গ্রিনকার্ডে কোটা

আমেরিকার অভিবাসনব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর বিষয়ে অনেক দিন ধরেই আলোচনা চলছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন কঠোর অভিবাসননীতি গ্রহণের কারণে নানা সমালোচনা হলেও মোটা দাগে দক্ষতাভিত্তিক অভিবাসননীতির প্রতি রাজনীতিকদের একটি বড় অংশের সমর্থন রয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে গ্রিনকার্ডে কোটাপ্রথা বাতিলের যে প্রস্তাব কংগ্রেসে উঠছে, তা পাস হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। বিলটির প্রতি উভয় দলের সমর্থন সেই ইঙ্গিতই দিচ্ছে।
আমেরিকায় এইচ-১বি ভিসাধারীদের ক্ষেত্রে প্রতিবছর ১ লাখ ৪০ জনকে গ্রিনকার্ড দেওয়া হয়। বর্তমান আইনে একটি দেশের সর্বোচ্চ ৭ শতাংশের বেশি অভিবাসীকে গ্রিনকার্ডের অনুমোদন দেওয়া হয় না। সেই হিসাবে এক দেশের সর্বোচ্চ ৯ হাজার ৮০০ জন গ্রিনকার্ড পেয়ে থাকেন। কিন্তু এই বিধিটি পরিবর্তন করে কংগ্রেসে ডেমোক্র্যাট প্রতিনিধি জো লোফগ্রেন ও সিনেটর কমলা হ্যারিস দুটি বিল উত্থাপন করেছেন। এই বিল পাস হলে সংরক্ষিত কোটা প্রথা উঠে যাবে। দক্ষতা এবং আগে এলে আগে পাবেন ভিত্তিতে তখন আমেরিকায় স্থায়ী বসবাসের অনুমতি মিলবে।
এই দুটি বিলের পেছনে শক্তিশালী সমর্থন রয়েছে সিলিকন ভ্যালির। মাইক্রোসফট, গুগল, আইবিএমসহ টেকজায়ান্ট কোম্পানিগুলো ছাড়াও ইমিগ্রেশন ভয়েস, কমপিট আমেরিকা কোয়ালিশন, ইমিগ্রেশন টেকনোলজি ইন্ডাস্ট্রি কাউন্সিল, মার্কিন চেম্বার অব কমার্স, ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব ম্যানুফ্যাকচারার্স, হেরিটেজ ফাউন্ডেশনসহ অনেক সংগঠন এ নিয়ে কাজ করছে। মূলত উচ্চ দক্ষতাসম্পন্ন কর্মীর সরবরাহ বাড়াতেই এ ধরনের একটি আইনের জন্য দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে প্রতিষ্ঠানগুলো। বিল দুটি পাস হলে চীন ও ভারতের অভিবাসীরা উপকৃত হবেন। বিপরীতে কম জনসংখ্যার ও তুলনামূলক পিছিয়ে থাকা দেশগুলোর অভিবাসীদের পিছিয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিপাকে পড়বেন সাধারণ বা মাঝারি দক্ষতাসম্পন্ন ব্যক্তিরা। তবে এমন পদ্ধতি গ্রিনকার্ড পাওয়ার প্রক্রিয়ায় গতি আনবে।
মূলত দক্ষ কর্মীদের গ্রিনকার্ড অনুমোদনের প্রক্রিয়ায় গতি আনতেই এ ধরনের আইন করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এখনো আইনটি হয়নি। উভয় দলের সমর্থন থাকায় এটি পাস হয়ে যাবে বলেই মনে হচ্ছে। সমস্যা হচ্ছে, এ আইন গ্রিনকার্ড অনুমোদন–প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করলেও প্রযুক্তি বাদে অন্য ক্ষেত্রে দক্ষ কর্মীর সরবরাহ ও অন্য দেশের দক্ষ কর্মীদের আমেরিকায় স্থায়ী হওয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নকে কঠিন করে তুলবে।
তবে প্রবাস মানেই নিরন্তর যুদ্ধ। শেষ পর্যন্ত এ যুদ্ধক্ষেত্রে যদি নতুন বিপদ এসে হাজির হয়, তাহলে তার মোকাবিলা সাহসের সঙ্গেই করতে হবে। উচ্চ দক্ষতাসম্পন্ন কর্মী হিসেবে নিজেকে গড়ে নেওয়াটাই এ যুদ্ধে জয়ী হওয়ার পূর্বশর্ত। তাই বিভিন্ন ফোরামে উত্থাপিত বিল দুটির বিরুদ্ধে লড়াই যেমন করতে হবে, তেমনি নিজেদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্যও সচেষ্ট থাকতে হবে। এ ক্ষেত্রে আমেরিকাপ্রবাসী বাংলাদেশিদেরই অনেক চমৎকার প্রশিক্ষণকেন্দ্র রয়েছে। এগুলোর পরিসর বাড়িয়ে দক্ষ বাংলাদেশি কর্মীর সংখ্যা বাড়াতে হবে। একই সঙ্গে সব দেশের স্বার্থ রক্ষা করে গ্রিনকার্ড অনুমোদন–প্রক্রিয়ায় বিদ্যমান বিলম্ব কী করে কমানো যায়, তার সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবসহ উত্থাপিত বিল দুটির বিরুদ্ধে নিজেদের শক্তিশালী অবস্থান তুলে ধরতে হবে। এই দুইয়ের সম্মিলনেই প্রশাসনিক এ পদক্ষেপকে মোকাবিলা করতে হবে।