যমজ অপরাধী শনাক্তে নতুন ডিএনএ পরীক্ষা

কোনো অপরাধীর যমজ সহোদর থাকলে অপরাধী শনাক্তে জটিলতা তৈরি হয়। প্রচলিত ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমেও এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া বেশ দুরূহ। এ সমস্যা সমাধানে নতুন এক ধরনের ডিএনএ পরীক্ষা সম্প্রতি আবিষ্কার করেছেন ফরেনসিক ডিএনএ বিশেষজ্ঞেরা, যার মাধ্যমে যমজ সহোদর থেকে প্রকৃত অপরাধীকে শনাক্ত করা যাবে।
এ বিষয়ে গবেষণা শুরু হয়েছিল ১৯৯৯ সালের একটি অপরাধের ঘটনাকে কেন্দ্র করে। ওই বছরের নভেম্বরের এক রাতে ২৬ বছর বয়সী এক নারী গ্র্যান্ড রেপিডস মিশিগানের এক গাড়ি পার্কিং স্থানে ধর্ষিত হন। অপরাধের স্থান থেকে অনেক চেষ্টার পর পুলিশ ধর্ষণকারীর বীর্যের নমুনা পান। কিন্তু ওই নমুনার সঙ্গে পুলিশের তথ্যভান্ডারের কারও মিল পাওয়া যায়নি। এদিকে অপরাধস্থল থেকে পাওয়া যায়নি কোনো আঙুলের ছাপ বা অন্য কোনো আলামত। ছিল না কোনা প্রত্যক্ষদর্শীও। ওই নারীও এমনকি ধর্ষকের কোনো বর্ণনা দিতে পারেননি। কারণ, তিনি তাকে দেখতেই পাননি। এ অবস্থায় ধর্ষণের মামলাটির সুরাহা হচ্ছিল না।
পাঁচ বছর পর প্যারোলে মুক্তির পাওয়ার জন্য যখন এক যৌন অপরাধী পুলিশকে তার ডিএনএ নমুনা দেয়, তখন দেখা যায়, তার দেওয়া নমুনার সঙ্গে আগের নমুনাটি মিলে যাচ্ছে। কিন্তু সমস্যা হলো ওই ব্যক্তির এক যমজ ভাই রয়েছে। কিন্তু সমস্যা হয়, এদের মধ্যে কে প্রকৃত অপরাধী তা জানাটা তখন প্রচলিত ডিএনএ পরীক্ষায় সম্ভব ছিল না। যেহেতু ওই ডিএনএ নমুনা ছাড়া আর কোনো আলামত ছিল না পুলিশের কাছে, তাই কারও বিরুদ্ধে মামলা করা সম্ভব হয়নি। ফলে এই মামলার সমাধান করা পুলিশের কাছে সম্ভব হয়নি গত বিশ বছরে।
ফরেনসিক ডিএনএ পরীক্ষার আবির্ভাব হয় ১৯৯০ সালের দিকে। তখন বিজ্ঞানীরা ডিএনএর সামান্য নমুনা দিয়েই একজনের সঙ্গে আরেকজনের মিল ও অমিল সহজেই খুঁজে পেতেন। জিনের ১৩টি এসটিআরের (শর্ট টেন্ডেম রিপিটস) মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা একজনের সঙ্গে আরেকজনের মিল ও অমিল নির্ণয় করেন। এই নির্ণয় এতটাই গ্রহণযোগ্য ছিল যে, পরীক্ষা ভুল হওয়ার সম্ভাবনা এক ট্রিলিয়নের এক ভাগ ছিল। এই পদ্ধতি এখনো বিশ্বের সর্বক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। এই ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ অপরাধীকে শনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে। কিন্তু একটাই সমস্যা ছিল এই পদ্ধতিতে। সেটা হচ্ছে, এই পদ্ধতি ব্যবহার করে যমজের ডিএনএর মধ্যে পার্থক্য তৈরি করা অসম্ভব। যমজদের ডিএনএর মধ্যে সাধারণত ৯৯ দশমিক ৯৯ শতাংশ মিল থাকে।
কিন্তু সম্প্রতি ফরেনসিক ডিএনএ বিশেষজ্ঞেরা এই অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন। আবিষ্কার করেছেন নতুন ডিএনএ পরীক্ষা। দুই গবেষক জার্মান বিজ্ঞানী ও কিয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মাইকেল ক্রাওজেক বলেন, নতুন ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে যমজ অপরাধীদের মধ্যে পার্থক্য সৃষ্টি করে মূল অপরাধীকে শনাক্ত করা যাবে। সম্প্রতি ড. ক্রাওজেক ও তাঁর সহকর্মীরা ইউরোফিন সায়েন্টিফিকের মাধ্যমে তাঁদের গবেষণা বিশ্বের কাছে তুলে ধরেন। ড. ক্রাওজেক বলেন, এই আবিষ্কারের মাধ্যমে অনেকগুলো পুরোনো মামলার সমাধান করা যাবে। অনেক অপরাধীকে এখন আইনের সম্মুখীন হতে হবে, যা আগে কল্পনাও করা যায়নি।