মধ্যাহ্ন ভোজ না করানোর খেসারত!

পল লে রোক্সের
পল লে রোক্সের

সাইবার অপরাধ জগতের জেফ বেজোস খ্যাত পল লে রোক্সের (৪৬) গ্রেপ্তার হওয়ার গল্প অবাক হওয়ার মতো। সে এখন কারাবন্দী। সহযোগীকে দুপুরের খাবার না খাওয়ানোয় তাকে এই পরিণতি বরণ করতে হয় বলে জানা যায়। সহযোগীর দেওয়া তথ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়।
২০০৯ সালের সেপ্টেম্বরে কোনো একদিন তাঁর সহযোগী, কোড নাম “জ্যাক”কে তলব করেন। জ্যাকের সঙ্গে সরাসরি দেখ করতে চান কোনো এক কারণে। অগত্যা জ্যাক ১৮ ঘণ্টার ফ্লাইটে, চারটি বিমানবন্দর পরিবর্তন করে, অনেক ক্লান্ত ও ক্ষুধার্ত হয়ে হংকংয়ে পৌঁছেন রোক্সের সঙ্গে দেখা করার জন্য।
পল লে রোক্স জ্যাককে একটি রেস্তোরাঁয় দেখা করার জন্য বলেন। যেটা হংকংয়ে ভালো ও সুস্বাদু খাবারের রেস্তোরাঁর একটি। জ্যাক মনে মনে মহাখুশি এই ভেবে যে অবশেষে সে একটু ভালো-মন্দ খেতে পারবে। পল লে রোক্স প্রচুর টাকা ও অঢেল সম্পত্তির মালিক হয়েও জ্যাকের পেছনে ৩০ ডলার ব্যয় করতে চাননি। আলোচনা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাকে বিমানবন্দরে যাওয়ার নির্দেশ দেন। দীর্ঘ ১৮ ঘণ্টার বিমান ভ্রমণ ও ক্ষুধার্ত পেটে একটুও বিশ্রাম না করে, গোসল না করে বসের সঙ্গে দেখা করেন জ্যাক। আপ্যায়ন তো দূরের কথা অধিকন্তু তাঁকে তখনই বিমানে করে সোমালিয়াতে যেতে নির্দেশ দেন রোক্স।
এতে ক্ষেপে যান জ্যাক। অপরাধ বিষয়ক প্রতিবেদক ইলেইন শ্যানন তাঁর লেখা নতুন বই “হান্টিং লি রোক্স: দ্য ইনসাইড স্টোরি অব দ্য ডিইএ টেইকডাউন অব অ্যা ক্রিমিনাল জিনিয়াস অ্যান্ড হিজ এম্পায়ার”তে লিখেন, “জ্যাক এর কিছুদিন পর সিআইএতে (সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি) ফোন দেন। সাইবার অপরাধ জগতে জেফ বেজোস খ্যাত ক্রিমিনাল মাস্টারমাইন্ড পল লে রোক্সকে গ্রেপ্তার করতে সর্বোচ্চ সহযোগিতার আশ্বাস দেন।” পরে পল লে রোক্সকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী খুব সহজেই গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়। তবে তা তিন বছর পর ২০১২ সালে। মধ্যাহ্ন ভোজ না করানোর চড়া মূল্য দিতে হয় এই অপরাধীকে।
কে এই পল লে রোক্স? পুরো নাম পল কল্দের লে রোক্স। জন্ম ১৯৭২ সালে জিম্বাবুয়েতে। কম্পিউটার প্রোগ্রামিংয়ে অনেক দক্ষ রোক্স ইফোরএম এনক্রিপ্সান সফটওয়্যার তৈরি করে। পরবর্তী সময়ে অনলাইনে কালোবাজার সৃষ্টির মাধ্যমে খুব সহজেই মিলিয়নিয়ার বনে যান। খুন এবং অস্ত্র ও মাদক ব্যবসা শুরু করে। তার নিজস্ব অস্ত্রধারী আর্মি, প্রাইভেট জেট, ও প্রমোদতরী ছিল। দেখতে মোটা ও সহজ সরল মনে হলেও ইলেইন শ্যানন বলেন, “রোক্স ঠান্ডা মাথার খুনি ছিল। কাউকে বিশ্বাস করত না। সবাইকে কথার ছলে খুব সহজেই ঠকাতে পারত। সে এতই ধূর্ত ছিল যে কেউ তার স্বভাব বুঝত না।”
বর্তমানে পল লে রোক্স জেলখানায় বন্দী। তার মামলা এখনো আদালতে চলমান। গত বছর নিউইয়র্কের আদালতে রোক্স পাঁচজনকে খুনের কথা, ইরানকে ক্ষেপনাস্ত্র প্রযুক্তি দেওয়া এবং উত্তর কোরিয়ার মাদক এনে নিউইয়র্কে বিক্রির কথা স্বীকার করেছে।