সৌদি আরবের সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে তদন্ত হচ্ছে

মার্কিন প্রেসিডেন্ট
মার্কিন প্রেসিডেন্ট

সৌদি আরবের কাছে দ্রুত স্পর্শকাতর পারমাণবিক ক্ষমতা স্থানান্তর করতে চাইছে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের নতুন এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। সৌদি আরবে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে পারমাণবিক চুল্লি স্থাপনের উদ্বেগ থেকে ডেমোক্র্যাট নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধি পরিষদের প্যানেল একটি তদন্ত করছে।

বিবিসির এক খবরে বলা হয়, ওই প্যানেলের কাছে অনেকেই গোপনে তথ্য দিয়েছেন। তাঁরা বলছেন, পারমাণবিক অস্ত্রের বিস্তার ঘটালে মধ্যপ্রাচ্য অস্থিতিশীল হয়ে উঠতে পারে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে ওই প্রযুক্তি স্থানান্তরে চাপ দেওয়ার কথা উঠেছে।

প্রতিনিধি পরিষদের ওভারসাইট কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওই বিষয়ের তদন্তের বিষয়টি অত্যন্ত জটিল, কারণ কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের স্পর্শকাতর পারমাণবিক প্রযুক্তি সৌদিকে স্থানান্তরের প্রক্রিয়ার কাজ চলছে। ১২ ফেব্রুয়ারি ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে পারমাণবিক শক্তি উৎপাদনকারীদের সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যে স্থাপনা নির্মাণের ব্যাপারে আলোচনা করেছেন, যার মধ্যে সৌদি আরব রয়েছে। ট্রাম্পের জামাতা ও হোয়াইট হাউসের পরামর্শক জ্যারেড কুশনার এ মাসেই মধ্যপ্রাচ্য ভ্রমণ করে ট্রাম্প প্রশাসনের শান্তির কূটনীতি নিয়ে আলোচনা করবেন।

মার্কিন আইনপ্রণেতারা ওই পরিকল্পনার সমালোচনা করে বলছেন, অস্ত্র নির্মাণ কর্মসূচিতে যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক প্রযুক্তি স্থানান্তর সে দেশের আইনের পরিপন্থী। সৌদি আরবকে স্পর্শকাতর পারমাণবিক সক্ষম করে তুললে অস্থিতিশীল ওই অঞ্চল আরও বিপজ্জনক হয়ে উঠবে। সৌদি কর্তৃপক্ষ বলছে, বিদ্যুতের উৎস ও প্রয়োজনীয় জ্বালানির চাহিদা মেটাতে তাদের পরমাণু কর্মসূচিতে যেতে হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যমগুলো বলছে, প্রতিদ্বন্দ্বী ইরান পারমাণবিক প্রযুক্তি উন্নয়ন করছে বলে উদ্বেগে রয়েছে সৌদি। নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ৮০ বিলিয়ন বা ৮ হাজার কোটি মার্কিন ডলারের চুক্তির জন্য দৌড়ঝাঁপ করছিলেন যুবরাজ। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের কাছে পারমাণবিক স্থাপনার নকশা কিনতে চাইছিলেন। এ চুক্তির বিষয়টি নিয়ে তখন থেকেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছিল।

বিষয়টির সঙ্গে যুক্ত সৌদি ও মার্কিন কর্মকর্তাদের মতে, সৌদি যেখানে কম খরচে বাইরে থেকে পারমাণবিক জ্বালানি কিনতে পারে, সেখানে নিজস্ব জ্বালানি উৎপাদনে যাওয়ার রহস্য কী? ওয়াশিংটন উদ্বেগে পড়ে ভাবতে থাকে, যুবরাজের অন্য কোনো মতলব আছে কি না। নিজস্ব পারমাণবিক স্থাপনায় অস্ত্র তৈরি করতে পারে সৌদি আবর—এমন সংশয়ে পড়ে যায় যুক্তরাষ্ট্র।

চুক্তির বিষয়ে কথাবার্তা এগোনোর মধ্যেই যুবরাজ মোহাম্মদ ঘোষণা দেন, ‘ইরান যদি পারমাণবিক বোমা তৈরি করে, আমরাও তাদের পথেই হাঁটব।’ ইরানকে চরম শত্রু হিসেবেই দেখে সৌদি সরকার। ট্রাম্প প্রশাসনকে বোঝানো হয়, পারমাণবিক চুল্লি তৈরি করা হলে জাতিসংঘের কোনো পর্যবেক্ষককে তা দেখাতে সম্মত হবে না সৌদি। এ থেকে সন্দেহ আরও বেড়ে যায়।

সৌদির সঙ্গে গোপন চুক্তি নিয়ে গত মার্চ মাসে কংগ্রেসে প্রশ্ন করা হলে যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানিমন্ত্রী রিক পেরি তা কৌশলে এড়িয়ে যান। সৌদির জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সৌদি সরকারের পক্ষ থেকে বারবার নিশ্চিত করে বলা হয়েছে, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি বেসামরিক ও শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা যায়। আর্থসামাজিক উন্নয়নে এ প্রকল্প বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সৌদি আরবের পক্ষ থেকে মধ্যপ্রাচ্যকে সব ধরনের পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত করার আহ্বান জানানো হয়েছে।