মূল্যছাড়ে টিকিট কিনে বিমানবন্দরে হয়রানি

নিউইয়র্ক থেকে বাংলাদেশে যেতে বিশেষ ছাড়ে উড়োজাহাজের টিকিট কিনে বিপাকে পড়ছেন প্রবাসীরা। তাঁরা বিশেষ মূল্যছাড় পেয়ে বিভিন্ন এয়ারলাইনসের টিকিট কিনছেন। কিন্তু বিমানবন্দরে উপস্থিত হয়ে জানতে পারছেন, বিশেষ মূল্যছাড়ের এই টিকিটে লাগেজ বহনের সুবিধা সীমিত। সাধারণত যাত্রী প্রতি দুইটি লাগেজ নেওয়ার স্বাভাবিক নিয়ম রয়েছে।
একটি লাগেজ দিয়ে মূল্যছাড়ে টিকিট বিক্রি করছে কোন কোন এয়ারলাইনস। আগে থেকেই বিশেষ মূল্যছাড়ের সব কিছু না জানিয়ে টিকিট বিক্রি করছে কোন কোন ট্রাভেল এজেন্ট। যাত্রীরা বিশ্বাস করে ঠকছেন। এ নিয়ে প্রবাসীরা অসাধু ট্রাভেল এজেন্টদের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ করছেন।
ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করছেন, স্বদেশের টানে প্রতিদিনই বাংলাদেশে ভ্রমণ করতে যাচ্ছেন শত শত মানুষ। এই সুযোগে এক শ্রেণির অসাধু ট্রাভেল ব্যবসায়ী যাত্রীদের সঙ্গে টিকিট নিয়ে নানাভাবে প্রতারণা করছেন। কম দামে টিকিট বিক্রি করে তাঁরা যাত্রীদের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন। এয়ারলাইনস কর্তৃপক্ষকে অভিযোগ করে উল্টো তাঁরা হেনস্তার শিকার হয়েছেন।
গত ৩ ফেব্রুয়ারি জ্যামাইকার জাকির হোসেন সপরিবারে দেশে যেতে জ্যাকসন হাইটসের একটি ট্রাভেল এজেন্সি থেকে সাতটি টিকিট কেনেন। পরিবার নিয়ে ৩ মার্চ বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে জেএফকে বিমানবন্দরে পৌঁছান তিনি। সেখানে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে কাউন্টারে ৫০ পাউন্ড ওজনের দুটি লাগেজ কাউন্টারে জমা দেন। লাগেজ দুটি বেল্টে রাখার পর সংশ্লিষ্ট উড়োজাহা্জের কাউন্টারে কর্মরত এক কর্মকর্তা জাকিরকে একটি লাগেজের ডলার পরিশোধ করতে বলেন। তিনি অবাক হয়ে ডলার পরিশোধ করার কারণ জানতে চান। তখন কাউন্টারের কর্মকর্তা তাঁকে টিকিটের গায়ে এক যাত্রীর ‘একটি লাগেজ’ লেখা আছে বলে জানান। কিন্তু টিকিট ইস্যুকারী এজেন্সি গ্রাহককে একটি লাগেজের সীমাবদ্ধতার বিষয়ে কিছু জানায়নি। এ নিয়ে কাউন্টারে কর্মরত কর্মকর্তার সঙ্গে জাকিরের চরম তর্কবিতর্ক হয়। একপর্যায়ে কর্মকর্তা নিরাপত্তাকর্মী ডাকেন এবং যে ট্রাভেল এজেন্ট থেকে টিকিট কিনেছেন তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন।

অতিরিক্ত সাতটি লাগেজ নিয়ে অনেকটা দিশেহারা হয়ে যান জাকির হোসেন। আত্মীয়–স্বজনদের দেওয়া অঙ্গীকার অনুসারে বাজার করেছেন। সেগুলো আবার বিমানবন্দর থেকে ফিরিয়ে নিয়ে আসাও অনেকটা বেমানান চিন্তা করে তাৎক্ষণিক প্রায় ১ এক হাজার ৪০০ ডলার পরিশোধ করে লাগেজগুলো বেল্টে দেন।
জাকির হোসেন বলেন, তিনি বিমানবন্দর থেকে টিকিট বিক্রেতা ট্রাভেল এজেন্সিকে কয়েকবার ফোন করেন। কর্তৃপক্ষ প্রথমবার ফোন ধরে বিস্তারিত জানার পর ফোন রেখে দেয়। এরপর তারা আর তাঁর ফোন ধরেননি। গত এক মাসে নিউইয়র্কে লাগেজ নিয়ে এমন বেশ কিছু যাত্রীর ভোগান্তির অভিযোগ পাওয়া গেছে।
গত বছর জ্যাকসন হাইটসসের ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ট্রাভেল এজেন্সি নামে একটি ট্রাভেল এজেন্সি প্রতারণার মাধ্যমে গ্রাহকদের প্রায় ৫ লাখ ডলারের টিকিটের অর্থ আত্মসাৎ করে পালিয়ে যায়। পরে তারা টিকিটের ডলার ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও বেশির ভাগ গ্রাহক এখনো ডলার ফেরত পাননি।
লাগেজ প্রতারণার বিষয়ে বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ডিজিটাল ট্রাভেল অ্যাস্টোরিয়ার মালিক নজরুল ইসলাম বলেন, লাগেজ নিয়ে প্রতারণার বিষয়ে ট্রাভেল এজেন্সির কর্মকর্তারা দায়ী। যখন মূল্যছাড়ে টিকিট বিক্রির ঘোষণা আসে তখন বিভিন্ন এয়ারলাইনস কিছু শর্ত আরোপ করে। সেগুলো ভালোভাবে পড়ে টিকিট ইস্যু করা উচিত।
নজরুল আরও বলেন, ‘যেকোনো ট্রাভেল এজেন্ট তার গ্রাহককে সুযোগ–সুবিধার বিষয়ে বিস্তারিত বুঝিয়ে দেবেন। কতটি লাগেজ, কত ওজনের লাগেজ নিয়ে যাওয়া–আসা করা যাবে, তা যাত্রীরাও যেন আগেভাগে জেনে নেন। বিমানবন্দরে উপস্থিত হয়ে উচ্চমূল্যে লাগেজ বহন করার বিড়ম্বনা এড়াতে এজেন্ট ও যাত্রী—উভয়কেই সতর্ক থাকতে হবে।