আবেদনে যে ভুলগুলো হামেশাই করেন অভিবাসীরা

আমেরিকার বর্তমান প্রশাসন কঠোর অভিবাসন নীতি অনুসরণ করছে। চলতি বছর আমেরিকা থেকে অবৈধ অভিবাসীদের বহিষ্কারের হার বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এরই মধ্যে অভিবাসন-সংক্রান্ত অনেক বিষয়ে পরিবর্তন আনা হয়েছে। ফলে অভিবাসী ভিসা থেকে শুরু করে গ্রিনকার্ডের জন্য আবেদন পর্যন্ত অনেক প্রক্রিয়া জটিল হয়ে উঠেছে।
অভিবাসন ও গ্রিনকার্ড-সংক্রান্ত বিভিন্ন নিয়মে পরিবর্তন আনায় এর আবেদন প্রক্রিয়া অনেক জটিল ও শ্রমসাধ্য হয়ে উঠেছে। এ অবস্থায় অভিবাসন আইনজীবীদের মাধ্যমেই আবেদন করতে উৎসাহিত করছেন বিশেষজ্ঞেরা। কিন্তু একজন অভিবাসন আইনজীবী নিয়োগ করাটা অনেক সময় ব্যয়সাধ্য হওয়ায় অনেকেই বিষয়টিকে এড়িয়ে নিজেই আবেদন করেন। এ ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা না থাকায় এবং নতুন অনেক নিয়ম সম্পর্কে সম্যক ধারণা না থাকায় অভিবাসীদের করা বিভিন্ন আবেদনে কিছু সাধারণ ভুল করতে দেখা যায়। এসব ভুলের কারণে অনেক সময় সংশ্লিষ্ট আবেদনগুলো দীর্ঘদিন ঝুলে থাকে। অনেক ক্ষেত্রেই আবেদন খারিজও হতে দেখা যায়, যা বিপদ ঘনিয়ে আনে। আমেরিকার নাগরিকত্ব ও অভিবাসন সেবা বিভাগ (ইউএসসিআইএস) এ ধরনের ক্ষেত্রে ত্রুটিপূর্ণ আবেদনগুলো আটকে রাখে। এ কারণে আবেদন জমার আগেই জেনে রাখা প্রয়োজন কোন ভুলগুলো সাধারণত হয়ে থাকে। ইউএসিআইএসই এই ভুলগুলোর বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে।

ইউএসসিআইসের মতে, অধিকাংশ আবেদনকারী পুরো আবেদন ও সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র ঠিকভাবে জমা দিলেও আবেদনপত্রে স্বাক্ষর করতে ভুলে যান। কিন্তু স্বাক্ষরহীন একটি আবেদনপত্র ইউএসসিআইএসের কাছে কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়। ফলে ইউএসসিআইএস তা বাতিল করে আবেদনকারীর কাছেই ফেরত পাঠায়।
দ্বিতীয় যে ভুলটি সবচেয়ে বেশি করতে দেখা যায়, তা হলো পুরোনো ও মেয়াদোত্তীর্ণ ফরমে আবেদন করা। এ ক্ষেত্রে ইউএসসিআইএসের পরামর্শ হচ্ছে, আবেদন করার জন্য নির্ধারিত ফরমটি যেন তাদের ওয়েবসাইট থেকে সরাসরি ডাউনলোড করে নেওয়া হয়। এতে পুরোনো বা মেয়াদোত্তীর্ণ ফরমে আবেদনের মতো কোনো ভুল হবে না। সবচেয়ে ভালো হচ্ছে ফরমটি কম্পিউটারেই পূরণ করে তার প্রিন্ট নিয়ে নেওয়া।
আবার কিছু আবেদনকারীকে দেখা যায় ফরমের কিছু অংশ শূন্য রেখে যেতে। কিন্তু নিয়ম হচ্ছে ফরমের সব ঘর যথাযথভাবে পূরণ করতে হবে। অনেকে আবার ফরম পূরণের সময় অন্য রঙের কালি ব্যবহার করেন। কিন্তু নিয়ম হচ্ছে, শুধু কালো কালিতেই ফরমটি পূরণ করা যাবে। আর ফরম পূরণের সময় অবশ্যই যাবতীয় তথ্য দিতে হবে নির্ধারিত ঘরেই। মনে রাখতে হবে কোনো তথ্যই হাইলাইট করার জন্য কোনো কালি বা কোনো ভুল মুছে আবার লেখা উচিত নয়। কারণ কারেকশন ফ্লুইড দিয়ে কোনো লেখা মুছে দিলেও ইউএসসিআইএসের স্ক্যানার হাইলাইট করা লেখা বা একবার মুছে আবার লেখা কোনো তথ্য সহজে পাঠ করতে পারে না। তাই ফরম পূরণে কোনো ভুল হলে, তা আর জমা না দিয়ে, নতুন করে পূরণ করা উচিত। এমনিতেই ফরমে কাটাকাটি হলে তা বাতিল করে দেয় ইউএসসিআইএস।
আবেদন ফরমে কিছু তথ্য আবেদনকারীকে বারবার দিতে হয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় আবেদনকারীর নামের কথা। আবেদন ফরমে বেশ কয়েকটি জায়গায় আবেদনকারীকে তার নাম লিখতে হয়। কিন্তু অনেক আবেদনকারীকেই দেখা যায়, একবার নামটি উল্লেখ করে, ফরমের বাকি অংশে তা এড়িয়ে যেতে। ইউএসসিআইএসের মতে, ফরমের যত জায়গায় আবেদনকারীর নাম, জন্ম তারিখ ও অ্যালিয়েন নম্বর জানতে চাওয়া হবে, তত জায়গাতেই তাকে তা উল্লেখ করতে হবে। তা না হলে ফরমটি বাতিল বলে গণ্য হবে। এ ছাড়া এক ধরনের আবেদনের জন্য অন্য ফরমের জন্য নির্ধারিত ফিও পরিশোধ করতেও দেখা যায় অনেককে, যা ফরমটি বাতিল হওয়ার জন্য যথেষ্ট। এ ঝামেলা থেকে আবেদনকারীকে মুক্তি দিতে ইউএসসিআইএস গত জানুয়ারিতেই অনলাইনেই প্রয়োজনীয় ফি হিসাবের জন্য একটি সেবা এনেছে।
এ বিষয়ে ইউএসসিআইএসের মুখপাত্র আনা সান্তিয়াগো বলেন, ‘অভিবাসন-সংক্রান্ত যেকোনো সেবার জন্য অভিবাসীদের জন্য অপেক্ষায় আছে ইউএসসিআইএস। এ-সংক্রান্ত যেকোনো সহায়তা আমরা দিয়ে থাকি। ফি ক্যালকুলেটর থেকে শুরু করে অনলাইনেই আমরা অভিবাসন-সংক্রান্ত ফরম পূরণের বিভিন্ন টিপস দিয়ে থাকি। অভিবাসীদের কাজ সহজ করতেই আমরা এটি করে থাকি।’
ফরম পূরণে ভুল ছাড়াও অভিবাসীদের বিভিন্ন আবেদনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংযুক্ত করতে ভুল করতে দেখা যায়। একেক ধরনের আবেদনের জন্য একেক ধরনের নথি সরবরাহ করতে হয়। কিন্তু অনেক অভিবাসীই এ ক্ষেত্রে ভুল করেন। অনেকে আবার আবেদনপত্রের সঙ্গে সব সংযুক্তি একসঙ্গে বেঁধে বা একটি ফাইলে করে পাঠান। কিন্তু ইউএসসিআইএসের কর্মকর্তারা আবেদনপত্র যাচাইয়ের জন্য এর বিভিন্ন অংশ আলাদাভাবে পরীক্ষা করেন। তাই স্ট্যাপলিং বা অন্য কোনো ধরনের বাঁধাই গ্রহণযোগ্য নয়। শুধু পেপার ক্লিপ দিয়ে নথি ও আবেদনপত্র জুড়ে দেওয়ার পরামর্শ দেয় সংস্থাটি। লেবেলিং করা উচিত নিচের দিকে। কখনোই পাশে নয়। এ ছাড়া অনেকেই বিভিন্ন নথির অনুলিপি জমা না দিয়ে আসলটিই জমা দেন। ইউএসসিআইএস বলছে, সাধারণভাবে বিভিন্ন সনদ বা নথির অনুলিপি জমা দেওয়াই উচিত। শুধু সংস্থার পক্ষ থেকে চাওয়া হলেই মূল সনদ জমা দেওয়া যেতে পারে। মনে রাখা জরুরি শুধু প্রয়োজনীয় নথিই সংযুক্ত করতে হবে। ফাইলের ব্যাপ্তি খুব বড় হওয়া উচিত নয়। একাধিক আবেদনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় নথি আলাদাভাবে জমা দিতে হবে। কোনোভাবেই এক আবেদনের নথি আরেকটির সঙ্গে মিলিয়ে দেওয়া যাবে না। আর সর্বশেষ আবেদনপত্রটি অবশ্যই সঠিক ঠিকানায় পাঠাতে হবে। না হলে ডাক বিভাগই এটি ফেরত পাঠাবে।