্সিল মেম্বার ও স্টেট অ্যাসেম্বলি মেম্বার ছিলাম।’

আরও কথা বলেছেন ৫৪ বছর বয়সী প্রাইভেট কনসালট্যান্ট অ্যান্থনি হোবার্ট, ৩৯ বছর বয়সী নিউইয়র্ক স্টেট অ্যাসেম্বলি মেম্বার রন কিম, ৩৫ বছর বয়সী ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্ট নমিকি কংসট, ৪৯ বছর বয়সী সাবেক সিটি কাউন্সিল স্পিকার মেলিকা মার্ক, ৬৯তম ডিস্ট্রিক্টের অ্যাসেম্বলি মেম্বার ড্যানি ও’ডোনেল, ৩৯ বছর বয়সী অ্যাটর্নি জ্যারেড রিচ, ৪১ বছর বয়সী অ্যাটর্নি ডোয়ান স্মালস, ৩৩ বছর বয়সী নিউইয়র্ক কাউন্সিল মেম্বার এরিখ উলরিচ, ৩৪ বছর বয়সী টিচার বেনিয়ামিন উই এবং বাংলাদেশি হেলাল শেখ। তাঁরা প্রত্যেকেই হাউজিং, ট্যাক্স, স্থানীয় পাবলিক অ্যাডভোকেট নিয়োগ, মজুরি বৃদ্ধি নিয়ে সরকারের সঙ্গে কথা বলার ঘোষণা দেন।

মূলধারার রাজনীতির সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে যুক্ত হেলাল শেখ সিটি ইউনিভার্সিটি অব নিউইয়র্কের প্রথম নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট। এর আগে সিটি কাউন্সিল থেকে নির্বাচন করেন তিনি। হেলাল শেখ বলেন, ‘পাবলিক অ্যাডভোকেট পদে এবারই প্রথম বিশেষ নির্বাচন হচ্ছে। নগরভিত্তিক নির্বাচন। পাঁচ বরোর লোক এখানে ভোট দেবে। আমরা এখানে বাঙালিরা যদি মনে করি, একজন পাবলিক অ্যাডভোকেট হবে, যে আমাদের ভাষায় কথা বলে, তাহলে আমি জয় পাব আশা করি। যেভাবে মেয়র নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন, সেভাবেই পাবলিক অ্যাডভোকেট নির্বাচনে সব জায়গায় ভোট হবে।’

হেলাল শেখ আশা করছেন, বাংলাদেশি আমেরিকানরা এই পদে নির্বাচনের ব্যাপারে সচেতন হবে। খুব অল্প সময়ের মধ্যে এই নির্বাচন হবে। একজন তো নিশ্চয়ই পাবলিক অ্যাডভোকেট নির্বাচিত হবেন। তবে তিনি কেন আমার মতো বাংলাদেশি হবেন না!’

নিউইয়র্ক সিটির হাইস্কুলের শিক্ষক হেলাল শেখ তাঁর নির্বাচনী অঙ্গীকারে সিনিয়র নাগরিকদের জন্য সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি, শহরের বাসিন্দাদের অধিকার সংরক্ষণ, ক্ষুদ্র ব্যবসায় সমর্থন, স্কুল ফান্ডিং বৃদ্ধি, ‍হাউজিং সুবিধা বৃদ্ধি, শিক্ষার মান বৃদ্ধি, নতুন চাকরি সৃষ্টি, হেলথ কেয়ার ও ইমিগ্রেশনের সুবিধা বৃদ্ধির ওপর জোর দিচ্ছেন।