ট্রাম্পকে অপসারণে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আবারও আলোচনায়

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: এএফপি
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: এএফপি

দুই বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে অপসারণের ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আবারও আলোচনায় উঠে এসেছে। অভিযোগ ছিল, ২০১৭ সালে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল রড রোসেনস্টেইন সংবিধানের ২৫তম ধারা অনুসরণ করে ট্রাম্পকে কীভাবে অপসারণ করা যায়, তা নিয়ে সলাপরামর্শ করেছিলেন। রোসেনস্টেইন সেই অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করেছেন। গতকাল রোববার গণমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার (এফবিআই) সাবেক ভারপ্রাপ্ত প্রধান এন্ড্রু ম্যাক কাবে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন। তাতেই আবার নতুন আলোচনা শুরু হয়েছে।

এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন সিনেটে বিচার বিভাগীয় কমিটির প্রধান রিপাবলিকান নেতা লিন্ডসে গ্রাহাম। তিনি শুনানির আয়োজন করবেন বলে জানান।
আজ সোমবার বিবিসি ও সিএনএনের খবরে বলা হয়, সিবিএসের ‘সিক্সটি মিনিট’ নামের এক অনুষ্ঠানে রড রোসেনস্টেইনের ‘ষড়যন্ত্রের’ প্রসঙ্গে কথা বলেন ম্যাক কাবে। তিনি বলেন, রড রোসেনস্টেইন ২৫ ধারার বিষয়টি তুলেছিলেন এবং আমার সঙ্গে আলোচনা করেছিলেন। রোসেনস্টেইন বলেছিলেন অপসারণের উদ্যোগ নিলে মন্ত্রিপরিষদের কয়েকজনের কাছ থেকে সমর্থন পাওয়া যেতে পারে। তিনি ট্রাম্পের সামর্থ্য ও অভিপ্রায় নিয়ে বেশ বিচলিত ছিলেন।

ম্যাক কাবে আরও বলেন, রোসেনস্টেইন বৈঠকে ট্রাম্পের কথাবার্তা রেকর্ডের জন্য নিজের পোশাকে ইলেকট্রনিক যন্ত্র রাখার কথাও ভেবেছিলেন।

গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে রোসেনস্টেইন তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন।

গত বছরের মার্চ মাসে ম্যাক কাবেকে এফবিআইয়ের উপপরিচালকের পদ থেকে বরখাস্ত করা হয়।

সিবিএসের স্কট পেলেকে দেওয়া ম্যাক কাবের সাক্ষাৎকারটি স্থানীয় সময় গতকাল প্রচার করা হয়। ম্যাক বলেন, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারে রাশিয়ার সঙ্গে যোগসাজশের তদন্ত নিয়ে ট্রাম্প সপ্তাহের পর সপ্তাহ ধরে অবমাননাকর মন্তব্য করে যাচ্ছিলেন। এটাকে ‘জনসমক্ষে তদন্তকে খাটো’ করার চেষ্টা হিসেবে দেখা হয়েছিল। প্রেসিডেন্টের সেসব মন্তব্য নিয়ে কর্মকর্তারা খুব বিচলিত ছিলেন। কর্মকর্তারা জেমস কোমিকে বরখাস্ত করার বিষয়েও বিব্রত হন।

সাক্ষাৎকারটি প্রচারের পর গতকালই রিপাবলিকান সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহামের সাক্ষাৎকার নেয় সিবিএস। সাক্ষাৎকারে গ্রাহাম বলেন, তিনি বিস্মিত হয়েছেন যে দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অন্যতম প্রধান কর্মকর্তা এ ধরনের কথাবার্তা বলেছেন।

গ্রাহাম বলেন, ম্যাক কাবের কথা যদি সত্যি হয় তাহলে এ দেশের প্রত্যেকের তা জানা প্রয়োজন। ‘কে সত্য বলছে’ জানতে তিনি শুনানি আয়োজনের অঙ্গীকার করেন।

এফবিআইয়ের উপপরিচালক পদ থেকে বরখাস্ত করা হয় এন্ড্রু ম্যাক কাবেকে। ছবি: রয়টার্স
এফবিআইয়ের উপপরিচালক পদ থেকে বরখাস্ত করা হয় এন্ড্রু ম্যাক কাবেকে। ছবি: রয়টার্স

যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের ২৫ ধারায় প্রেসিডেন্টকে অযোগ্য মনে হলে অপসারণের সুযোগ রাখা হয়েছে। ওই ধারায় বলা হয়েছে, কোনো কারণে প্রেসিডেন্টকে এ পদের জন্য অনুপযুক্ত মনে করা হলে তাঁকে অপসারণ করা যাবে। তাঁর দায়িত্ব তখন হস্তান্তর করা হবে ভাইস প্রেসিডেন্টের কাছে। ট্রাম্পের ক্ষেত্রে এ ধারা প্রয়োগ করতে হলে তাঁর ১৫ সদস্যের মন্ত্রিপরিষদের আটজন, ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং কংগ্রেসের দুই-তৃতীয়াংশের অনুমোদন লাগবে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টদের ক্ষেত্রে আগে এ ধারা ব্যবহার হয়েছিল। রোনাল্ড রিগ্যান ও জর্জ ডব্লিউ বুশ তাঁদের প্রেসিডেন্ট পদ সাময়িকভাবে হস্তান্তরে এই ধারা ব্যবহার করেছিলেন।

গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে বিবিসির খবরে বলা হয়েছিল, ২০১৬ সালে ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারে রাশিয়ার গোপন আঁতাতের অভিযোগ তদন্ত করছেন রোসেনস্টেইন। প্রতিবেদনটি এফবিআইয়ের সাবেক পরিচালক এন্ড্রু ম্যাক কাবের গোপন নথির ভিত্তিতে করা হয়েছে। অনেকের মতে, রোসেনস্টেইন ও রাশিয়াবিষয়ক তদন্তের বিশেষ কৌঁসুলি রবার্ট ম্যুলারকে ছোট করতেই এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। রাশিয়ার বিষয়টি তদন্তের জন্য ম্যুলারকে বিশেষ কাউন্সেল হিসেবে নিয়োগ দেন রোসেনস্টেইন। ম্যুলারের তদন্ত দিনে দিনে হোয়াইট হাউস ও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে।

মার্কিন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল রড রোসেনস্টেইন। ছবি: এএফপি
মার্কিন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল রড রোসেনস্টেইন। ছবি: এএফপি


ওই সময় বিবিসি প্রকাশিত খবরের ওপর একটি টাইমলাইন (এক নজরে) প্রকাশ করে। এখানে তা তুলে ধরা হলো:

২০১৭ সালের ৯ মে: ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল রড রোসেনস্টেইন অ্যাটর্নি জেনারেলের কাছে হিলারি ক্লিনটনের বিষয়ে তৎকালীন এফবিআই পরিচালক জেমস কোমির তদন্তসংক্রান্ত তথ্য পেশ করেন। ওই সময় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কোমিকে বরখাস্ত করেন এবং এন্ড্রু ম্যাক কাবে এফবিআইয়ের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব নেন।

২০১৭ সালের ১১ মে: কোমির বরখাস্তের ব্যাপারে রোসেনস্টেইনের প্রধান ভূমিকা ছিল—এমন কথা ছড়ানোর পর তিনি পদত্যাগের হুমকি দিয়েছিলেন বলে অস্বীকার করেন। দ্য নিউইয়র্ক টাইমস বলেছে, ওই সময়ে ম্যাক কাবের নথি থেকে জানা যায়, রোসেনস্টেইন খুব বিষণ্ন ছিলেন এবং কোমিকে এফবিআইতে চাইছিলেন তিনি।

২০১৭ সালের ১৬ মে: রোসেনস্টেইন ম্যাক কাবেসহ জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করেন এবং কোমিকে বরখাস্তে তাঁর ভূমিকা কী ছিল, তা ব্যাখ্যা করেন। প্রতিবেদনে বলা হয়, ট্রাম্পের ব্যাপারে হতাশা প্রকাশ করেছিলেন তিনি এবং হোয়াইট হাউস পরিদর্শনের সময় কর্মকর্তাদের গোপনে ট্রাম্পের কার্যকলাপ রেকর্ড করতে বলেন এবং সংবিধানের ২৫তম সংশোধনীর ধারাগুলো নিয়ে আলোচনা করেন, যাতে অযোগ্যতার জন্য ট্রাম্পকে অপসারণ করা যায়।

২০১৭ সালের ১৭ মে: রাশিয়ার ঘটনা তদন্তে রবার্ট ম্যুলারকে বিশেষ কাউন্সেল হিসেবে নিয়োগ দেন রোসেনস্টেইন।

২০১৮ সালের ১৭ মার্চ: অবসরের দুই দিন আগে ম্যাক কাবেকে বরখাস্ত করেন ট্রাম্প।

২০১৮ সালের ৩০ মে: মার্কিন গণমাধ্যম প্রচার করে, ম্যাক কাবে কোমির বরখাস্তের বিষয়ে অত্যন্ত গোপনীয় তথ্য হস্তান্তর করেছেন। এতে রোসেনস্টেইন ও ম্যুলারের সঙ্গে তাঁর কথোপকথনের বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে।

২০১৮ সালের ২৬ জুলাই: ম্যাক কাবের নথিগুলো প্রকাশ করতে বিচার বিভাগ অস্বীকৃতি জানানোর পর হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভের কনজারভেটিভরা তথ্য পেতে বাধা পাওয়ার অভিযোগ তুলে রোসেনস্টেইনকে অপসারণের দাবি তোলেন।